বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

স্যালাইন দিয়ে ভারতের হাজারো মানুষকে করোনার ভুয়া টিকা

  |   বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট

স্যালাইন দিয়ে ভারতের হাজারো মানুষকে করোনার ভুয়া টিকা

সম্প্রতি ভারতের মুম্বাই ও কলকাতার মতো শহরে নকল টিকাদান কর্মসূচি দেখে গোটা ভারত স্তম্ভিত হয়ে গেছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, কোভিড টিকা পেতে মরিয়া কয়েক হাজার মানুষ এই ভুয়া টিকাদান কর্মসূচির শিকার হয়েছেন।

 

পশ্চিমবঙ্গে দেবাঞ্জন দেব নামে এক নকল আইএএস অফিসার ২ হাজার মানুষকে ভুয়া টিকা দিয়েছেন। টিকাগ্রহীতাদের তালিকায় আছেন একজন সাংসদও।

 

ভারতীয় অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র মুম্বাই শহর ও তার আশেপাশে অন্তত ১২টি ভুয়া টিকাদান কর্মসূচী জব্দ করার কথা জানিয়েছে সিএনএন।

 

মুম্বাই পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তা বিশাল ঠাকুর জানান, টিকার নামে ভোক্তভোগীদের স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

 

সিএনএনের কাছে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তারা স্যালাইন পানি ব্যবহার করে ইনজেকশন দিয়ে আসছিলো।

 

পুলিশ যতগুলো ভুয়া টিকাদান কেন্দ্র শনাক্ত করেছে সব জায়গাতেই টিকার নামে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

মুম্বাইয়ে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার আয়োজনে নয়টি অননুমোদিত টিকাদান শিবিরে কমপক্ষে ২০৫৩ জন মানুষকে ভুয়া কোভিড টিকা দেওয়া হয়েছে।

 

পুলিশ জানতে পেরেছে যে কোভিশিল্ড ও কোভ্যাক্সিনের লেবেল সাঁটা সবগুলো ভ্যাকসিনের শিশিই নকল। ওগুলোর ভেতর ছিল আমিকাচিন- ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ সারানোর অ্যান্টিবায়োটিক।

 

এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দেবের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগও আনা হয়েছে।

ঘটনার নেপথ্যে

 

এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ‘এই জাল টিকাদান শিবিরের সঙ্গে একটি সুসংগঠিত চক্র জড়িত। এখন থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’

 

সরকার অবশ্য এসব জালিয়াতিকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে কেলেঙ্কারিগুলোকে ধামাচাপা দিতে চেষ্টা করছে।

 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব লাভ আগারওয়াল বলেন, ‘আমরা ৩৩ কোটির বেশি লোককে টিকা দিয়েছি। কোউইন অ্যাপ থেকে আপনার কাছে কোনো মেসেজ না গেলেই এ ধরনের জালিয়াতি আপনি ধরে ফেলতে পারবেন। যে রাজ্য কর্তৃপক্ষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ রাখছি।’

 

পশ্চিমবঙ্গ সরকার বেসরকারি ও সরকারি হাসপাতাল ছাড়া আর সব জায়গার টিকাদান কেন্দ্র বাজেয়াপ্ত করে দিয়েছে। রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তর টিকাদান শিবিরের নির্দেশনাবলি আবার যাচাই-বাছাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

 

কলকাতার এক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডয়েচে ভেলেকে বলেছেন, ‘এসব ঘটনা মানুষকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। খুব সতর্কতার সঙ্গে এই টিকাদান শিবিরগুলো ফের চালু করতে হবে।’

টিকাদানে ধীরগতি

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন টিকা উৎপাদনের ধীরগতি এবং সরকারের অ্যাপের মাধ্যমে টিকা গ্রহণের দীর্ঘ যন্ত্রণাদায়ক পদ্ধতির কারণে মানুষ হতাশ হয়ে পড়ছে। এ হতাশাকে টাকা কামানোর সুযোগ হিসেবে নিয়েছে অপরাধীরা।

 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে যে ৩০ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হবে, তাদের জন্য কমপক্ষে ১ লক্ষ ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টিকাদান কেন্দ্র, ১ লক্ষেরও বেশি পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মী এবং ২ লক্ষ সহায়ক কর্মী প্রয়োজন।

 

দীর্ঘদিনের সমস্যা

 

কম্পিউটার সফটওয়্যার সংস্থা ম্যাকাফির তথ্যানুসারে, ভুয়া অ্যাপের মাধ্যমে মানুষকে টিকা দেওয়ার প্রলোভন দেখানোর জন্য যেসব দেশকে টার্গেট করা হয়েছে, সেগুলোর মধে শীর্ষে আছে ভারত ও চিলি।

 

গত এপ্রিলের এক প্রতিবেদনে কোম্পানিটি বলেছে, সাইবার-অপরাধীরা ভুয়া অ্যাপ, টেক্সট মেসেজ ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘ইনভাইটেশনের’ মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে টিকা নেওয়ার জন্য উদগ্রীব মানুষদের প্রলুব্ধ করছে।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, নিরাপদ টিকাদান নিশ্চিত করার জন্য কর্তৃপক্ষ, সরবরাহকারী, ভ্যাকসিন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ও টিকাগ্রহীতাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

ভুয়া টিকা ছাড়াও কোভিডের নকল ওষুধও ছড়িয়ে পড়েছে সারা ভারতে। একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৯ সালে ভারতে বিক্রি হওয়া মোট ওষুধপণ্যের ২০ শতাংশই ভুয়া ছিল।

 

সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের ২০১৫ সালের সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে জেনেরিক ড্রাগের ৪.৫ শতাংশই হয় নকল নয়তো নিম্নমানের।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে ও সিএনএন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৫৫ | বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com