শনিবার ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলি বন্দিশিবিরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন : নিউইয়র্ক টাইমসের তদন্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪ | প্রিন্ট

ইসরায়েলি বন্দিশিবিরে ফিলিস্তিনিদের ওপর ভয়াবহ নির্যাতন : নিউইয়র্ক টাইমসের তদন্ত

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রভাবশালী গণমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের একটি তদন্তে ইসরায়েলের বন্দিশিবিরে আটক ফিলিস্তিনিদের নিপীড়ন-নির্যাতনের রোমহর্ষ চিত্র উঠে এসেছে।  ওই শিবিরের সাবেক বন্দী, ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তা, চিকিৎসক ও সেনাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে তিন মাস ধরে এ তদন্তকাজ পরিচালনা করা হয়। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শিবিরটিতে বন্দী আছেন চার হাজারের মতো ফিলিস্তিনি।

 

‘এসদে তেইমান’ নামে বন্দিশিবিরের অবস্থান দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি সামরিক ঘাঁটিতে। শিবিরটি ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে দখলদার ইসরায়েলি সেনাদের হাতে আটক হওয়া লোকজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের কাজে ব্যবহৃত একটি অস্থায়ী স্থাপনা।

 

ইসরায়েলি আইনে  এই বন্দীদের বিচার বিভাগীয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া ৭৫ দিন পর্যন্ত ও কোনো আইনজীবী বা বিচারের মুখোমুখি করা ছাড়া ৯০ দিন পর্যন্ত আটকে রাখার বিধান আছে। তাদের অবস্থানস্থল সম্পর্কে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন, এমনকি আন্তর্জাতিক রেডক্রস কমিটিকেও জানতে দেওয়া হয় না; যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

তদন্ত চলাকালে শিবিরটির সাবেক বন্দীরা ইসরায়েলি সেনাদের হাতে বেধড়ক মারধর, বৈদ্যুতিক শক, অমানবিক আচরণ, ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। এই বন্দীদের আটজন ওই শিবিরে আটক ছিলেন বলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদকালে তাদের ঘুষি ও লাথি মারা হয়েছে। পেটানো হয়েছে লাঠি-রাইফেলের বাঁট ও ধাতব দ্রব্য শনাক্ত করার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র দিয়ে।

 

সেনাদের মারধরে পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুজন বন্দী। তাদের একজন দাবি করেছেন, তাকে হাঁটু দিয়ে বুকে আঘাত করা হয়েছেন। অন্যজন বলেছেন, তাকে লাথি দেওয়া হয়েছে এবং রাইফেল দিয়ে মারা হয়েছে। সাতজন বন্দী বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের শুধু ডায়াপার পরে থাকতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার দাবি করেছেন তিনজন বন্দী।

 

দ্য টাইমসের এ তদন্তে যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের চিত্রও উঠে এসেছে। এমন নির্যাতনের শিকার হওয়া বন্দীদের একজন ৩৯ বছর বয়সী জ্যেষ্ঠ নার্স মোহাম্মদ আল-হামলাবি। নিজের দুঃসহ স্মৃতির কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, একজন নারী সেনা কর্মকর্তা দুই সেনাসদস্যকে নির্দেশ দেন তাকে ওপরে তুলে ধরতে। এরপর মেঝেতে লাগানো একটি ধাতবখণ্ডের ওপর তাকে রেখে চাপ দিলে সেটি পায়ুপথে ঢুকে যায়। এতে রক্তপাত ও অসহনীয় যন্ত্রণা হয় তার।

 

এদিকে ফিলিস্তিনবিষয়ক জাতিসংঘের মূল সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর ফাঁস হওয়া এক খসড়া প্রতিবেদনেও ফিলিস্তিনি বন্দী নির্যাতনের একই রকম বর্ণনা পাওয়া গেছে।

 

ইসরায়েলের বন্দিশিবিরে অমানবিক অবস্থায় থাকার বর্ণনাও দিয়েছেন ফিলিস্তিনিরা। এর মধ্যে ছিল, চোখ বেঁধে, হাতকড়া পরিয়ে, অন্তর্বাস ছাড়া সব পোশাক খুলে রাখা ইত্যাদি। এর আগে সামরিক ট্রাকে গাদাগাদি করে তুলে এসদে তেইমান শিবিরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। পরে সেখানে তাদের বিশেষ ধরনের হ্যাঙ্গারে রাখা হয়। হাতকড়া পরা অবস্থায় মাদুরে চুপ করে বসে থাকতে বাধ্য করা হয় দিনে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত। শ্রান্ত-ক্লান্ত বন্দীরা ঘুমের ঘরে ঢলে পড়লে কর্মকর্তারা তাদের ডেকে নিতেন ও শাস্তিস্বরূপ পেটাতেন।

 

আলাদাভাবে শুধু জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়াই ছিল এক দুঃস্বপ্নের অগ্নিপরীক্ষা। তদন্তে জানা যায়, বন্দীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে এক বিশেষ কক্ষে নিয়ে যাওয়া হতো; যেটিকে তারা বলতেন ‘ডিসকো রুম’। সেখানে তারা যাতে ঘুমিয়ে না পড়েন, সে জন্য অতি উচ্চশব্দে বাজানো হতো গান। এ ছিল নতুন ধরনের নির্যাতন। এমন এক ঘটনায় এক বন্দীর কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ে।

অভিযোগ অস্বীকার ইসরায়েলের

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এসদে তেইমান বন্দিশিবিরে আটক ফিলিস্তিনিদের ‘পদ্ধতিগত উপায়ে নির্যাতনের’ এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে। তাদের দাবি, বন্দীদের ওপর নির্যাতন চালানো কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং এ ধরনের ঘটনা ঘটলে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হয়ে থাকে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৭:০৪ | মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com