বৃহস্পতিবার ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৯শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নামাজ কাজা থাকলে পরকালে কী হবে?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট

নামাজ কাজা থাকলে পরকালে কী হবে?

স্বাধীনদেশ : ঈমানের পর একজন মুমিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হলো নামাজ পড়া। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ৮২ বার নামাজের কথা বলেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে আবশ্যক করে দেওয়া এই ফরজ অনেকে অবহেলায় ছেড়ে দেন। অথচ ওজর ছাড়া নামাজ কাজা করারও সুযোগ নেই। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনদের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ ফরজ।’ (সুরা নিসা: ১০৩)

নামাজ কাজা রয়ে গেলে পরকালে কী হবে? এর উত্তর হলো—আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করার শাস্তি হবে। যেহেতু নামাজ না পড়া কুফুরি, তাকে কুফুরির গুনাহ নিয়েই আল্লাহর মুখোমুখি হতে হবে। আর নামাজে অবহেলার চূড়ান্ত পরিণতি হলো জাহান্নাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নবী ও হেদায়াতপ্রাপ্তদের পর এলো এমন এক অপদার্থ বংশধর, যারা নামাজ বিনষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির পূজারি হলো। সুতরাং তারা ‘গাই’ নামক জাহান্নামের শাস্তি প্রত্যক্ষ করবে..।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৯-৬০)

অন্য আয়াতে এসেছে, কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে—‘কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? তারা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না এবং আমরা মিসকিনদেরও খাবার দিতাম না; বরং আমরা সমালোচনাকারীদের সঙ্গে সমালোচনায় নিমগ্ন থাকতাম। এমনকি আমরা প্রতিদান দিবসকে অস্বীকার করতাম। আর এভাবেই হঠাৎ আমাদের মৃত্যু এসে গেল।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৩৮-৪৭)

রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘কোনো ব্যক্তি এবং কুফর-শিরকের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজ না পড়ারই। যে নামাজ ছেড়ে দিল সে কাফির হয়ে গেল (কাফিরের মতো কাজ করল)।’ (মুসলিম: ৮২; তিরমিজি: ২৬১৯) অন্য হাদিসে রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘আমাদের ও কাফিরদের মধ্যে ব্যবধান শুধু নামাজেরই। যে নামাজ ত্যাগ করল সে কাফির হয়ে গেল।’ (তিরমিজি: ২৬২১ ইবনে মাজাহ: ১০৮৮)

ফিকহ শাস্ত্রের প্রধান ও প্রসিদ্ধ সব ইমাম এই বিষয়ে একমত যে কোনো ব্যক্তির নামাজ কাজা হলে তথা ছুটে গেলে পরবর্তীতে তা আদায় করতে হবে। কেউ সুযোগ থাকার পরও যদি কাজা নামাজ আদায় না করে, তবে পরকালে তাকে জবাবদিহির মুখোমুখি হতে হবে।

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক নারী রাসুল (স.)-এর কাছে এসে বলল, আমার মা একদা মান্নত করেছিলেন যে, তিনি হজ করবেন। কিন্তু তা পূর্ণ করার আগেই তিনি ইন্তেকাল করেন। (এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী?) রাসুল (স.) বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ করো। বলো তো যদি তোমার মা কারো নিকটে ঋণী হতেন তুমি কি তার ঋণ পরিশোধ করে দিতে? মহিলাটি বলল, হ্যাঁ। তখন নবীজি (স.) বললেন, তবে আল্লাহর ঋণও পরিশোধ করো। কেননা তিনি তাঁর প্রাপ্য পাওয়ার অধিক উপযুক্ত।’ (সহিহ বুখারি: ১৮৫২)

উল্লিখিত হাদিস দ্বারা বোঝা যায়, যে আমল বান্দার ওপর ফরজ তা বান্দার ওপর আল্লাহর পাওনা বা ঋণ। এই ঋণ থেকে দায়মুক্তির একমাত্র পথ হলো তা আদায় করা। রাসুল (স.)-এর হাদিস, আমল ও সাহাবিদের অনুসৃত পদ্ধতি দ্বারাও প্রতীয়মান হয় যে, কোনো কারণে কেউ সময়মতো নামাজ পড়তে না পারলে পরবর্তীতে তা কাজা করে নিতে হবে। খন্দকের যুদ্ধে শত্রুবাহিনী দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকার কারণে রাসুল (স.) ও তাঁর সাহাবিদের কয়েক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হয়ে যায়। রাতে ছুটে যাওয়া সেই নামাজ তাঁরা আদায় করেন। (সহিহ বুখারি: ১/৮৩; সহিহ মুসলিম: ১/২২৬)

