| বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | প্রিন্ট
বিশ্বব্যাপী প্রতিরক্ষা বিষয়ে মনিটরিং ও নজরদারির কাজে নিয়োজিত একটি সংস্থার নাম জেনস ইনফরমেশন গ্রুপ। প্রতিরক্ষা বিষয়ে মনিটরিং ও নজরদারির বিষয়ে সংস্থাটি বিশ্বের সবচেয়ে বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান। আর স্বয়ং এই সংস্থাটিই প্রশ্ন তুলেছে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের হামলা চালানোর দাবির বিষয়ে। মঙ্গলবার জেনস ইনফরমেশন গ্রুপ বলেছে, লাইন অব কন্ট্রোল বা এলওসি (কাশ্মিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার সীমানা) অতিক্রম করে পাকিস্তানে ঢুকে আজাদ কাশ্মিরে একটি বৃহৎ উগ্রবাদী সন্ত্রাসীদের ঘাঁটি ধ্বংস ও ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যার বিষয়ে ভারত যে দাবি করেছে তা প্রশ্নবিদ্ধ ও সন্দেহজনক।
লন্ডন ভিত্তিক এই প্রতিরক্ষাবিষয়ক প্রতিষ্ঠানের একজন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ রাহুল বেদি নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন,‘ভারত বলছে যে তারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে একটি সন্ত্রাসী ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছে। কিন্তু নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সূত্র বলছে যে, পাকিস্তানের ভিতরে থাকা ওইসব সন্ত্রাসী ঘাঁটিগুলো সাম্প্রকি সময়ে উচ্ছেদ করা হয়েছিল।’
রাহুল বেদি আরো বলেন,‘এই হামলার প্রচারণা ও হতাহতের খবর প্রকাশ করা রাজনৈতিক বাগাড়ম্বরতা ছাড়া আর কিছুই না। ভারতের আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজের ও দলের সুবিধার জন্য দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে কিছু কাজ করা বা প্রচারণা চালানোর প্রয়োজন ছিল।’
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ রাহুল বেদি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,‘পাকিস্তানি সামরিকবাহিনী অবশ্যই এই হামলার জবাব দেবে। তবে সেটা কোনো প্রক্সি যুদ্ধ বা সন্ত্রাসী বাহিনীকে মদদ দিয়ে নয়, সরাসরি হামলার মাধ্যমে। কোথায় এবং কখন এই হামলার জবাব দেয়া হবে তা কেবল পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীই জানে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস অবশ্য ভারতের দাবির বিষয়ে নয়া দিল্লীতে অবস্থানরত বিভিন্ন গবেষক ও কূটনীতিকদেরও বক্তব্য নিয়েছে। তারাও বলছেন যে, হামলার সময় ভারতের বিমানবাহিনীর লক্ষ্য ছিল অপরিষ্কার। তারা বলেন,‘যদি কাশ্মিরের সীমান্ত এলাকায় কোনো সন্ত্রাসী ঘাঁটি থেকেও থাকে, তাহলে সেগুলো কাশ্মিরের পুলওয়ামা জেলায় আত্মঘাতী হামলার প্রেক্ষিতে নরেন্দ্র মোদীর প্রতিশোধের হুমকির পরই সরিয়ে নেয়া হয়েছে।’
অন্যদিকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতের হামলার দাবির বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। প্রকাশিত প্রতিবেদনে হামলাস্থল আজাদ কাশ্মিরের বালাকোট জেলার জাব্বা এলাকার বাসিন্দাদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বালাকোট জেলার জাব্বা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, তারা গভীর রাতে পাঁচটি বিশাল বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন। তারা বলেন, হামলায় কয়েকটি কুঁড়েঘর ধ্বংস হয়েছে এবং কয়েকটি গাছ উপড়ে পড়েছে। কিন্তু এই হামলায় কেউই নিহত হয়নি।
এদিকে যুক্তরাজ্যের গার্ডিয়ান পত্রিকা বলছে,‘এটা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না যে, এই ধরনের হামলা থেকে ভারতের অর্জনটা কি? অথবা এটাও হতে পারে যে, ১৪ ফেব্রুয়ারী কাশ্মিরে আত্মঘাতী হামলার বিষয়ে মানুষের ক্ষোভ প্রশমিত করতে পাকিস্তানের বড় কোনো ক্ষতি না করে খুবই সতর্কভাবে এই হামলা পরিচালনা করা হয়েছে।’
গার্ডিয়ান আরো বলেছে যে, বালাকোট জেলা খাইবার পাখতুনখোয়া এলাকার নিকটে অবস্থিত। এটা লাইন অব কন্ট্রোল বা এলওসি থেকে ৮০ কিলোমিটার ভিতরে অবস্থিত এবং পাকিস্তানী ভূখন্ডের বেশ অনেক ভিতরে। সেখানে যদি এরকম কোনো হামলা ও হতাহতের ঘটনা ঘটতো, তাহলে সেটা উভয় দেশের মাঝে আরো উত্তেজনা সৃষ্টি করতো।
Posted ২১:২০ | বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Mahbub