সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

উত্তরখানের রাস্তা খেকো মোকারমের সাতকাহন

  |   সোমবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট

উত্তরখানের রাস্তা খেকো মোকারমের সাতকাহন

আতাহার হোসেন সুজন ॥ আল্লাহ্তায়ালা এই পৃথিবীতে সকল সৃষ্টির মধ্যে মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। মানুষ আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হওয়া সত্বেও চিরদিন বেঁচে থাকতে পারেনা। নবী রাসুলগণ, অলি-আউলিয়া, গাউছ-কুতুব, পীর-দরবেশ আল্লাহর অতি প্রিয় হওয়া সত্বেও কেউই পৃথিবীতে চিরস্থায়ী হতে পারেননি। জন্মিলে মরিতে হবে এটা আল্লাহর বিধান। এই বিধান অপরিবর্তনশীল, শ্বাশত হওয়া সত্বেও কিছু মানুষ ঈর্ষা পরায়ণ, ভূমি দস্যু, মানুষরুপী নরপশু হয়ে নিরীহ শান্তি-প্রিয় মানুষের জমি জোরপূর্বক দখল করে, রাস্তা কেটে সমাজে এক অরাজকতা সৃষ্টি করে। যারা অপরের জমি দখল করে, রাস্তা কেটে সম্পদ-সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে তাদের পূর্ব পুরুষেরা মৃত্যুর পর সাড়ে তিন হাত জায়গা ছাড়া আর কিছুই পায়নি। এই সাড়ে তিন হাত জায়গায় তাদের পূর্বপুরুষেরা, এক এক করে চিরস্থায়ী ঘুমিয়ে আছে। টাকা-পয়সা, ধন-সম্পত্তি, বন্ধু-বান্ধব, আতœীয়-স্বজন বিন্দু মাত্র কিছু সাথে নিতে পারেনি সাদা কাফনের কাপড়টুকু ছাড়া। তবে কেন সমাজে মানুষের কথা-বার্তা, চলা-ফেরা, আতœ অহংকার নিয়ে এত বড়াই? মানুষরুপী ঐ নরপশুরা মানুষের চলাচলের রাস্তা কেটে সম্পত্তির লোভ সামলাতে না পেরে জোর-জুলুম করে দখল করার মত হীন অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ নিজের পেশী শক্তিতে, কেউ বুদ্ধিমত্তা দিয়ে, কেউ আবার মানুষের পাড়ায় আশ্রয়ে থেকে মিথ্যা বানোয়াট আজগুবি গাল-গল্পের আশ্রয়ে নিরীহ সাধারণ মানুষের বৈধ রাস্তার সম্পত্তি জোর-জবর দখল করে, পাওনা টাকা আত্মসাৎ করার পায়তারা করে। দেশব্যাপী খুন, রাহাজানি, ধর্ষণ, জমি দখল, টাকা আত্মসাৎ রাস্তা কাটার মত অনেক ঘটনার মধ্যে উত্তরখান থানার অন্তর্গত মাষ্টার পাড়ায় থাকা বিশ বছরের রাস্তা কেটে ফসলী জমি বানিয়ে সমতল করে রেখেছে, এমন এক বিরল ঘটনা ঘটিয়েছে উত্তরখান মাষ্টার পাড়ার আশ্রিতা, পরগাছা রাস্তা খেকো কুমিল্লার মোকারম।
পূর্বে কিভাবে রাস্তা হয়েছিল
১৯৯৪ ইং সালে ঢাকার উত্তরখান মাষ্টার পাড়ার আব্দুল মোতালিব আর এস ৩৩৩৩ নং দাগের জমি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেন। তথন জমি বিক্রি করার মাধ্যম হিসেবে বদর উদ্দিন মাষ্টারের বড় ছেলে রমিজ উদ্দিন এগিয়ে আসে। জমি কেনার কাষ্টমার ঠিক করা হয় কিন্তু রাস্তা ছাড়া জমি কিনতে কেউ রাজী হয় না। এমতাবস্থায় মাষ্টার পাড়া কলা বাগানের উত্তর পূর্ব পাশে বর্তমান মুজিবর মার্কেটের দেয়াল ঘেঁষে পশ্চিম পাশে