বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

হলি আর্টিসান হামলার ৬ বছর আজ, সেদিন যা ঘটেছিল

  |   শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২ | প্রিন্ট

হলি আর্টিসান হামলার ৬ বছর আজ, সেদিন যা ঘটেছিল

রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলা ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ছয় বছর শেষ হলো আজ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে জঙ্গি হামলায় ১৭ জন বিদেশিসহ নিহত হন মোট ২৪ জন। সেদিন জঙ্গিদের গুলি ও বোমায় আহত হয়েছিলেন আরো অনেকে।

 

সেদিন কয়েকবার প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও স্পর্শকাতর বিবেচনায় রাতে হলি আর্টিসানে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরদিন সকালে সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো সদস্যদের পরিচালিত ‘অপারেশন থান্ডারবোল্টে’ অবসান হয় জিম্মিদশার, নিহত হয় হামলাকারী পাঁচ জঙ্গি।

সেদিন যা ঘটেছিল

২০১৬ সালের ১লা জুলাই দিনটি ছিল শুক্রবার। সন্ধ্যায় হঠাৎ গুলশানে ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে’ পুলিশের গোলাগুলির খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সবাই জেনে যায়, গুলশানের এক রেস্তোরাঁয় সশস্ত্র হামলাকারী ঢুকে বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করেছে।

 

কিন্তু ঘটনাটা আসলে কী? গুজব নাকি সত্য- সেটি নিশ্চিত হতেও ঘণ্টাখানেক সময় চলে গেল। পরে জানা গেল, হামলাকারীরা ওই রেস্তোরাঁয় থাকা বিদেশি নাগরিকসহ বেশ কয়েকজনকে জিম্মি করেছে। এক পর্যায়ে জানা যায়, গুলশান ৭৯ নম্বর সড়কের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে।

 

জিম্মি সংকটের ঘটনায় ১ জুলাই সন্ধ্যারাত থেকে দিবাগত সারারাত অর্থাৎ ২ জুলাই সারা বিশ্বের গণমাধ্যমের নজর ছিল ঢাকার অভিজাত গুলশান এলাকায় অবস্থিত হোলি আর্টিসানের দিকে।

 

সেদিন এই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। রাত ৯টা ২০ মিনিটে ঘটনাস্থলে গোলাগুলির শব্দ শুনতে পান প্রত্যক্ষদর্শীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে গোলাগুলিতে আহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে।

 

রাত ১০টার দিকে পুলিশ ও র‌্যাবের কয়েকশো সদস্য ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান নেয়। গণমাধ্যম কর্মীরাও ৭৯নং রোডের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থান নেন। রাত সোয়া ১১টার দিকে হাসপাতালে মারা যান বনানী থানার ওসি মোহাম্মদ সালাউদ্দীন। এর কিছুক্ষণ পরই ডিবির সহকারী কমিশনার (এসি) মো. রবিউল করিম নিহত হন।

 

রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে তৎকালীন র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, হলি আর্টিসানের ভেতরে অন্তত ২০ জন বিদেশিসহ কয়েকজন বাংলাদেশিও আটকা পড়েছেন। ভেতরে যারা আছেন, তাদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য তারা বিপথগামীদের সঙ্গে কথা বলতে চান।

হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ। ছবি: সংগৃহীত

হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁ। ছবি: সংগৃহীত

রাত ৪টা পর্যন্ত অস্ত্রধারীদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ স্থাপন করতে পারেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

রাতেই ইসলামিক স্টেট জঙ্গি গোষ্ঠী তাদের বার্তা সংস্থা বলে পরিচিত ‘আমাক’ এ গুলশান হামলার দায় স্বীকার করে ২০ জন নিহত হওয়ার কথা জানায়। আইএস এর পক্ষ থেকে হামলাকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে তাদের ‘সৈনিক’ বলে দাবি করে, হামলার দায় নেয় তারা।

 

২ জুলাই সকাল ৭টা ৩০ মিনিট। রাতভর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র‌্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়।

 

সকাল ৭টা ৪৫ মিনিট, কমান্ডো বাহিনী অভিযান শুরু করে। অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত দলের সদস্যরা রেস্তোরাঁর ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।

 

সকাল সোয়া ৮টায় রেস্টুরেন্ট থেকে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ছয় জনকে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পাশের একটি ভবন থেকে একজন বিদেশি নাগরিক তার মোবাইল ফোনে সেটি ধারণ করেন।

 

৮টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা। গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই আলামত সংগ্রহের কাজ শুরু করে গোয়েন্দারা।

 

৯টা ১৫ মিনিটে অভিযান শেষ হয়। কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্তোরাঁয় প্রায় ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়।

‘থান্ডারবোল্ট’ নামে সেনাবাহিনীর কমান্ডোরা যে অভিযান চালায় সেখানে জঙ্গি হামলায় সরাসরি অংশ নেওয়া পাঁচ তরুণের সবাই মারা পড়েন। তারা হলেন- মীর সামেহ মোবাশ্বের, রোহান ইবনে ইমতিয়াজ ওরফে মামুন, নিবরাজ ইসলাম, খায়রুল ইসলাম পায়েল ও শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

 

সকাল ১০টায় ৪ জন বিদেশিসহ ১৩ জন জীবিত উদ্ধারের খবর জানানো হয়। রেস্তোরাঁর ভেতরে অজ্ঞাত পাঁচজনের মরদেহ পাওয়ার কথা পুলিশ জানায়।

বেলা ১১টা ৫০ মিনিট: অভিযানে জঙ্গিদের ৬ জন নিহত এবং একজন ধরা পড়েছে বলে নিশ্চিত করা হয়।

নিহত হয়েছিলেন যারা।

নিহত হয়েছিলেন যারা।

নিহত হয়েছিলেন যারা

এই হামলায় ২৪ জন নিহত হন। এর মধ্যে নয়জন ইতালির নাগরিক, সাতজন জাপানি ও একজন ভারতীয় নাগরিক। এছাড়া একজন বাংলাদেশ-আমেরিকার দ্বৈত নাগরিক, দুজন সাধারণ নাগরিক, হলি আর্টিসানের দুই কর্মচারী ও দুই পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন। এছাড়া পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়।

 

হলি আর্টিসানে নৃশংস জঙ্গি হামলার ছয় বছরেও শেষ হয়নি মামলার বিচার প্রক্রিয়া। ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর এই মামলায় ৭ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও একজনকে বেকসুর খালাসের রায় দেন আদালত। এরপর আসামিরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে, আর রায়ে খালাস পাওয়া একজনের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- হামলার মূল সমন্বয়ক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।

সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:১৫ | শুক্রবার, ০১ জুলাই ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com