শনিবার ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নরেন্দ্র মোদি কি জোট সরকার চালাতে পারবেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট

নরেন্দ্র মোদি কি জোট সরকার চালাতে পারবেন?

ভারতে সরকার গঠনের জন্য যে কোনো রাজনৈতিক দল কিংবা জোটের দেশটির পার্লামেন্টে লোকসভার ৫৪৩টি আসনের মধ্যে নূন্যতম ২৭২ টি আসনের প্রয়োজন হয়। এই সাংবিধানিক বাস্তবতা অনুযায়ী, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির সমর্থন পেলে তবেই এবার সরকার গড়তে পারবে বিজেপি।

ওই দুই নেতা এখন এনডিএ জোটে থাকলেও দুজনেই রাজনৈতিক কৌশল আর জোট বদল করতে সিদ্ধহস্ত।

 

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দল ইউনাইটেডের (জেডিইউ) প্রধান নীতিশ কুমার একটা সময়ে বিজেপির জোট সঙ্গী থাকলেও তিনি কয়েক বছর আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। বিজেপি-বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে জোট ইনডিয়া গঠনের অন্যতম কারিগরও তিনি।

তবে এবছরের জানুয়ারিতে আবারও জোট বদল করে এনডিএ জোটে যোগ দেন নীতিশ। বিহারে এখন এনডিএ’র সঙ্গে সরকার চালাচ্ছেন তিনি, এবং লোকসভা নির্বাচনেও এই জোটে শামিল ছিল তার দল।

 

জেডিইউ বিহারে ১২ টি আসন জিতেছে, এতটা তারা প্রত্যাশা করেননি। আবার বিজেপিও সে রাজ্যে ১২টি আসন পেয়েছে।

বিজেপি-জেডিইউর বাইরে বিহারে এনডিএর অন্যান্য সঙ্গীদের মধ্যে এলজেপি (রাম বিলাস) পাঁচটি এবং জিতন রাম মাজির দল একটি আসন পেয়েছে। অর্থাৎ বিহারে এনডিএ পেয়েছে মোট ৩০টি আসন।

 

পূর্ণিয়ায় নির্দলীয় প্রার্থী পাপ্পু যাদব একটি আসনে জয়ী হয়েছেন।

চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারই এখন ভরসা

অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি বা টিডিপি পেয়েছে ১৬টি আসন। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ওই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

টিডিপি বিধানসভার ১৭৫ টি আসনের মধ্যে ১৩৫ টিতে জিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। টিডিপি আগে থেকেই এনডিএ’র শরিক।

ঘটনাচক্রে, নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডু দুজনেই কিছুদিন আগে পর্যন্ত মোদি সরকার-বিরোধী অবস্থানে ছিলেন।

 

সেই কারণেই এনডিএ জোটে তারা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।

সরকার গঠন করতে হলে নরেন্দ্র মোদি মোদী ও বিজেপিকে এখন পুরনো এই জোটসঙ্গীদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে।

মোদির সামনে এখন যে চ্যালেঞ্জ

লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরনোর পরে এই দুই নেতা এখন হয়ে উঠেছেন ‘কিংমেকার’।

প্রবীণ সাংবাদিক সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছেন, ‘নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর ক্রাচ ছাড়া এই সরকার চলতে পারবে না এবং নীতীশ কুমার তো হাওয়ার দিক বদলের মতো জোট বদলিয়ে ফেলেন।

‘এখন এই দুটি ক্রাচ বিজেপির গলায় ঘণ্টার মতো হয়ে গেছে। তারা দুজনেই পুরোনো ওস্তাদ খেলোয়াড় এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দুজনেরই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা রয়েছে। এই ক্ষমতার সমীকরণে তারা নিজেদের পাওনা-গণ্ডা বুঝে নেবেন। তারা নিজেদের দাবি তুলে ধরে বলবেন যে আমাদের এটা চাই,তবেই জোটে থাকব,’ বলছিলেন সঞ্জীব শ্রীবাস্তব।