আগে পরিত্যক্ত খালি জমির প্লট ছিল। সেই জমি বিক্রি করে তৎকালীন ভোটে দাঁড়ানো রমিজ উদ্দিনের চাচাত ভাই আউয়াল মেম্বার। এই আউয়াল মেম্বারকে রমিজ উদ্দিন রাজী খুশি করিয়ে রাস্তা তৈরী করে। বাকী থাকে দুই প্লট, একটি সাহাজ উদ্দিনের আরেকটি আব্দুল লতিফের প্লট। তখন সাহাজ উদ্দিন গংদের তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা করার সম্মতি পাওয়া যায়। রমিজ উদ্দিন আব্দুল লতিফকে রাস্তা করার প্রস্তাব দিলে তার বড় ছেলে আহমেদ রুহুলের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়। তখন রমিজ উদ্দিন মাষ্টার পাড়ায় আহমেদ রুহুলের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে যোগাযোগ করা হলে নির্দিধায় তাদের জমির উপর দিয়ে রাস্তা তৈরীর অনুমতি দেয়া হয়। তারপর রমিজ উদ্দিন ১৯৯৪ ইং সালের প্রথম দিকে পনের দিনের মধ্যে বর্তমান মুজিবুরের মার্কেট ও ফ্যাক্টরীর পশ্চিম পাশ ঘেঁষে সাহাজ উদ্দিন ও আব্দুল লতিফের জমির উপর দিয়ে আব্দুল মোতালিবের বিক্রি করা আজমত উল্লাহর বাড়ি পর্যন্ত মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা তৈরী করে। আবদুল মোতালিবের মোট চব্বিশ শতাংশ জমিকে পাঁচটি প্লটে ভাগ করা হয়। একটি প্লট বাদে বাকী চারটি প্লটই বিক্রি করা হয় এই রাস্তা দেখিয়ে। তখন ঐ সময় রাস্তাটি মানুষের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। আব্দুল মোতালিবের বিক্রি করা একটি প্লটে প্রথম আজমত উল্লাহর বাবা একটি বাড়ী নির্মাণ করে এবং আজমত উল্লাহ, আব্দুল লতিফসহ এলাকার সর্বস্তরের মানুষ এই রাস্তা দিয়ে দীর্ঘ বিশ বছর যাবৎ যাতায়াত করে ।
এই রাস্তা দিয়ে মানুষের চলাচলের মধ্যেই ২০০৩ ইং সালে চলে আসে আরও এক বিপত্তি। সাহাজ উদ্দিনের আগের প্লট আউয়াল মেম্বারের সাহেবের নিকট থেকে মাষ্টার বাড়ীর আফজল মাষ্টার লাভের আশায় জমি ক্রয় করে। পরবর্তী সময় আফজল মাষ্টার এই জমি বিক্রি করার মনস্থির করলে দেলোয়ার মিয়া (বিক্রমপুর) জমি বিক্রি করার মাধ্যম হিসেবে মধ্যস্থতা করে। কিন্তু এই প্লটের উপর দিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য পূর্বের আট ফুট রাস্তা থাকায় কিছু অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের জন্য আফজল হোসেনসহ অন্যরা ফন্দি-ফিকির বের করে। যেহেতু এক প্লট পরে আহমেদ রুহুল গংদের জমি আছে, তারা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে এজন্য আহমেদ রুহুলের নিকট প্রথম দেলোয়ার মিয়া ফোন করে বলে- “সাহাজ উদ্দিনের আগের প্লট আফজল মাষ্টারের নিকট হতে আমি কিনেছি। যে কোন মুহুর্তে রাস্তা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বর্তমান বাজারে দর-দাম করলে আশি নব্বই হাজার টাকা দাঁড়ায় তবে এখন বিশ-ত্রিশ হাজার টাকা দিলেই হবে। এই টাকা আফজল মাষ্টার খাবে না, খবর আলীকে দিতে হবে। সে আফজল মাষ্টারের অনেক উপকার করে”।
রাস্তা বন্ধ হবে টের পেয়ে ফোন করার একদিন পর আব্দুল মান্নান, আজমত উল্লাহসহ অনেকে আহমেদ রুহুলের দোকানে রাস্তা উদ্ধারের জন্য ভীড় করে। প্রথমে আব্দুল মান্নান পরে আহমেদ রুহুল তৎকালীন মেম্বার নুরুল ইসলামকে রাস্তা সম্পর্কে অভিহিত করা হয়। কারণ পাশে নুরুল ইসলাম, আব্দুল মান্নানের মেয়ের জামাইয়ের বাড়ীসহ অনেকের নির্মাণাধীন ভবন ছিল। তখন তাদের বাড়ীতে যাতায়াতের জন্য অন্য কোন রাস্তা ছিল না। তাই আব্দুল মান্নানসহ অনেকে রাস্তা যাতে বন্ধ না হয় সে জন্য দৌড়-ঝাপ শুরু করে। যেহেতু আগে রাস্তা ছিল তাই নুরুল ইসলাম মেম্বার রাস্তা করার পক্ষে ছিলেন। তিনি টাকা দিয়ে রাস্তা ক্রয় করার কোনদিন সাপোর্ট করেননি। পরে আফজল মাষ্টার গং উপরোক্ত টাকা না পেয়ে ইটের বাউন্ডারী দিয়ে রাস্তা বন্ধ করেছিল। রাস্তার ব্যাপারে আফজল মাষ্টারের সাথে আহমেদ রুহুলের অনেকদিন দেন-দরবার হয় এবং কিছু দিন পর নাম মাত্র টাকায় বাউন্ডারী সরিয়ে মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা উন্মুক্ত করা হয়।
বর্তমানে এলাকার মানুষের মনে প্রশ্ন, আফজল মাষ্টারের দেয়া বাউন্ডারী সরানোর পর মোকারম গং, আব্দুল মান্নান গং, নুরুল ইসলামসহ অত্র এলাকায় বসবাসরত সকল ব্যক্তিবর্গ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে কিন্তু আহমেদ রুহুল উক্ত রাস্তা দিয়ে চলাচল করতে পারে না কেন? মোকারম ২০০৩ ইং সালে আহমেদ রুহুলের প্লটে যাতায়াতের রাস্তা না কেটে ২০১৩ ইং সালে দীর্ঘ এগার বছর পর কেন রাস্তা কেটে চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল? তবে কি আবার রাস্তা বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়ার পায়তারা করছে? মাষ্টার বাড়ীর আশ্রিতা, পরগাছা, রাস্তা খেকো মোকারমের রাস্তা কাটার ক্ষমতার উৎস কোথায়? সমাজের মানুষ জানতে চায়!
কে এই মোকারম
ঢাকার উত্তরখান থানাধীন সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবার মাষ্টার বাড়ীর জন্মদাতা মরহুম মুসলিম উদ্দিন, ছলিম উদ্দিন, কলিম উদ্দিন, বলিম উদ্দিন ও ছাবেদ আলী এই পাঁচ ভাইয়ের নাম প্রথম আসে। এখানে তাঁদের বড় ভাই মরহুম মুসলিম উদ্দিনের অবদান সবচেয়ে বেশী। তিনি এক নাগারে শিক্ষক, গ্রাম্য বিচারক এবং তৎকালীন এলাকার অভিভাবক ছিলেন। মরহুম বলিম উদ্দিনের তিনি ছেলের মধ্যে সাহাজ উদ্দিন ছিলেন সবার ছোট। সাহাজ উদ্দিনের দুই মেয়ে ছিল। সাহিদা বেগম ও দেলোয়ারা বেগম। সাহাজ উদ্দিনের কোন ছেলে সন্তান ছিল না তাই সাহিদা ও দেলোয়ারা, সাহাজ উদ্দিনের সকল সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা প্রাপ্ত হোন। দেলোয়ারা বেগমের দুই ছেলে এক মেয়ে। প্রথম ছেলে এই মোকারম, দ্বিতীয় ছেলে সারোয়ার এবং মেয়ে তুলি।
মোকারমের জন্ম পরিচয় ?
