শনিবার ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

স্ত্রীর কিডনিতে জীবন ফিরে পেয়ে পরকীয়ায় জড়ালেন স্বামী!

ডেস্ক রিপোর্ট   |   বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫ | প্রিন্ট

স্ত্রীর কিডনিতে জীবন ফিরে পেয়ে পরকীয়ায় জড়ালেন স্বামী!

নিজের কিডনি দিয়ে স্বামীর জীবন বাঁচিয়েছিলেন স্ত্রী টুনি। তবে স্বামী সুস্থ হওয়ার পর সেই ভালোবাসা ও ত্যাগ ভুলে গিয়ে জড়িয়ে পড়েন পরকীয়া ও অনলাইন জুয়ায়। শুধু তাই নয়, স্ত্রীর ওপর নেমে আসে শারীরিক নির্যাতন। মারধর করে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন, আর প্রেমিকার সঙ্গে সংসার শুরু করেন তিনি।

এই হৃদয়বিদারক ও অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে সাভারের কলমা এলাকায়। নির্যাতিত স্ত্রী টুনি স্বামী তারেকের বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের মামলা করেছেন। তারেককে গ্রেফতার করা হলেও বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।

বিয়ের মাত্র দুই বছরের মাথায় টুনি জানতে পারেন তার স্বামী মোহাম্মদ তারেকের দুটি কিডনি প্রায় অচল। তাকে বাঁচাতে নিয়মিত ডায়ালাইসিস ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। অথচ এর মাত্র এক বছর আগে সন্তানের মা হয়েছেন টুনি, সংসার জীবনেরও সবে দুই বছর পার হয়েছে। এমন সময়ে এই দুঃসংবাদ তার জীবনের সবকিছু লন্ডভন্ড করে দেয়।

ভালোবাসার বাঁধন বড়ই শক্ত। টুনি স্বামীর হাত শক্ত করে ধরেন এবং উন্নত চিকিৎসার জন্য তারেককে ভারতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ভারতেই শুরু হয় তারেকের চিকিৎসা।

কয়েক বছর পর চিকিৎসকরা জানান, রোগীকে বাঁচাতে হলে অতি দ্রুত কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হবে। তখন স্ত্রী টুনিই এগিয়ে আসেন। নিজের কিডনি দিয়ে তিনি স্বামীকে প্রাণে বাঁচান। টুনি ভেবেছিলেন, এবার হয়তো তার কষ্টের জীবনের সমাপ্তি ঘটেছে। কিন্তু বিষয়টিকে ভুল প্রমাণ করেছে তারেকের কর্মকাণ্ড।

সুস্থ হয়েই তারেক জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। এক নারীর প্রেমে আসক্ত হয়ে পড়েন। পাশাপাশি অনলাইন জুয়ার নেশাও পেয়ে বসে তাকে। যেই স্ত্রীর কারণে তিনি নতুন জীবন ফিরে পেলেন, একসময় তাকেই মারধর করতে শুরু করেন। একপর্যায়ে মারধর করে স্ত্রীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে পরকীয়া প্রেমিকার সঙ্গে গিয়ে ওঠেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে কলেজেপড়ুয়া তরুণী উম্মে সাহেদীনা টুনির সঙ্গে মালয়েশিয়া প্রবাসী যুবক তারেকের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পরই তারেক ও টুনির সংসার আলো করে আসে একটি পুত্রসন্তান। নাম রাখা হয় আজমাইন দিব্য। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তবে, ২০০৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তারেক। চিকিৎসকেরা জানান, তার দুটি কিডনিই প্রায় অচল। রোগীকে বাঁচাতে হলে অতি দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু করাতে হবে।

তবে, স্বামীর ডায়ালাইসিসে রাজি ছিলেন না টুনি। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য স্বামীকে ভারতে নিয়ে যাবেন। কোনো ধরনের কালক্ষেপণ না করে এক সপ্তাহের মধ্যেই স্বামীকে নিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। তামিলনাড়ুর বিখ্যাত সিএমসি হাসপাতালে শুরু হয় তারেকের চিকিৎসা।

চিকিৎসকেরা জানান, তারেকের দুই কিডনি মিলিয়ে ২৪ শতাংশ সচল রয়েছে। এক্ষেত্রে মেডিসিনের মাধ্যমে আরও ১০ বছর তিনি চিকিৎসা চালিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু এরপর কিডনি প্রতিস্থাপন করতেই হবে।