সঞ্জীব শ্রীবাস্তবের এই কথা ইতোমধ্যে ফলেও গেছে। চন্দ্রবাবু নাইডু ইতোমধ্যে বিজেপি হাইকমান্ডের কাছে অর্থমন্ত্রণালয়সহ ৫টি মন্ত্রণালয় এবং লোকসভা স্পিকারের পদ দাবি করেছেন। অন্যদিকে নীতিশ চেয়েছেন চারটি মন্ত্রণালয় এবং অপর যে কোনো মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিমন্ত্রীর পদ।

ক্ষমতার বি-কেন্দ্রীকরণ হবে

গত ১০ বছর যখন সরকার চালিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি, তখন ক্ষমতা পুরোটাই তার এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন না।

কিন্তু এখন জোট সরকার হলে সেখানে অন্যরাও অংশগ্রহণ করবে এবং তাদের কথাও শুনতে হবে, তবেই চলতে পারবে সরকার।

 

সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছিলেন, ‘এর অর্থ হল জোট ধর্ম মেনে, বাজপেয়ী মডেল যদি গ্রহণ করা হয়, তবেই সরকার চালনা সম্ভব হবে।’

 

তার কথায়, ‘নিজের পুরো রাজনীতিক ক্যারিয়ারে নরেন্দ্র মোদির এই মডেলে কাজ করার কোনো অভিজ্ঞতাই নেই। গত ২২ বছরে তিনি তিনবার গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী এবং দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে একরকম একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে কাজ করেছেন। এখন হঠাৎ করে সমন্বয় করে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনীতি করা তার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এই নতুন কাজের ধরণ তিনি কতটা গ্রহণ করতে পারবেন, তার ওপরেই এই সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে।’

অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার যখন গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে, তখন এনডিএ জোটে ২৪টি দল ছিল। সেই সরকার টিকেছিল পাঁচ বছর।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোটের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষমতাই বাজপেয়ী সরকারকে পাঁচ বছর টিকিয়ে রেখেছিল।

কংগ্রেসও কি সরকার গঠনের দৌড়ে রয়েছে?

নির্বাচনের ফলাফল যখন মোটামুটি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মঙ্গলবার সন্ধ্যায়, তখন কংগ্রেস সদর দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে সরকার গঠন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এবং কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে জানান, যে আজ বুধবার জোটের বৈঠকে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

আবার সেই সময়েই জেডিইউ নেতা খালিদ আনোয়ার একটি রাজনৈতিক জল্পনা উসকিয়ে দিয়ে এক্স-এ লেখেন, “নীতীশ কুমারের চেয়ে ভাল আর কে প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন?”

তিনি আরও লেখেন , ‘নীতীশজি দেশকে বোঝেন। আমরা জানি কীভাবে আমাদের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে সম্মান করতে হয়, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিকে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হয়। এই মুহূর্তে আমরা এনডিএ জোটে আছি, কিন্তু আগেও এবং এখনও মানুষ নীতীশ কুমারকে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দেখতে চান।’

তবে ইন্ডিয়া জোটের অপর দুই শরিক আরজেডি ও আম আদমি পার্টির বক্তব্যও লক্ষণীয়।

আরজেডি নেতা মনোজ ঝা বলেছেন, ‘বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে অনেক দূরে। যদি চন্দ্রবাবু নাইডুর দল টিডিপি এবং এখানে (বিহারে) জেডিইউকে কিছুটা আলাদা করে দেওয়া যায়, তাহলে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই নেই। স্পষ্টতই, সেই ‘৪০০ পার’ করার বেলুন ফেটে গেছে।’

দিল্লির মন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির নেতা গোপাল রাই সাংবাদিক সম্মেলন করে চন্দ্রবাবু নাইডু ও নীতীশ কুমারকে ভেবে-চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আবেদন জানিয়েছেন।

রাতে বিজেপির সদর দপ্তরে ভাষণ দেওয়ার সময় যতই নরেন্দ্র মোদি বারে বারে এনডিএ সরকার গঠনের কথা বলুন, সবার নজর এখন নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর ওপরেই।

কারণ তারা দুজনেই জোটসঙ্গী আর রাজনৈতিক কৌশল বদলানোর জন্য সুপরিচিত।

সূত্র : বিবিসি বাংলা

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৯:৩৩ | বৃহস্পতিবার, ০৬ জুন ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com