গড়নের দিক দিয়ে দেলোয়ারা বেগম একটু বেটে, গায়ের রং কালো থাকায় তাকে বিয়ে দিতে বাপ-মায়ের চিন্তার অন্ত ছিল না। ঘরে সৎ মা থাকলেও দেলোয়ারাকে আপন মেয়ের চাইতেও বেশী আদর যতœ করতেন, ভালবাসতেন। সৎ মায়ের কোন সন্তান ছিল না তাই সাহিদা ও দেলোয়ারাকে নিয়ে সংসার করতে লাগলেন।
আগেকার আমলে যারা ভিক্ষা করতেন তারা গৃহস্থের বাড়ীতে পানি পানের জন্য বসতেন। ভিক্ষার পুটলিটা বগলের নীচে চেপে আড়াল করে রাখত, যেন কেউ বুঝতে না পারে সে ভিক্ষা করে। এমনি এক মহিলা ব্যক্তি দেলোয়ারার বিয়ের আগে মোকারমের দাদী মোকারমের নানা-নানীর সাথে আলাপ-আলোচনা করত। বাড়ীতে কে কে আছে, সংসার কিভবে চলে, নানা বিষয় নিয়ে কথা-বার্তা হতো। আসা-যাওয়ার ফাঁকে একদিন সাহাজ উদ্দিন তার স্ত্রী দেলোয়ারাকে বিয়ে দিবেন বলে ভিক্ষা করা মহিলাকে জানানো হয় এবং একজন পাত্র দেখার জন্য বলা হয়। বেশ কিছুদিন আসা-যাওয়ার পর ভিক্ষা করা মহিলা অর্থাৎ মোকারমের দাদী বলল, মেয়ে দেলেয়ারাারাকে বিয়ে দিবেন ছেলেতো আমার ঘরেই আছে । ছেলে ব্যবসা করে, গায়ের রং ফর্সা, দেখতে-শুনতে ভাল। ভিক্ষা করা মহিলা চিন্তা করে দেখে যে মাষ্টার বাড়ীর মানুষ ইজ্জত, টাকা-পয়সা, জায়গা-জমি আছে। মেয়ে একটু কালো, বেটে তাতে কি হয়েছে, পায়ের উপর পা’ তুলে সারা বছর খেয়ে-দেয়ে চলা যাবে। এই বাড়ীতে ছেলেকে বিয়ে করানো যায়।
এদিকে মেয়ের বাবা-মা চিন্তা করল যে মেয়ে একটু দুর্বল, ভাল ছেলে পাওয়া গেছে, মেয়েকে বিয়ে দেয়া যায়। আগেকার মানুষ অত-শত বুঝত না, মানুষের মুখের কথাকে প্রাধান্য দেয়া হত বেশী। মানুষকে বিশ্বাস করত তাই সাহাজ উদ্দিন তার স্ত্রীসহ দুই পক্ষের আলাপ-অলোচনার পর দেলোয়ারাকে বিয়ে দেয়া হল সামসুর সঙ্গে।
সামসুর মা ভাই-বোন ঢাকার উত্তরার আব্দুল্লাহ্পুর সুইচ গেটের পূর্ব পাশে বর্তমান বড় রাস্তার উত্তর দিকের নিচু জায়গায় সরকারী খাস জমিতে বসবাস করত। জন্মস্থান কুমিল্লার এক হত দরিদ্র পরিবারে। বিয়ের পর জানা যায় সামসু মদ গাঁজায় আসক্ত। খাজার ডেকে আসর জমিয়ে ঘুরে ঘুরে ফকিরির গান সহ বিভিন্ন ধরণের গান গাইতেন। এত বদ্ অভ্যাস থাকার পরও তিনি মানুষের সাথে কোন দিন খারাপ ব্যবহার করেননি। সামসুর গায়ের রং ফর্সা, তখন সাহাজ উদ্দিন জানতেন না যে সামসু মদ গাঁজায় আসক্ত। বিয়ের আগে সামসু টঙ্গী বাজার সহ বিভিন্ন জায়গায় মাছও বিক্রি করত।
১৯৯৮ ইং সালে বন্যার পর এই সামসুর সংসার চালাতে খুব কষ্টের সম্মূখীন হয়। এর আগে মোকারম ও ছরোর জন্ম হয়। টানাটানির সংসারের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাওয়ার আগেই ১৯৮৯ ইং সালের প্রথম দিকে স্ত্রী, ছেলেদের নিয়ে মাষ্টার বাড়ী শ্বশুড় সাহাজ উদ্দিনের বাড়ীতে হাজির হয়। দাদা শ্বশুড় বলিম উদ্দিনের সেই পুরোনো কাচারী ঘরে বসবাস শুরু করে এবং মোকারম ক্লাশ টু’ ও সরোয়ার ক্লাশ ওয়ানে প্রথম এক বছর আহমেদ রুহুলের নিকট শিক্ষা লাভ করে। সাহাজ উদ্দিন সামসুর সংসারের টানাটানি অবস্থা দেখে মাষ্টার বাড়ী বাজারে কিছু জমি বিক্রি করে সেই টাকা মেয়ে সাহিদা ও দেলোয়ার হাতে তুলে দেয়। যা বর্তমান বাজারে দুই কোটি চল্লিশ লাখ টাকা দাঁড়ায়। সেই টাকা দিয়ে বড় মেয়ে সাহিদা নরসিংদীতে ঋণ পরিশোধ করে জমি ক্রয় করে এবং দেলোয়ারার স্বামী সামসু টঙ্গী বাজার হোন্ডা রোড মোড়ে একটি সাইকেলের পার্টসের দোকানদারী শুরু করে। বেশ কিছু দিন পর মোকারমের বাবা সামসু তার শ্বশুড়ের কাছে জমি বিক্রি করে আবার টাকার জন্য চাপ দেয়। তার শ্বশুড় সাফ জানিয়ে দেয় যে, সে আর টাকা দিতে পারবে না। তার মৃত্যুর পর জমি, টাকা-পয়সার মালিক মেয়েরাই হবে। শুরু হয় সংসারে শ্বশুড়-জামাইয়ের মধ্যে গৃহযুদ্ধ। তাদের দু’জনের মধ্যে সম্পর্কের টানা পোড়নে বেশ কিছু দিন অতিবাহিত হয়। এরই মাঝে সামসুর ঘরে তুলি নামের আরেক মেয়ের জন্ম হয় ।
হঠাৎ এক দিন সাহাজ উদ্দিন ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মহাখালী সাত রাস্তার মোড়ে একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়। সামসু মনে মনে ফন্দি-ফিকির বের করে, কিভাবে শ্বশুড়ের সমস্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়া যায়। যেই চিন্তা সেই কাজ। সামসু নিজের নামে একটি দলিল লিখে কমিশনও করে। তার সাথে মাষ্টার বাড়ীর আরও দু’এক জনের জড়িত থাকার খবর পাওয়া গেছে। হাসপাতালে শ্বশুড়ের বেড রুমে ঢুকে সামসু শ্বশুড়ের টিপসই নেয়ার সময় তার লোকজন সহ হাতে-নাতে ধরা পড়ে। সামসুর সম্মান চলে গেলেও ইজ্জত বাঁচাতে কোনরকম সটকে পড়ে। তারপর থেকে অভিমানে শ্বশুড় বাড়ী, স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে ত্যাগ করে টঙ্গী বাজার তার দোকানে বসবাস শুরু করে। পরে সামসু আরও দু’তিনটি বিয়ের পিঁড়িতে বসতে সক্ষম হয়। লোকমুখে কথিত আছে যে সামসু তার দোকানের ভিতর মদ গাঁজা জুয়ার আসর বসিয়ে রমরমা ব্যবসা জমাতে বেশ পারদর্শী ছিলেন ।
