বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিরিয়াল ধর্ষক সাইফুলের মুখে লোমহর্ষক বর্ণনা

  |   শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

সিরিয়াল ধর্ষক সাইফুলের মুখে লোমহর্ষক বর্ণনা

4-1

স্বাধীনদেশ অনলাইন ডেস্ক :  বছর দু’য়েক আগে কবিরাজ হিসেবে দীক্ষা নেয় সাইফুল। কুমারী মেয়েদের ছাড়া কোনো চিকিৎসায় কার্যসিদ্ধি হবে না, এমনটাই থাকতো তার কবিরাজির মূল শর্ত। শর্ত অনুযায়ী, অল্প বয়সী কুমারী মেয়ে ছাড়া কোনো ধরনের চিকিৎসায় হাত দিতো না সে। এমনকি সেই কুমারী মেয়ে যদি আঠারোর্ধ্ব হতো, তাহলেও চলতো না। লোক দেখানোর জন্য কুমারী মেয়েদের দিয়ে সে পুকুর থেকে পানি আনাতো।

তাদের দিয়ে নানা রকম ভোজবাজির খেল দেখাতো। তার এই ভোজবাজির মারপ্যাঁচে বিভ্রান্ত হতো সাধারণ মানুষ। রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্যের আশায় কবিরাজ সাইফুলের হাতে তারা তুলে দিতো কুমারী মেয়েদের। ধর্ষণের এমন ফাঁদ পেতে এক পর্যায়ে কিশোরী মেয়েদের সর্বস্ব লুটে নিতো। কবিরাজি বিদ্যাকে হাতিয়ার করে সাইফুল হয়ে ওঠে এক ভয়ঙ্কর সিরিয়াল ধর্ষক।

বুধবার জামালপুর সদরের নূনদহ এলাকা থেকে কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশের অভিযানে আটক হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে এমন বর্ণনা দিয়েছে সোহাগ ওরফে সাইফুল (৩০) নামের সিরিয়াল এই ধর্ষক।

সাইফুল জানায়, তার বাড়ি হোসেনপুর উপজেলার কুড়িমারা গ্রামে। তাকে গর্ভে রেখেই বাবা মারা যায়। প্রসবের কিছু দিন পর মারা যায় মা। সেই সময়ে তাকে পালিত পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেন কুড়িমারা গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য আবদুর রশীদ। পালক পিতা আবদুর রশীদের পুত্রস্নেহে বড় হয় সাইফুল। কিন্তু ২০০১ সালে হোসেনপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর অন্য সন্তানদের চাপে তার লেখাপড়া বন্ধ করে দেন পালক পিতা আবদুর রশীদ। এর পরেই শুরু হয় সাইফুলের ছন্নছাড়া জীবন। ভাগ্যান্বেষণে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরার এক পর্যায়ে পরিচয় হয় টাঙ্গাইল মধূপুরের মেয়ে শিল্পীর সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম এবং পরিণয়। শুরু হয় নতুন জীবন। জীবিকার তাগিদে এক সময় সে নাম লেখায় পরিবহন শ্রমিক হিসাবে। পরবর্তিতে বাসচালক হিসেবে বিভিন্ন রুটে কাজ শুরু করে। সাইফুল-শিল্পীর সংসারের দু’টি ছেলে সন্তানও রয়েছে।

এ অবস্থায় কুড়িমার গ্রামের এক কবিরাজ দাদার সংস্পর্শে কবিরাজি বিদ্যায় হাতেখড়ি হয় তার। পরবর্তীতে কিশোরগঞ্জ সদরের মুকসেদপুর এলাকার কবিরাজ রোকন মুন্সী ও আজিজুল হকের সংস্পর্শে আসে। বিভিন্ন এলাকায় কবিরাজদের সঙ্গে ওঠাবসা করতে গিয়ে সে কুফুরী-কালাম আত্মস্থ করে। এ সময়ে তার বেশ কিছু সঙ্গী-সাগরেদও জুটে যায়। নানা কৌশলে আস্থা অর্জন করতে থাকে সাধারণ মানুষের। ফলে খুব সহজেই নিজের কামনা-বাসনাকে পূরণ করার সুযোগ পেয়ে যায় সে। কবিরাজির এই ছদ্মবেশে তার লোলুপ দৃষ্টি পড়ে কুমারী মেয়েদের দিকে। নিজের এলাকা ছাড়াও কিশোরগঞ্জ, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় কবিরাজির আড়ালে চলে নারীলিপ্সু এই যুবকের তৎপরতা।

কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার লতিফপুর, হোসেনপুরের গোবিন্দপুর, ময়মনসিংহ সদরের আকুয়া, নান্দাইলের বাঁশহাটি, মুক্তাগাছার উচাখলা, ঈশ্বরগঞ্জের আঠারোবাড়ি ও উঁচাখিলা, ফুলবাড়িয়ার দাপুনিয়া ও কড়ইতলা এবং জামালপুরের নূনদহ এলাকায় কবিরাজি করতে গিয়ে তার ধর্ষণের শিকার হয়েছে অন্তত ১০ কুমারী মেয়ে।

সাইফুল জানায়, এই যৌনাচারেই সে আনন্দ খুঁজে পেতো। এর টানেই কবিরাজি করতে সে ছুটে বেড়িয়েছে দেশের নানা জায়গায়। ধর্ষণ করার আগে কুমারী মেয়েদের বুকে কোরআন শরীফ দেয়া হতো। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি কাউকে জানাবে না, কোরআন শরীফ ছুঁয়ে এমন শপথ করানো হতো কুমারীকে। ফলে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার কোন আশঙ্কা থাকতো না। কিন্তু তার এই ধারণাকে মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে গত ৬ই ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানায় অষ্টম শ্রেণীর এক মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে ভিকটিমের মা মামলা করেন।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, মানসিক বিকারগ্রস্ত এক নারীর চিকিৎসার জন্য সাইফুল সম্প্রতি সদরের লতিফপুর গ্রামের দুলাল মিয়ার বাড়িতে অবস্থান নেয়। তিন/চার দিন ঝাড়ফুঁক করার পর কবিরাজ সাইফুল রোগীর স্বামী দুলাল মিয়াকে জানায়, তার স্ত্রীকে সম্পূর্ণরূপে সুস্থ করতে হলে কুফুরীর মাধ্যমে একজন কুমারী মেয়েকে ধর্ষণ করতে হবে। এই ভ্রান্ত ধারণায় বিশ্বাস করে গত ২রা ফেব্রুয়ারি রাতে দুলাল মিয়া প্রতিবেশী অষ্টম শ্রেণীর মাদরাসা ছাত্রীকে তার ঘরে ডেকে নিয়ে আসে। পরে ওই ছাত্রীকে সাইফুল ধর্ষণ করে। পরের দিন ৩রা ফেব্রুয়ারি রাতেও একইভাবে মাদরাসা ছাত্রীকে সাইফুল ধর্ষণ করে গ্রাম থেকে চলে যায়। ধর্ষণের শিকার মাদরাসা ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারকে বিষয়টি জানায়। পরে স্বজনেরা তাকে কিশোরগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই অজিত কুমার সরকার জানান, কবিরাজির নামে মাদরাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনাটির সত্যতা পাওয়া যাওয়ায় অভিযুক্ত সোহাগ ওরফে সাইফুলকে ধরতে পুলিশ তৎপরতা শুরু করে। কিন্তু ধূর্ত সাইফুলের খোঁজ পাওয়া ছিল সত্যিই এক দুরূহ ব্যাপারে। কিন্তু সাইফুলকে ধরার ব্যাপারে পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খাঁন, পিপিএম এর কড়া নির্দেশনা ছিল। তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন মাধ্যমের ব্যবহার করে সাইফুলের অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে বুধবার ভোর রাতে জামালপুর সদরের নূনদহ এলাকায় অভিযান চালান। পরে সেখানকার একটি বাড়ি থেকে সাইফুলকে আটক করা হয়। গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে পাঠানো হলে সে ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পরে তাকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:০৩ | শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com