বৃহস্পতিবার ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নাকুগাঁও ইমিগ্রেশনে ভ্রমণকারীদের ভোগান্তি

শাহরিয়ার মিল্টন   |   রবিবার, ০৯ জুলাই ২০২৩ | প্রিন্ট

নাকুগাঁও ইমিগ্রেশনে ভ্রমণকারীদের ভোগান্তি

শেরপুর : দীর্ঘ সোয়া ৩ বছর পর শেরপুরের নাকুগাঁও স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চালু হলেও ভ্রমণ কর পরিশোধ করা নিয়ে ভোগান্তিতে পড়ছেন যাত্রীরা। দেশের সকল ইমিগ্রেশন পয়েন্টে ভ্রমণ কর পরিশোধের জন্য নির্ধারিত সোনালী ব্যাংকের শাখা এবং বুথ রয়েছে। সেইসাথে অনলাইনেও ভ্রমণকর পরিশোধের সুবিধা রয়েছে। ফলে ওইসব ইমিগ্রেশন পয়েন্টে সপ্তাহের যে কোনো দিন ভারত গমণ ইচ্ছুক ভ্রমণকারীদের ভ্রমণ কর পরিশোধ করতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয়না। কিন্তু শেরপুরের নাকুগাঁও ইমিগ্রেশনের অনলাইনে ভ্রমণ কর দেয়ার পারমিট না থাকায় নির্ভর করতে হয় প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংক শাখার উপর। সম্প্রতি নাকুঁগাও কাস্টমস বিভাগে সোনালী ব্যাংকের বুথ চালু হলেও সপ্তাহের শুক্র ও শনিবার সেই বুথ বন্ধ থাকে। ফলে ভ্রমণকারীরা ওই দুই দিন ভারত যেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন।

জানা গেছে, করোনার কারণে গত ২০২০ সালে ২৬ মার্চ ইমিগ্রেশন বন্ধ হয়ে যায়। এরপর দীর্ঘ প্রায় সোয়া ৩ বছর পর চলতি বছরের ২২ জুন থেকে পুনরায় এ ইমিগ্রেশন দিয়ে যাত্রী পারাপার চালু হয়। গত বছরের ২৬ জুন করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম চালুর নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সেসময় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের ডালু ইমিগ্রেশন চালুর অনুমতি না পাওয়ায় যাত্রী পারাপার সম্ভব হয়নি। এরপর চলতি বছরের ৭ জুন ভারতের পশ্চিম গারো হিল জেলার তুরার পুলিশ সুপার বিবেকান্দ সিং এর সই করা এক আদেশ ডালু ইমিগ্রেশন চালুর নির্দেশ দিলেও নাকুগাঁও ইমিগ্রেশনে কম্পিউটারে সফটওয়্যার আপগ্রেডের কাজ শেষ না হওয়ায় যাতায়াত শুরু করা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে সব জটিলতা কাটিয়ে এবং সফটওয়্যার আপডেটের পর ২২ জুন থেকে ভারত গমন ইচ্ছুক সাধারণ যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় নাকুগাঁও ইমিগ্রেশন। এরপর থেকে ভারত ও বাংলাদেশের ব্যবসায়ী এবং ভ্রমণকারীরা চলাচল করছে। কিন্তু নতুন করে সমস্যা তৈরী হয়েছে শুক্র ও শনিবার চলাচলরত যাত্রীরা ভ্রমণ কর পরিশোধ না করতে পারার।

উল্লেখ্য যে, এ ইমিগ্রেশন পয়েন্টে পূর্বে ব্যাংকের বুথ না থাকায় এবং ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে যাত্রী পারাপার হওয়ায় কস্টমস বিভাগ বিশেষ ব্যবস্থায় যাত্রীদের কাছ থেকে ভ্রমণকর আদায় করতেন। কিন্তু ইমিগ্রেশন ও কাস্টমের কাজ আপগ্রেড বা ডিজিটাল হওয়ায় সে সুযোগ আর নেই। ফলে কাস্টমস বিভাগের ভিতর সম্প্রতি সোনালী ব্যাংকের বুথ হওয়ায় সেখানেই ভ্রমণ কর জমা দেয়া হয়ে থাকে। কিন্তু শুক্র ও শনিবার বুথটি বন্ধ থাকায় অনেক যাত্রী এসে ঘুরে যাচ্ছেন ভ্রমণ কর না দেয়ার কারণে। তাদেরকে রোববার নালিতাবাড়ি উপজেলা শাখা অথবা বুথে ভ্রমণ কর জমা নিয়ে ভারত যেতে হচ্ছে।