এ অবস্থার মধ্যেও সদ্য সন্তানের মা হওয়া টুনি স্বামীর হাত শক্ত করে চেপে ধরেন। অভয় দেন, এই লড়াইয়ে কখনো হাত ছেড়ে দেবেন না। যেই কথা সেই কাজ। ঢাকায় ফিরে নিজ বাড়িতেই খোলেন হোম বিউটি পার্লার, পাশাপাশি বুটিকসের কাজ শুরু করেন। মাস শেষে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা উপার্জন করতেন। আর পুরো টাকাটা ব্যয় করতেন তারেকের চিকিৎসায়। এভাবে বেশ কয়েক বছর কেটে যায়। নিজের জমানো টাকা, বিয়ের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে স্বামীর চিকিৎসা চালিয়ে যান তিনি। চিকিৎসকদের পরামর্শমতে, টুনিকে বছরে তিনবার অসুস্থ তারেককে নিয়ে ভারতে যেতে হতো। প্রতিবার প্রায় দুই থেকে তিন লাখ টাকা খরচ হতো। যা পুরোটাই আসত নিজের আয় ও স্বর্ণালংকার বিক্রির টাকা থেকে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে টুনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তারেককে কিডনি দেওয়ার পর আমার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতির দিকে চলে যায়। সাত দিন আইসিইউতে রাখা হয়। আইসিইউ থেকে কেবিনে নিয়ে আসার পরই যেন অন্য এক তারেককে আবিষ্কার করলাম। যেই মানুষটার জন্য আমার সবকিছু ত্যাগ করেছি, নিজের জীবন দিয়ে হলেও তাকে বাঁচাতে চেয়েছি; সেই কিনা কিডনি পেয়ে সুস্থ হয়েই হাসপাতালে আমার সঙ্গে চিৎকার করতে শুরু করল, মারতে উদ্যত হলো। আমার এক খালা কেন অপারেশনের আগে টাকা পাঠাতে দেরি করেছিল- এমনটা বলে চিল্লাচিল্লি করল।’

টুনি জানান, তবে ঢাকায় ফেরার পরই জীবনে নেমে আসে নরক। সুস্থ হয়ে তারেক নতুন কোনো চাকরি কিংবা ব্যবসা শুরু তো দূরের কথা উল্টো তাকে চাপ দেন উপার্জনের সব টাকা তার হাতে তুলে দিতে এবং শ্বশুরবাড়ি থেকে আরও টাকা নিয়ে আসতে। একপর্যায়ে অনলাইন জুয়া ও পরকীয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ে তারেক। যেই স্ত্রীর জন্য নিজের জীবন ফিরে পেলেন, তার গায়ে হাত তুলতে শুরু করেন।

টুনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময় কাজের অজুহাতে ঢাকায় গিয়ে সময় কাটাত তারেক। এক সময় জানতে পারি, তাহমিনা নামে এক ডিভোর্সী নারীর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে পরকীয়ায় লিপ্ত সে। তারেকের মোবাইল ঘেঁটে এসবের প্রমাণও পাই। বিষয়টি নিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, সে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে আমাকে পুরো বাড়ি তার নামে লিখে দিয়ে ডিভোর্স দেওয়ার জন্য চাপ দেয়।’

নির্যাতন সইতে না পেরে গত ২ ফেব্রুয়ারি সাভার থানায় গিয়ে তারেকের নামে অভিযোগ করেন টুনি। কিন্তু এর পরই আবারও নিজের খোলস পাল্টে ফেলেন তারেক। টুনিকে বুঝিয়ে এক দিন পরেই (৪ ফেব্রুয়ারি) থানায় মুচলেকা দিয়ে সেই অভিযোগ তুলে ফেলেন তিনি।

এদিকে, জামিনে মুক্ত হওয়ার পর থেকে তারেকের খোঁজ নেই। তিনি নিজের নম্বরও পরিবর্তন করে ফেলেছেন। ফলে তার সঙ্গে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি। তার আইনজীবীর সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাকেও পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে, তারেকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কেউ এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৯:৫৫ | বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

(987 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ ক্যালেন্ডার

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com