সাহাজ উদ্দিনের মৃত্যু হয় সাত রাস্তা মহাখালী হাসপাতালে। তার মৃত্যুর পর সমস্ত সম্পত্তির মালিক হয় তার দুই মেয়ে। সেই সাথে উত্তরাধিকার সূত্রে মায়ের সম্পত্তি মোকারমের উপর আছড় করে। মোকারম, সরোয়ার, তুলি মাষ্টার বাড়ী নানার বাড়ীতে আস্তে আস্তে বড় হয়, বয়স বাড়ে। মোকারম, সারোয়ার হাই স্কুলের গন্ডি পেরুতে পারেনি। তত্বাবধায়ক সরকারের সময় এলাকায় জমির দর-দাম বাড়তে লাগল। নানা-নানীর জমি বিক্রি করে মোকারম বন্ধুদের সাথে মিলে-মিশে জমির দালালী শুরু করে। রড সিমেন্টের দোকান দেয়। অল্প দিনের মধ্যে কিছু টাকার মুখ দেখে। কুমিল্লার রোহিঙ্গা হয়েও মাষ্টার বাড়ী আধিপত্য বিস্তার লাভ করে। মাষ্টার বাড়ীর মানুষও মোকারমের নিকট ধরণা দেয়, গল্প গুজবে মশগুল থাকে। বেশ কিছু দিন বন্ধুদের সাথে ব্যবসা করে। কিন্তু পার্টনারশীপ ব্যবসা বেশী দিন টিকে না, তাই বন্ধুরা যার যার টাকা-পয়সা নিয়ে সটকে পড়ে। তারপর পড়ে থাকে খালী দোকান। অনেকের পাওনা টাকা এখনও পরিশোধ করতে পারেনি। ব্যবসা লস দেখিয়ে পাওনা টাকা আত্মসাৎ করার পায়তারা করছে। ব্যবসা করার ভিতরেই মোকারমকে ধরে প্রেম রোগে। কিছু দিন ইটিশ-পিটিশ করার পর বাড়ীর কাউকে না জানিয়ে একটি অতি সাধারণ ঘরের মেয়েকে বিয়ে করে। শুরু হয় বাবা সামসুর মত মোকারমের জীবন। জানা যায় মোকারমের শ্বশুড়ও দুই বিয়ে করেছে। এই নিয়ে মা, ভাই বোনের সাথে শুরু হয় মন মালিন্য। বেশ কয়েক দিন যাওয়ার পর মনের মেঘ কেটে যায়। পুত্রের বৌ দূরে থাকলে সমাজের লোক খারাপ বলবে তাই মায়ের সম্মতিতে পুত্রের বৌ ঘরে তোলে। এ দিকে উত্তর পাড়ার ঈসমাইলের বড় ছেলে ব্যবসায়ী পার্টনার বন্ধু আনোয়ারের সাথে, বড় ভাই গার্জিয়ান হয়ে মোকারম, বোন তুলির সাথে বিয়ে ঠিক করে। দুই পরিবারে লোকজন বিয়েতে সম্মতি প্রকাশ করে দিন তারিখ ঠিক করা হয়। আনোয়ারের পরিবার বিয়ের কেনাকাটা সম্পন্ন করে আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত দেয়া হয়। কিন্তু বিধিবাম পরক্ষণেই মোকারম সেই বিয়ে দিন-তারিখ পাল্টিয়ে আনোয়ারের সাথে বিয়ে না দিয়ে মোকরমের খালাত ভাইয়ের সাথে বোন তুলিকে বিয়ে দেয়। এটা এলাকার চায়ের দোকানে কিছু দিন আলাপ-আলোচনার খোরাক ছিল ।
এলাকায় মোকারমের আধিপত্য বিস্তার
মোকারম উত্তরাধিকার সূত্রে মাষ্টার বাড়ীর মায়ের সম্পত্তি পেয়ে, নানা-নানীর জমি বিক্রি করে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ। জমির দালালী করে এক ইঞ্চি জমির দাম কত তা আয়ত্ব করতে শিখেছে। তাই বিশ বছর জমির উপর যে রাস্তা ছিল তা কেটে আবার মোটা অংকের টাকা দাবী করে। যে ছেলে মাষ্টার বাড়ীর বংশের কেউ না অথচ এই বাড়ী খেয়ে পড়ে অমানুষ হয়েছে, সেই বাড়ী বা বংশের ছেলে আহমেদ রুহুলের চলার রাস্তা কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, ত্রাস সৃষ্টি করে আত্ম-অহংকার নিয়ে বুক ফুলিয়ে অত্র এলাকায় বসবাস করছে। মানুষ নামের বিবেককে ধ্বংস করে যারা এই ধরণের হীন কাজ করে তাদের সাথে মাষ্টার বাড়ীর অনেকের