স্থানীয় এবং নাকুগাঁও স্থলবন্দর কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের পূর্ব উত্তর সীমান্তের অতিগুরুত্বপূর্ণ নাকুগাঁও স্থল বন্দর ও ইমিগ্রেশন পয়েন্ট দিয়ে ভারতের মেঘালয়, আসাম, পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ি ও দার্জিলিংসহ নেপাল, ভূটান ও সিকিম ভ্রমণকারী এবং ব্যবসায়ীদের যাতায়াতে সহজ রুট তৈরী হওয়ার পর দিন দিন এ পয়েন্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেড়েই চলছে। এটি এক সময় দেশের পশ্চিম এবং পূর্ব প্রান্তের বেনাপোল ও আখাউরা ইমিগ্রেশনের মতো দেশের মধ্য-উত্তর প্রান্তে ভ্রমণকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইমিগ্রেশন পয়েন্ট হয়ে উঠবে।

কাস্টমস সূত্রে জানাগেছে, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের হিসেব অনুযায়ী সরকার শুধু মাত্র ভ্রমণ কর আদায় হয় ২৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর পরের বছর ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ২৫ মার্চ পর্যন্ত ভ্রমণ কর আদায় হয় ১৭ লাখ ৪ হাজার টাকা। ২০২০ সালের ২৬ মার্চ থেকে লক ডাউন শুরু হলে যাত্রী পারাপার বন্ধ হয়ে যায়।

নালিতাবাড়ি উপজেলার পাথর-কয়লা ব্যাবাসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা স্থানীয়রা বিষয়টি জানার কারণে বন্ধের দিনে ভারত যাওয়ার জন্য আগেই ব্যাংক খোলার দিন ভ্রমণ কর পরিশোধ করে রাখি। তবে যারা দূরদূরান্ত থেকে আসছেন তারা বিপদে পড়ছেন। অনেকেই ঘুরেও যাচ্ছেন। ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার সমশের উদ্দিন বলনে, আমি ২২ জুন ইমিগ্রেশন খোলার পর ২৩ জুন শুক্রবার মেঘালয় ভ্রমণের জন্য এখানে এসে ঘুরে যাই পরে ২৫ জুন ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে মেঘালয়ে যেতে হয়েছে ।

নাকুগাঁও আমদানি ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান মুকুল বলেন, এ ইমগ্রিশেন দিয়ে যাত্রী পারাপার শুরু হওয়ায় ব্যবসারও যেমন প্রসার ঘটবে তেমনি ভ্রমনকারীদেরও অনেক সুবিধা হবে। কিন্তু দেশের সকল ইমিগ্রেশনে ব্যাংক বা বুথ শুক্র-শনি খোলা থাকলেও আমাদের এখানের বুথ বন্ধ থাকে। তাই অনেক ভ্রমণকারীর ভোগান্তি হচ্ছে। আমি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এর দ্রুত সমাধান দাবি করি।

এ বিষয়ে সোনালী ব্যাংক শেরপুর অঞ্চলের ডিজিএম শ্যামল কুমার মন্ডল বলেন, দেশের সকল ইমিগ্রেশনের জন্য ভ্রমণ কর পরিশোধ করা যায় অনলাইনেই। কিন্তু আমাদের শেরপুরের ইমিগ্রেশনটির নাম সংযুক্ত না থাকায় অনলাইনে ভ্রমণ কর দিতে পারছে না ভ্রমণকারীরা। তবে বিষয়টি আমরা উপরে জানিয়েছি। আশা করি খুব দ্রুত অনলাইন সেবাটি চালু হয়ে যাবে। এটি চালু হলে যাত্রীদের আর কোন সমস্যা থাকবে না। এছাড়া নাকুগাঁও বন্দরের বুথটি ব্যবসায়ীদের কাস্টমস এর টাকা জমা দেয়ার জন্য খোলা হলেও ভ্রমণ করও নেয়া হয়। কিন্তু শুক্র ও শনিবার খোলা রাখার বিষয়টি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন মহলে জানিয়েছি। তবে আশার কথা হচ্ছে, কিছু দিনের মধ্যেই নাকুঁগাও স্থলবন্দর সংলগ্ন চাড়ালি বাজারে আমাদের একটি উপ-শাখা খোলা হবে। তখন এসব সমস্যা আর থাকবে না।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৩৩ | রবিবার, ০৯ জুলাই ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com

%d bloggers like this: