রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আরেক মামলায় খালেদার ৭ বছরের সাজা

  |   সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮ | প্রিন্ট

আরেক মামলায় খালেদার ৭ বছরের সাজা

স্বাধীনদেশ অনলাইন: জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দণ্ডিত হয়ে কারাগারে যাওয়ার আট মাসের মাথায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার পুরান ঢাকার নাজিম উদ্দিন রোডের পরিত্যক্ত কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক আখতারুজ্জামান এই রায় দেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীকে ৭ বছর, হারিছের ব্যক্তিগত সচিব জিয়াউল ইসলাম মুন্নানকে ৭ বছর এবং বিএনপি নেতা সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ব্যক্তিগত সহকারী সচিব মনিরুল ইসলামকে ৭ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। হারিছ চৌধুরী পলাতক থাকলেও কারাগারে থাকা অপর দুই আসামি জিয়াউল ও মনিরুলকে আদালতে হাজির করা হয়। এদিকে আজ সকালে সুপ্রিম কেোর্টের আপিল বিভাগ খালেদা জিয়ার একটি আবেদন খারিজ বরে দেন। ফলে খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে বিচার কাজে কোনো বাধা নেই।

ক্ষমতার অপব্যবহার করে আর্থিক ক্ষতি করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় খালেদা জিয়াকে এই সাজা দেওয়া হয়েছে। আর আর্থিক ক্ষতি করার ব্যাপারে সহযোগিতা করার দায়ে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় হারিছ, জিয়াউল ও মনিরুলকে ৭ বছর দণ্ড দেওয়া হয়।

জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা লেনদেনের অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ৮ আগস্ট তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। তদন্ত শেষে পরের বছর ২০১২ সালে খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। এর দুই বছর পর ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদাসহ চার আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শেষ হলে দুদকের পক্ষে এ মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করা হয়। আসামিপক্ষে জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং মনিরুল ইসলামের পক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু করেন তাঁর আইনজীবী।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদাকে ৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়ার পর তাঁকে পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়। গত সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে কারাগারের একটি কক্ষকে অস্থায়ী আদালত হিসেবে ঘোষণা করে আইন মন্ত্রণালয়। ৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়া আদালতে হাজির হয়ে বলেন, তিনি অসুস্থ। তাঁর পক্ষে আদালতে এসে বসে থাকা সম্ভব না। আদালতের কাছ থেকে ন্যায়বিচার পাচ্ছেন না। এরপর খালেদা জিয়া আদালতে হাজির না হলে তাঁর অনুপস্থিতিতে বিচার চালানোর আদেশ দেন আদালত। এ আদেশকে চ্যালেঞ্জ করে খালেদা জিয়া হাইকোর্টে আসলে তা খারিজ হয়। আপিল বিভাগও হাইকোর্টের আদেশ বহাল করেছেন।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ

অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া তাঁর স্বামী জিয়াউর রহমানের নামে তাঁর তৎকালীন সেনানিবাসের বাড়ির ঠিকানায় নামসর্বস্ব জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট গঠন করেন। খালেদা জিয়া, তাঁর দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান, ওই ট্রাস্টের ট্রাস্টি হয়েও চ্যারিটেবল কাজে কোনো অর্থ ব্যয় করেননি। বরং নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য বিগত সময়ে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রীর পদে থেকে অবৈধ প্রভাব খাঁটিয়ে অবৈধ অর্থ সংগ্রহ করেন। অর্থ পরিচালনায় দায়িত্বরত থেকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে ব্যয় করেন তাঁর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী। হারিছের ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) জিয়াউল ইসলাম এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সহকারী ব্যক্তিগত সচিব (এপিএস) মনিরুল ইসলাম পরস্পস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন।

২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সালের ক্ষমতায় থাকার সময় ৬ শহীদ মইনুল রোডের বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করে জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে গুলশান সাব রেজিস্ট্রি অফিসে রেজিস্ট্রি করেন খালেদা জিয়া। চ্যারিটেবল কাজের জন্য ট্রাস্ট করেছেন তা উল্লেখ আছে। কিন্তু চ্যারিটেবল কাজে কোনো টাকা খরচ করেননি। খালেদা জিয়া ট্রাস্টের কাজে তাঁর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের এপিএস জিয়াউল ও অন্যান্যদের সহযোগিতায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সোনালী ব্যাংক শাখার হিসাবে (অ্যাকাউন্টে) ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে টাকা সংগ্রহ করে লেনদেন করেন। ট্রাস্টের নামে অবৈধভাবে টাকা গ্রহণ ও খরচ সংক্রান্ত প্রতিটি পদক্ষেপে স্বচ্ছতার অভাব দেখা গেছে। খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী পদে থেকে ক্ষমতার অবৈধ প্রভাব খাঁটিয়ে ১ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় জমা করেন। ওই টাকার বৈধ উৎসের কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় ওই হিসাবে লেনদেন হলেও প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে যাওয়ার পর ওই হিসাবে আর কোনো লেনদেন হয়নি।
খালেদা জিয়া জানতেন, ১ কোটি ৯০ লাখ ৫০ হাজার টাকার উৎস অবৈধ ছিল। কারণ তিনি ট্রাস্টের প্রথম ম্যানেজিং ট্রাস্টি। তাঁর অগোচরে ওই ট্রাস্টের হিসাবে টাকা জমা হওয়ার কথা নয়।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, বিএনপির তহবিল (ফান্ড) থেকে ৬ কোটি ১৮ লাখ ৮৯ হাজার ৫২৯ টাকা পাওয়ার পরও খালেদা জিয়া জেনেশুনে ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকার চেক দেন। দলের ফান্ডের অতিরিক্ত টাকা অবৈধভাবে সংগৃহীত হিসাবে জমা ছিল তা তিনি জানতেন। ওই টাকার উৎস অবৈধ। সে কারণে মেট্রোমেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপারের ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকাকে বৈধ করার অপচেষ্টা করেছেন। পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা আসামিরা অবৈধভাবে সংগ্রহ করেন এবং খরচ করেন।

হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ:
অভিযোগপত্রে বলা হয়, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী অবৈধভাবে অর্জিত সকল টাকা নিজ দায়িত্ব সংগ্রহ করে তাঁর এপিএস জিয়াউল ইসলাম এবং সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার এপিএস মনিরুল ইসলাম খানের সহায়তায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে অবৈধভাবে জিয়াউর রহমান ট্রাস্টের নামে জমি কেনার জন্য টাকা দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছেন।

জিয়াউল ইসলাম মুন্না যা করেছেন:
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর পিএস জিয়াউল ইসলাম মুন্না বিভিন্ন সময় পে-ইন স্লিপের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক শাখায় জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে জমা করেন। হারিছ চৌধুরীর নামে অন্যান্য যেসব পে-অর্ডার আসে তাও তিনি জমা রাখেন। এসব পে-অর্ডার ও নগদ টাকা তাঁর অধস্তন কর্মকর্তা হিসেবে তাঁরই নির্দেশে অবৈধ টাকা দিয়ে অপরাধ করেছেন।

মনিরুল ইসলাম খান যা করেছেন:
মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার সহকারী একান্ত সচিব প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে পে অর্ডার করার জন্য মেট্রো মেকার্স ডেভেলপমেন্ট এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ এফ এম জাহাঙ্গীর সাহায্য শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ধানমন্ডি শাখায় যান। ৫টি পে অর্ডারের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে অ্যাকাউন্টে অবৈধভাবে সংগৃহীত মোট ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারার অপরাধ করেছেন। – প্রথম আলো

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৪৮ | সোমবার, ২৯ অক্টোবর ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com