একরাতে নবীজি (স.) সাহাবিদের নিয়ে সফর করছিলেন। শেষ রাতে বিশ্রামের উদ্দেশ্যে সফর বিরতি দিলেন। বেলালকে (রা.) ফজরের নামাজের জন্য জাগিয়ে তোলার দায়িত্ব দিলেন। এরপর সবাই ঘুমিয়ে পড়লেন। কিন্তু বেলাল (রা.)-ও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়লেন। ফলে সবার নামাজ কাজা হয়ে গেল। সূর্যের কিরণ নবীজি (স.)-এর দেহ মোবারকে পড়তেই তিনি জাগ্রত হয়ে গেলেন, অতঃপর সবাইকে নিয়ে ফজরের নামাজ কাজা করলেন। (সহিহ বুখারি: ৫৯৭)

উল্লিখিত হাদিসদ্বয় থেকে পরিষ্কার বোঝা গেল কোনো কারণে সময়ের ভেতর নামাজ পড়তে না পারলে সে নামাজ অবশ্যই কাজা করতে হবে। একইভাবে নবীজি (স.) থেকে বিভিন্ন সনদে বর্ণিত আছে যে, যে ব্যক্তি নামাজের কথা ভুলে যায় অথবা ঘুমিয়ে থাকে তার কাফফারা হলো- যখন তার নামাজের কথা স্মরণ হবে তখন তা আদায় করে নেওয়া। (সহিহ বুখারি: ৫৯৭)

ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, সকল আলেমরা এ কথার ওপর ঐক্যমত পোষণ করেন যে, জেনে শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করলে তা কাজা করা জরুরি। (তাফসিরে কুরতুবি: ১/১৭৮)শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেম মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) হলেন, ছুটে যাওয়া নামাজের কাজা করা বিষয়ে সকল ফকিহ একমত পোষণ করেন। (রহমতুল উম্মাহ, পৃষ্ঠা-৪৬)

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যদি কারো দায়িত্বে কাজা নামাজের পরিমাণ অনেক বেশি হয় তবে সুন্নত নামাজে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে ছুটে যাওয়া ফরজ নামাজসমূহের কাজা করাই উত্তম। (ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া: ২২/১০৪)

অনেকে ধারণা করেন, তাওবা করলে কাজা নামাজও গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এটি ভুল চিন্তা। এমন চিন্তায় নামাজ ছেড়ে দেওয়া তো চরম নির্বুদ্ধিতা, সময়মতো নামাজ না পড়াও কত কঠিন গুনাহের কাজ জানা থাকলে এই ধারণা কেউ করত না। ইসলামি আইন ও ফেকাহশাস্ত্রবিদদের বক্তব্য হলো- ইসলামি শরিয়তে কিছু গুনাহের কাজ এমন রয়েছে, যেগুলোর জন্য শুধু তওবাই যথেষ্ট। আর কিছু কাজ এমন রয়েছে, যেগুলোর জন্য শুধু তওবা যথেষ্ট নয়। বরং কাজাও আদায় করতে হয়। নামাজ হল এ সকল কাজের অন্তর্ভুক্ত। যদি নামাজ কাজা থাকে, জীবনের শেষ মুহূর্তে ফিদিয়া দেওয়ার ওসিয়ত করতে হবে। নামাজের ফিদিয়া হলো- প্রতিদিনকার কাজা করা বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাজ হিসেব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতর এর টাকা পরিমাণ হয়। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৭২)

কাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম হলো- ছুটে যাওয়া নামাজ পরবর্তী নামাজের আগে পড়ে নিবে। (দ্র: বুখারি: ৫৯৬) অর্থাৎ ফজর ছুটে গেলে ঘুম থেকে উঠার পরপরই অথবা জোহরের আগে, জোহর ছুটে গেলে আসরের আগে, আসর ছুটে গেলে মাগরিবের আগে, মাগরিব ছুটে গেলে এশার আগে এভাবে নামাজ পড়ে নেওয়াই নিয়ম। কারো পাঁচ ওয়াক্তের বেশি কাজা হয়ে গেলে– সেটা কয়েক দিন কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরও হতে পারে-তাহলে তার উচিত কাজা নামাজগুলো একটা অনুমান করে কোন নামাজ কত ওয়াক্ত কাজা হয়েছে তা নির্ধারণ করে নিবে। তারপর তা আদায় করবে। যত দ্রুত এবং যত বেশি সম্ভব এই কাজাগুলো আদায় করতে হবে। প্রতি ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাজা আদায় করলেও ভালো। এছাড়া সুবিধামতো সময়ে যখন যে নামাজের কাজা আদায়ের সুযোগ হয় আদায় করা যাবে। সুন্নত নামাজের কাজা করা যায় না, কেবল ফরজ ও বিতিরের নামাজের কাজা করার সুযোগ আছে। (বুখারি: ৫৯৬; আল ইসতিযকার: ১/৩০২; আদ্দুররুল মুখতার, সাঈদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা-৬৮; ফতোয়া দারুল উলুম, জাকারিয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা-৩৩২)

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:১৪ | সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com