| বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট
বিজ্ঞাপন পেতে বাংলাদেশের অনলাইন মিডিয়াগুলোর অ্যালেক্সা র্যাংকিং কমানোর জন্য মরীয়া হয়ে ওঠার সুযোগ নিচ্ছে অ্যালেক্সা ডটকমের প্রতিনিধিরা। প্রতি মাসে তারা কৌশলে বড় অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এক অনলাইন প্রতিবেদনে এ দাবি করা হয়েছে। বাংলাদেশে এখন অনলাইন নিউজ পোর্টালের ছড়াছড়ি। পাঠক চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গত কয়েক মাসেই চালু হয়েছে কয়েকশ’ পোর্টাল। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে তারা নিচ্ছে নানা কৌশল। যে ওয়েবসাইট যত আগের র্যাংকে থাকবে তাদের পক্ষে বিজ্ঞাপন সংগ্রহ সহজ হবে। রেটও বেশি পাওয়া যাবে। তাই অনলাইন নিউজ পোর্টালগুলোর মধ্যে সংবাদের পাশাপাশি চলে অ্যালেক্সা র্যাংকিং কমানোর প্রতিযোগিতা।
আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতি মাসে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে অ্যালেক্সা ডটকমের প্রতিনিধিরা। প্রতিবেদনমতে, দুটি ওয়েবসাইট এবং অ্যালেক্সার নিজের পেজ ভিউয়ার ছাড়া অন্য কোনো ওয়েবসাইটের পেজ ভিউয়ার অথবা কতজন পেজটিতে ক্লিক করেছে তার কোনো হদিস পাওয়া যায় না অ্যালেক্সা ডটকমে। অথচ শুধুমাত্র পেজে ভিউয়ার, ইউনিক ভিজিটর এবং সাইট লিংকিং-এর ওপর নির্ভর করে পেজটির র্যাংকিং বা অবস্থান নির্ণয় করা সম্ভব। প্রশ্ন তোলা হয়, অ্যালেক্সার কাছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পেজ ভিউয়ার এবং ইউনিক ভিজিটর সংক্রান্ত তথ্য না থাকলে কীভাবে এসব ওয়েব পোর্টালের র্যাংকিং নির্ধারণ করছে অ্যালেক্সা।
আর যে গুগল এনালাইটিকস-এর কথা বলা হয় তার কোনো গ্রহণযোগ্যতাই নেই বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে। প্রতিবেদনটিতে একটি জরিপের তথ্য তুলে ধরা হয়। জরিপে দেখা যায়, অ্যালেক্সা ডটকমে ১০ থেকে ২০-এর মধ্যে অবস্থানরত কয়েকটি অনলাইন পোর্টালের গুগল এনালাইটিকস-এর পেজ ভিউয়ার দেখাচ্ছে ৩২ হাজার থেকে ৩৫ হাজারের মধ্যে। কিন্তু ১৫ ডিসেম্বর প্রতিবেদনটি লেখা পর্যন্ত অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে ৩০-এর বাইরে থাকা একটি নিউজ পোর্টালে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ পেজ ভিউয়ার দেখায়। এ থেকেও বুঝা যায়, অ্যালেক্সা র্যাংকিং কতটা ভুয়া! ওয়েবসাইট র্যাংকিং কি? ওয়েবসাইট র্যাংকিং হলো অনলাইন মিডিয়ার ভিড়ে আপনার ওয়েবসাইটটি কততম অবস্থানে আছে তার সঠিক অবস্থান নির্ণয় করার একটি মাধ্যম।
এ কাজগুলো করে থাকে www.alexa.com,www.sitescore.com অথবা www.heatsync.com এর মতো আরও কিছু প্রতিষ্ঠান। এসব সাইটে গিয়ে ক্লিক করে ওয়েবসাইটের নাম লিখে সার্চ দিলেই জানা যাবে যেকোনো ওয়েবসাইটের র্যাংকিংয়ের অবস্থান। এখন প্রশ্ন হলো, এসব সাইটে সার্চ দিয়ে আপনার ওয়েবসাইটের যে অবস্থান জানতে পারছেন তা কতটুকু নির্ভরযোগ্য? এ প্রশ্ন ওঠার পেছনে কারণ হলো- কয়েকটি ওয়েবসাইটে আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম লিখে সার্চ দিলে যদি একেক সাইটে একেক রকম রিপোর্ট প্রদর্শন করে? উইকিপিডিয়া এবং মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে চালু হওয়া র্যাংকিং নির্ণয়কারী সাইট ‘অ্যালেক্সা’ ক্যালিফোর্নিয়ার আমাজন সাইটের একটি সাবসিডিয়ারি সাইট। সাইবার স্পেসম্যান ব্রুস জিলাটের মালিকানাধীন এ সাইটটি অন্য ওয়েবসাইটের র্যাংকিং সম্পর্কে তথ্য দিয়ে থাকে। এই ওয়েব ইনফরমেশন কোম্পানি থেকে ওয়েব ট্রাফিক রিপোর্টও দেখানো হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে যদি কোনো সাইট প্রথম এক লাখের মধ্যে না থাকে তাহলে যে রিপোর্ট দেখায় তা প্রকৃতপক্ষে ভুল হয়ে থাকে। যারা অ্যালেক্সা টুলবার ব্যবহার করেন কেবল তাদের ভিজিটই অ্যালেক্সা গণনা করে থাকে। তাই অ্যালেক্সার রিপোর্ট নিরপেক্ষ নয়। বরং পক্ষপাতের অভিযোগে অভিযুক্ত। এ কারণেই নর্দান ক্যালিফোর্নিয়া ডিস্ট্রিক্ট ফেডারেল কোর্টে ২০০৭ সালের ২২ এপ্রিল অ্যালেক্সার বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়। মামলা নম্বর – সি-০৭-০১৭১৬ আরএস। তবে মামলার বিবরণের কপিটি ইতোমধ্যে উইকিপিডিয়া থেকে মুছে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অ্যালেক্সাই বিশেষ কৌশলে এ কাজটি করেছে। বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রত্যেকটিরই ওয়েব পোর্টাল রয়েছে এবং বর্তমানে প্রায় প্রত্যেকেই প্রতিনিয়ত নিউজ আপডেট করে থাকে। এই পত্রিকাগুলোর পরিচিতি এবং পাঠক চাহিদা বাংলাদেশের আনাচে-কানাছে তো আছেই, এমনকি বিশ্বব্যাপীও বটে। অথচ গত ১৫ ডিসেম্বর এ রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে প্রথম ৩০-এর মধ্যে মাত্র দুটি দৈনিক পত্রিকা স্থান পেয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে অভিযোগ করা হয়, একটি পত্রিকার অন-লাইনকে অ্যালেক্সাই ইচ্ছে করে প্রথম দিকে রেখেছে বা রাখতে বাধ্য হয়েছে। ওই পত্রিকা কর্তৃপক্ষের বিশেষ যোগাযোগের পর অ্যালেক্সা কর্তৃপক্ষ এই পোর্টালটির র্যাংকিং দ্রুত এগিয়ে এনেছে। প্রতিবেদন আরো বলা হয়, অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে এমন সব ওয়েব পোর্টালকে অ্যালেক্সা র্যাংকিংয়ে এগিয়ে রাখা হয়েছে, এগুলোর নামও ইতিপূর্বে বাংলাদেশের সচেতন মানুষ শোনেনি।
Posted ২২:৩৩ | বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin