চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুণ্ডে গ্রাহকের কোটি টাকা আত্মসাত করেছে “আল-আমানত”নামের একটি প্রতিষ্ঠান। জানা যায়, ২০০০ সালে ‘পন্থিছিলা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার’ শিক্ষক মো. মুছা মিয়া ‘আল আমানত’ নামে একটি বহুমুখী সমবায় সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৫ সালে কয়েক হাজার সদস্য নিয়ে উপজেলা সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন নিয়ে সঞ্চয় ও ঋণদান ছাড়াও অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে রমরমা হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটি। সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। সমস্যা শুরু হয় সমিতির পরিচালক মুছা মিয়ার মৃত্যুর পর। ২০১৭ সালে মুছা মিয়ার আকস্মিক মৃত্যুতে স্থবির হয়ে পড়ে সমিতির কার্যক্রম। স্বামীর মৃত্যুর পর পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠান টির দায়িত্ব বুঝে নেন স্ত্রী রুবিনা ইয়াসমিন। জানা যায়,তিনি মাঠকর্মীদের অসহযোগিতা ,অফিসের চাপ ও পারিবারিক অশান্তি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন । এরই জেরে ২০২০ সালে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন রুবিনা। এরপর হাসপাতালের আইসিইউতে ১৫ দিন পর মৃত্যুবরণ করেন তিনি।ফলে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্হাপনা ভেঙ্গে পড়ে সেই সময়েই সমিতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রন চলে যায় সংশ্লিষ্ঠ মাঠ কর্মীদের হাতে।
এরই সুযোগে কয়েকজন মাঠকর্মী প্রায় কোটি টাকার উপরে হাতিয়ে নেয়। পরিচালক রুবিনার মৃত্যুর পর আমানতকারীরা তার বড় ছেলে মোশারফ হোসেনকে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকলে তিনি মাঠকর্মীদের কাছে হিসাব দেখতে চান। মাঠকর্মীদের দুইজন হিসাব দিলেও বাকি তিনজন কর্মী হিসাব দিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে মোশারফ হোসেন উপজেলা সমবায় কর্মকর্তার শরণাপন্ন হন। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমিতির বিস্তারিত খোঁজখবর নিতে ও মাঠ কর্মীদের কাছ থেকে হিসাব নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই একে একে মাঠকর্মীদের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রকাশ পায়। এ দিকে পাওনা টাকার জন্য গ্রাহকদের অনেক কে উপজেলা সমবায় অফিসে ধর্না দিতে দেখা যায়।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা শহীদ উদ্দিন ভূইঁয়া বলেন, ‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনা অনুযায়ী সমিতির আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশের কাজ চলছে। আরও কিছু হিসাব বাকি রয়েছে। এর মধ্যে আমরা সমিতির দেনা পাঁচ কোটি টাকা ও পাওনা প্রায় ২ কোটি টাকার হিসাব পেয়েছি। এছাড়া কিছু টাকা ব্যাংকে জমা আছে। মৃত মুছা মিয়ার নামে কিছু সম্পদের খোঁজ পাওয়া গেছে সেসব বিক্রি করে গ্রাহকের টাকা সমন্বয়ের চেষ্টা করা হবে। আরব বাংলাদেশ ব্যাংকে সমিতির নামে ৭৪ লাখ টাকা ছিল। তা ইতিমধ্যে আমরা গ্রাহকদের মাঝে বিতরণ করেছি। নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘সমিতির দেনা পাওনা হিসাব করা হচ্ছে। মৃত মুছা মিয়া গ্রাহকের টাকা সমিতির নামে ব্যাংকে না রেখে তার মৃত স্ত্রীর নামের অ্যাকাউন্টে রাখেন। তার স্ত্রীও মারা যাওয়াতে টাকাগুলো পেতে আদালতের আদেশ প্রয়োজন। এ নিয়ে প্রসেসিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। এদিক থেকে যা টাকা পাওয়া যাবে আনুপাতিক হারে পাওনাদারদের মধ্যে তা বিতরণ করা হবে। এছাড়া মাঠকর্মীসহ যাদের কাছে টাকা পাওনা রয়েছে তা আদায়ের জন্য ইতিমধ্যে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
Like this:
Like Loading...
Related