শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৫০ বছর পরও মাটির নিচ থেকে বের হচ্ছে শহিদদের হাড়গোড়

  |   বুধবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট

৫০ বছর পরও মাটির নিচ থেকে বের হচ্ছে শহিদদের হাড়গোড়

শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর : স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও মাটির নিচ থেকে বের হয়ে আসছে গণহত্যায় শহিদদের কঙ্কাল ও মাথার খুলির ভগ্নাংশ। এসব দেখে স্থানীয়রা শিহরিত হয়ে উঠেছেন। গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার আহম্মদ নগর এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে গণপূর্ত বিভাগ সম্প্রতি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে আগের চিহ্নিত করা বধ্যভূমির ওপর আরও জমি বৃদ্ধি করে মোট ১৯ শতক জমির ওপর দৃষ্টিনন্দন একটি বধ্যভূমি নির্মাণের কাজ শুরু করে।

এ সময় বধ্যভূমির সীমানা প্রাচীর নির্মাণের লক্ষ্যে পিলারের জন্য মাটি খুঁড়তে গিয়ে মাটির নিচ থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে একের পর এক মাথার খুলি ও শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড়গোড়। এসব দেখে প্রথমে স্থানীয়রা বিচলিত ও আবেগাপ্লুত হয়ে উঠে। তাৎক্ষণিক কেউ কেউ ’৭১-এর স্মৃতিতে ফিরে যায়। পরে ওইসব হাড়গোড় তুলে সংরক্ষণ করা হয়।

জানা গেছে, একাত্তরে আহম্মদ নগর ছিল পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্প ও জল্লাদখানা। এখানে তৎকালের মুক্তিযোদ্ধাসহ সাধারণ নিরীহ মানুষকে ধরে এনে নির্বিচারে হত্যা করে আশপাশের ডোবায় ফেলে দিত বা মাটিতে পুঁতে রাখত। ফলে আহম্মদনগর স্থানীয় ইউপি পরিষদ ভবন, আহম্মদনগর উচ্চ বিদ্যালয়ের পুরোনোভবন, টেকনিক্যাল কলেজ ও তার আশেপাশের পুরোটাই একটা গণকবরে রূপ নেয় সে সময়ে। বিদ্যালয়ের একটি টর্চার সেলের বর্তমান বিজ্ঞানাগারটি আজও ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে ইতিহাসের নির্মম সাক্ষী হয়ে। পাশেই নির্মিত ডা. সেরাজুল ইসলাম টেকনিক্যাল কলেজের উত্তর পাশের পার্শ্ব রাস্তায় একটি কালভার্ট রয়েছে। ওই কালভার্টটি এক সময় কাঠের ছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরে ওই কাঠের ব্রিজের নিচে শত শত মানুষকে হত্যা করে পানিতে ফেলে দেয়া হতো। দেশ স্বাধীনের পর প্রায় ১০/১৫ বছর পর ওই খাল যখন শুকিয়ে মরে যায় তখন সেখানে স্থানীয়রা হাল চাষ দিতে গিয়ে অসংখ্য কঙ্কাল ও মাথার খুলি উদ্ধার করেছিল। এর কিছুদিন পর ওই কাঠের ব্রিজটি ভেঙে রড-সিমেন্টের ঢালাই ব্রিজের কাজ শুরু হয়। তখনও আরও একবার শত শত কঙ্কালের হাড়গোড় উদ্ধার করা হয় বলে জানায় স্থানীয়রা । তারা আরও জানায়, এখনও মাঝেমধ্যে ওই ব্রিজের নিচে মাটি খুঁড়তে গেলেই কঙ্কাল ও মাথার খুলির হাড়গোড়ের অংশ উঠে আসে। তবে সরকারিভাবে ওই হাড়গোড়ের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সংরক্ষণ করা উচিত বলে স্থানীয়রা দাবি তুলেছেন।

নির্মাণাধীন বধ্যভূমির ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ম্যান্সল্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের সাইড ইঞ্জিনিয়ার মনিরুজ্জামান বুলবুল জানান, কাজ শুরুর কয়েকদিন পর মাটির নিচ থেকে অসংখ্য হাড়গোড় ও মানুষের বিভিন্ন অঙ্গের ফসিল পাওয়া যাচ্ছে। তবে ফসিলগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়ায় তা সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিছু হাড়গোড় ও মাথার খুলি উদ্ধার করে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

এ ব্যপারে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূরুল ইসলাম হিরু জানান, বধ্যভূমির কাজ করতে গিয়ে ৭১-এ পাকিস্তানি সেনা ও স্থানীয় রাজাকারদের হাতে নির্মমভাবে হত্যা হওয়া শহিদদের কঙ্কালের ভগ্নাংশ বের হওয়ার খবর আমি জেনে তা সংরক্ষণের জন্য গণপূর্ত বিভাগকে অবগত করেছি।

এ বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জিল্লুর রহমান বলেন, বধ্যভূমির কাজ শুরু হলে মাটির নিচ থেকে চারটি মাথার খুলি, দুটি হাড় ও পাঁজরের হাড়সহ বেশকিছু হাড়গোড় উদ্ধার হয়। পরে সেগুলো পলিথিনে পেঁচিয়ে বাক্স বন্দি করে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের পরবর্তী নির্দেশে হাড়গোড়গুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ২১:৩২ | বুধবার, ১৯ জানুয়ারি ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com