শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিন্ডিকেটের খপ্পরে গরিবের হক

  |   শনিবার, ২৫ আগস্ট ২০১৮ | প্রিন্ট

সিন্ডিকেটের খপ্পরে গরিবের হক

ডেস্ক রিপোর্ট : প্রভাবশালী সংঘবদ্ধ চক্রের কারণে কোরবানির পশুর চামড়ার দরে এবার ধস নেমেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের লাখ লাখ কোরবানিদাতার পাশাপাশি হাজারো চামড়া সংগ্রহকারী। তারা এ জন্য আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের দোষ দিচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার রাজধানীর চামড়ার বাজার পোস্তা ও লালবাগের চামড়া ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে পাওয়া যায় প্রায় পানির দরে চামড়া বেচাকেনার তথ্য। ঢাকার বাইরে থেকেও আমাদের প্রতিনিধিরা একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন। সবারই অভিযোগ, এমনকি সরকারি দরও অনুসরণ করেনি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট। ক্ষতির জন্য মাঠপর্যায়ের ক্ষুদ্র ক্রেতারা দুষছে আড়তদারদের, আর আড়তদাররা বলছে তাদের হাত-পা বাঁধা ট্যানারি মালিকদের কাছে। বিশেষজ্ঞরাও এই পরিস্থিতির জন্য ট্যানারি মালিকদের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে পোস্তায় চামড়া বিক্রি করতে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রফিজ উদ্দিন বলেন, ট্যানারি মালিক ও কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে গত ১০-১৫ বছরের মধ্যে এবারই তিনি সর্বনিম্ন মূল্যে কাঁচা চামড়া বিক্রি করেছেন। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তাঁরা যে দামে চামড়া কিনেছেন, আড়তদারদের কাছে এর চেয়ে প্রায় অর্ধেক দামে চামড়া বিক্রি করতে হয়েছে। প্রতিবছর কোরবানির সময় সাধারণ মানুষের কাছ থেকে চামড়া কিনে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করেন শান্তিনগরের বাসিন্দা মোহাম্মদ হেলাল মিয়া। তিনি  বলেন, ‘একেকটা গরুর চামড়া কিনছি ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। আড়তদাররা সেই চামড়ার দাম ৫০০ টাকার বেশি দিতে চায় না। কী করব, ঠিক বুঝতে পরছি না।’ লালবাগে কথা হয় মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী মিরপুরের বাসিন্দা মো. মোর্শেদ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এক বড় ভাইয়ের পরামর্শে ১০০টির মতো চামড়া কিনেছি। যে দামে কিনছি, তার অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

পোস্তগোলার আড়তদার মো. সোলায়মান বলেন, ‘চামড়া সংগ্রহকারীরা বাড়তি দাম চাইলে তা দেওয়া সম্ভব না। ট্যানারির মালিকরা কত দিয়ে চামড়া কিনবে তা আগেই জানিয়েছে। এবারে কেনা আর বেচায় পার্থক্য এত কম যে কোনো লাভ থাকছে না।’

পোস্তার কাঁচা চামড়ার আড়তদার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব টিপু সুলতান বলেন, ‘ট্যানারি মালিকদের কাছে বকেয়া টাকা আটকে থাকায় আমরা এবার সরকারি দামে চামড়া কিনতে পারিনি। এ ছাড়া ট্যানারি মালিকরা আমাদের টাকা না দিয়ে সরাসরি নিজেদের মানুষ দিয়ে চামড়া সংগ্রহ করছে। এতেও বাজারে এমন নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।’ তিনি জানান, পোস্তার বাজারের খুচরা ক্রেতাদের প্রায় ১৫০ কোটি টাকা বকেয়া পাওনা আছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। ১০-১২ বছর ধরে তারা এ টাকা আটকে রেখেছে। এর ফলে তিন থেকে সাড়ে তিন শ আড়তদার এবং এর সঙ্গে কয়েক হাজার ব্যবসায়ী এবার সংকটে পড়েছে। মাঠপর্যায়ে চামড়ার দর সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতি পিস মাঝারি চামড়া কিনেছে ৫০০ টাকায় (২০-২২ বর্গফুট)। সর্বোচ্চ বড় চামড়া কিনেছে এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেন, টাকার অভাবে এবার চামড়ার বাজারে এমন ধস নেমেছে। কয়েক বছর ধরে ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের তিন থেকে সাড়ে তিন শ কোটি টাকা আটকে ফেলেছে।

সিন্ডিকেট করার অভিযোগ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, চামড়ার দরপতনে সরাসরি ট্যানারি মালিকদের কিছুুই করার থাকে না। তিনি বলেন, প্রথমে পাড়া-মহল্লায় কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনে ফড়িয়াদের কাছে বিক্রি করে। ফড়িয়ারা বিক্রি করে আড়তদারদের কাছে। কিন্তু ফড়িয়ারা ঠিক নিয়মে চামড়া সংরক্ষণ না করে নিজেরা কম দামে চামড়া বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ‘সরকারি দাম অনুসারে আমরা চামড়া কিনি এবং অনেক সময় একটু বেশি দাম দিয়েও কিনে থাকি।’ আড়তদারদের টাকা আটকে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘টাকা বকেয়া রাখা ব্যবসায় নতুন কিছু নয়। এ ছাড়া সাভারের ট্যানারিপল্লীতে ১৫০ ট্যানারির মধ্যে মাত্র ৫০টি কারখানা উৎপাদনে যেতে পেরেছে। যেসব ট্যানারি উৎপাদনে যেতে পারেনি, ওই সব ট্যানারি ব্যাংকঋণও পায়নি। এবার মাত্র ৪২টি প্রতিষ্ঠান ঋণ পেয়েছে। ফলে বাজারে নগদ টাকার একটি সংকট ছিল।’ আড়তদার ছাড়াও সরাসরি চামড়া কিনছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিবছরই কিছু কিছু এতিমখানা থেকে চামড়া কিনি। এরা সারা বছরই আমাদের কাছ থেকে টাকা নেয়। বছর শেষে কিছু চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এটা খুব বেশি নয়। মাত্র ২-৩ শতাংশ।’

বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের প্রধান ক্রেতাদের অন্যতম চীন। এবারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আরোপ নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। চীন কম দামে পণ্য কেনার আলটিমেটাম দিয়েছে। তাই কোনোভাবেই নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে কাঁচা চামড়া কেনা সম্ভব নয়। এ ছাড়া নতুন ট্যানারি নির্মাণ করায় পুঁজির সংকটে আছে ট্যানারি মালিকরা। এবারে ৪২টি ট্যানারি কাঁচা চামড়া কিনতে ৬০১ কোটি টাকা ব্যাংকঋণ পেয়েছে। বাকিরা কী করবে?’

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘প্রতিবছরই ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া কমে কিনতে চেষ্টা করে। অর্থসংকট থাকে তাদের বড় ইস্যু। অথচ সরকার প্রতিবছর ব্যবসায়ীদের ঈদুল আজহায় গড়ে ৫০০ কোটি টাকার ব্যাংকঋণ দেয়। সাভারে কারখানা নির্মাণেও আর্থিক সহযোগিতা করেছে। তাই অজুহাতগুলো সম্পূর্ণ সঠিক নয়।’ শিল্প খাতের এ বিশ্লেষক বলেন, ‘কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রিতে একটি চেন আছে। ট্যানারির মালিকরা দাম কম দিলে অন্যরাও কম দিতে বাধ্য হয়। তবে ট্যানারি মালিকরা বিশ্ববাজারে ভালো দামে বিক্রি করে মোটা অঙ্কের বাণিজ্য করলেও আড়তদার, চামড়া সংগ্রহকারী, যিনি পশু কোরবানি করছেন তাদের সে সুযাগ থাকে না। কোরবানির পশুর দাম কমালে তাদের লাভও কমে যায়।’

গত বছর কোরবানিতে রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৫০-৫৫ টাকা, রাজধানীর বাইরে ৪০-৪৫ টাকা, প্রতি বর্গফুট খাসির চামড়া ২০-২২ টাকা ও বকরির চামড়া ১৫-১৭ টাকায় কিনেছে তারা। এবার গরুর চামড়া ১০ টাকা করে এবং খাসি ও বকরির চামড়া চার টাকা করে প্রতি বর্গফুটে কমানো হয়। গত বছরও আগের বছরের তুলনায় চামড়ার দাম কমানো হয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় তলানির দিকে আসছে মাঠপর্যায়ে চামড়ার দর।