যোগসাজশ রয়েছে। ধিক্ মোকারমকে, ধিক্ মাষ্টার বাড়ীর মানুষকে। এখনই সময় এসব পরগাছা সমাজ থেকে মূল উৎপাটন করা। তা না করলে মাষ্টার বাড়ীর অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হবে। বিষয়টি সমাজ সচেতন ব্যক্তিবর্গ ও উর্দ্ধতন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হচ্ছে। কেননা যে কোন উদ্ভট পরিস্থিতি কারোই কাম্য নয়।
শেষ কথা
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, উত্তরখান মাষ্টার বাড়ীর কলা বাগানের পূর্ব পাশে আর এস ৩৩৩৩ নং দাগের প্লটে দীর্ঘ বিশ বছরের একটি পুরনো রাস্তা ছিল। জীবিত থাকা অবস্থায় আব্দুল মোতালিবের জমির ছোট ছোট প্লট করে, বদর উদ্দিন মাষ্টারের বড় ছেলে মোঃ রমিজ উদ্দিনের মাধ্যমে ক্রেতাগণ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছিল। এখানে সর্বপ্রথম আজমত উল্লাহর বাবা আঃ মোতালিবের ক্রয়কৃত চালা জমির উপর একটি বাড়ী নির্মাণ করে যা কালো বুড়ি ওয়ালার বাড়ী হিসেবে পরিচিতি ছিল। রাস্তা সম্পর্কে আজমত উল্লাহকে প্রশ্ন করা হলে তিনি সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি আরও জানান যে, এখানে রাস্তা ছিল বলেই জমি ক্রয় করে বাড়ী করেন এবং বিশ বছর এই রাস্তা দিয়ে চলাচলা করেছেন। তাদের বাড়ীতে প্রতি বছর শীতকালীন সময় ওরশ হতো। মাষ্টার বাড়ীর মানুষসহ অত্র এলাকার সকল ধরণের মানুষ এই রাস্তা ব্যাবহার করে কালো বুড়িওয়ালার বাড়ীতে যেতো। শরিয়তপুরের এক বয়স্ক লোক এই প্রতিবেদককে জানায় যে, কালো বুড়িওয়ালার বাড়ীতে যাতায়াতের জন্য শতভাগ রাস্তা ছিল। দু’তিন বছর আগে এই রাস্তা মোকারম কেটে ফেলে। এটা নিয়ম বহির্ভূত একটি গর্হিত কাজ। মানুষের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করতে নেই। মোকারমের নানা সাহাজ উদ্দিন গংদের এই রাস্তা তৈরীতে মত ছিল। এই রাস্তা দিয়ে তারই বংশের লোকজন চলাচল করত। বাঁশের চেয়ে কঞ্চি বড়। নানা রাস্তা তৈরী করে মেয়ের ঘরের নাতী কেটে ফেলে। এলাকার সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক, নেতা সহ সর্বস্তরের প্রতিটি মানুষ হেন কৃতকর্মের জন্য ধিক্কার জানায়। যে ছেলে মাষ্টার বাড়ী থেকে বড় হয়েছে, সে ছেলে মাষ্টার বাড়ীর মানুষের রাতের অন্ধকারে যাতায়াতের রাস্তা কেটে শরীয়ত বিরোধী কাজ করে আবার মোটা অংকের টাকা দাবী করে। মিথ্যা বানোয়াট, মনগড়া গালগল্প বলে সময় কাটায়। এ ছেলে কখনও মানুষ হতে পারে না। সাক্ষাত এক শয়তানের ছায়াসঙ্গী। এলাকাবাসী মনে করে, সচেতন মানুষের উচিৎ, এই সমাজ থেকে ওকে বিতাড়িত করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের মত কুমিল্লায় পাঠানো। এলাকায় বিচার-সালিশে মুরুব্বীদের সাথে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে। চরম বেয়াদব হিসেবে সে এখন চায়ের দোকানে মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত।
উত্তারাধিকার সূত্রে জমির মালিক মরহুম সাহাজ উদ্দিনের দুই মেয়ে সাহিদা ও দেলোয়ারা বেগম। তারা দুই বোন মানুষের চলাচলের জন্য রাস্তা দিতে রাজী আছে। কিন্তু মোকারমের তীব্র বিরোধীতার কারণে তারা সমাজের মানুষের কাছে বড় অসহায়। মোকারমের খালু মোঃ নজরুল ইসলাম নরসংদীর কাছে ফোন করা হলে প্রথমে মোকারমের কেটে ফেলা রাস্তা পুনঃ মেরামত করতে রাজী হলেও এক সপ্তাহ পরে তা অপরাগতা প্রকাশ করে। কারণ নজরুল নিজ দায়িত্বে রাস্তা দিলে মোকারমের কারণে সংসারে অশান্তি হবে বলে জানিয়ে দেয়। সাহিদার কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, যেহেতু পুর্বে রাস্তা ছিল ছেলে-মেয়েরা রাস্তা দিলে তার কোন আপত্তি নেই।
এখানে প্রকাশ থাকে যে, আফজল হোসেনের বিক্রিত জমির রাস্তার উপর ইট দিয়ে বাউন্ডারী দেয়া হয়েছিল। রাস্তার মুখে বাউন্ডারী দেয়ার সময় একমাত্র নুরুল ইসলাম মেম্বার ও আহমেদ রুহুল তীব্র প্রতিবাদ করেছিল। যা পরবর্তী সময় বাউন্ডারী সরিয়ে মানুষের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। সে সময় আহমেদ রুহুলের প্লটে যাতায়াতের জন্য রাস্তা ছিল, তখন নুরুল ইসলামের বাড়ী, আঃ মান্নান, পাঁচ তলা বিল্ডিংয়ের জন্য কোন রাস্তা ছিল না। এখন ঐসব জায়গায় মানুষের যাতায়াতের জন্য রাস্তা আছে অথচ আহমেদ রুহুলের প্লটে যাতায়াতের রাস্তা কেটে ফেলা হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল, আফজল মাষ্টারের দেয়া বাউন্ডারী সরানোর পর মোকারম গংরা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করে কেন? বাউন্ডারী সরানো সময় মোকারম তখন কোথায় ছিল?
পরিশেষে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ, খুনী, প্রতারক, রাস্তা দখলবাজ নির্মূলে বর্তমান সরকার বাংলাদেশের মানুষের কাছে বেশ গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছে। এখনই সময় রাস্তা দখলদার সন্ত্রাসীদের মূল উৎপাটন করা। তাই এলাকার জনগণ চায় পরগাছা, রাস্তা খেকো মোকারমের মত আর দ্বিতীয়টি যেন জন্ম না হয়। সেই সাথে আইন শৃংখলা প্রয়োগকারী সংস্থা হতে তাকে দমন এবং সর্ব মহলকে মোকারম হতে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হচ্ছে। ২

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২২:০৭ | সোমবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com