বগুড়া : বগুড়া জেলা চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন সরকার বলেন, ঢাকায় ট্যানারি স্থানান্তরপ্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ায় জেলাপর্যায়ের ব্যবসায়ীদের টাকা ট্যানারি মালিকরা আটকে রেখেছেন। এবার চামড়ার বাজার ধসের এটাই মূল কারণ। আবু হানিফ নামের একজন চামড়া ক্রেতা জানান, তিনি বগুড়ায় লাখ থেকে ওপরে কেনা দামের ষাঁড়ের চামড়া গ্রাম-পাড়া ও মহল্লা থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা দিয়ে কিনেছেন। আর এর কমে কেনা ষাঁড়ের চামড়া কিনেছেন প্রতি পিস ৩০০-৬০০ টাকা হিসেবে। আর ছাগলের চামড়া ১০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০ টাকা প্রতি পিস কিনেছেন। হানিফ জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে চামড়া কেনা-বেচার সঙ্গে যুক্ত। এত কম দামে চামড়া কোনো বছরই ছিল না।

গত ৯ আগস্ট ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এক বৈঠকে সারা দেশে কোরবানির পশুর চমড়ার দর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। সেখানে ঢাকার বাইরে গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ এবং ছাগলের চামড়া ১৮ থেকে ২০ টাকা বর্গফুট নির্ধারণ করা হয়। সেই হিসাবে একটি ছোট গরুর চামড়ার দাম অন্তত এক হাজার ২০০ টাকা এবং ছাগলের চামড়া সর্বনিম্ন ১৮০ টাকা হওয়ার কথা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও সমালোচনা হচ্ছে। মন্তব্য হচ্ছে—‘গরিবের হক মেরে খাওয়ার জন্যই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চামড়ার দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ অনেকে লিখেছেন, শহরের মূল মোকামে রিকশায় করে এসে ২০ টাকায় ছাগলের চামড়া বিক্রি করে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন।

খুলনা : খুলনায় সরকার নির্ধারিত দাম তো দূরের কথা, লাখ টাকার গরুর চামড়া বিক্রি হচ্ছে মাত্র ২০০ টাকা। শেখপাড়া বাজারে চামড়া বিক্রি করতে আসা হামিদুর রহমান জানান, তিনি দেড় লাখ টাকার গরু কোরবানি দিয়েছেন। নেই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৫০০ টাকা। মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ইব্রাহিম বলেন, ‘এবার চামড়ার দাম কম হবে ধারণা করেছি। কিন্তু তাই বলে ১০০ টাকায় চামড়া বিক্রি হবে তা বুঝিনি। ২০০ টাকা দরে চামড়া কিনে ১০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’ খুলনার চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সালাম ঢালী বলেন, চামড়ার দাম কম হওয়ায় ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

রাজবাড়ী : সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে ২১টি গরু এবং ১২টি ছাগলের চামড়া কিনেছিলেন মৌসুমি ব্যবসায়ী লোকমান জমাদার। তিনি বলেন, কিছু লাভের আশায় তাঁরা চারজন চামড়াগুলো কিনেছেন প্রায় ২৬ হাজার টাকায়। জেলা শহরের চামড়া ক্রেতাদের কাছে আনতেই দাম বলে ২২ হাজার টাকা। বেশ কয়েকজন ক্রেতার কাছে ঘুরেও খুব বেশি লাভ হয়নি। একজন ক্রেতা শুধু বলেন ২৩ হাজার টাকা। এই টাকায় বিক্রি করেও তিন হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে তাঁদের। সদর উপজেলার বসন্তপুর থেকে আসা মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জাফর খান বলেন, তাঁরা দুজন প্রায় ৫০ হাজার টাকার চামড়া কিনেছিলেন। দুই হাজার টাকা ক্ষতিতে বিক্রি করতে হয়েছে।

অপর ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম বলেন, দুই বছর ধরে রাজবাড়ীর ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে চামড়া ক্রয় করছে। ওই ব্যবসায়ীদের নিযুক্ত ফড়িয়ারা সরকার নির্ধারিত দরের কোনো ধার ধারছে না। তবে ফরিয়া শংকর রবি দাস বলেন, তাঁদের কিছু করার নেই। মহাজন তাঁদের যে দামে চামড়া কিনতে নির্দেশ নিয়েছেন তিনি ও তাঁর সহযোগীরা সেই দামেই চামড়া কিনছেন।

রংপুর : নগরীর বাহাদুর সিংহ এলাকার শামসুল আরেফিন বলেন, তাঁর ৩০ হাজার টাকা দামের গরুর চামড়া গত দুই দিনে দামও করতে আসেনি কেউ। শেষ পর্যন্ত তিনি এমনিতে ওই চামড়া মৌসুমি ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিয়েছেন। বুড়িরহাট এলাকার মমিনুর আলম বলেন, তিনি ২৪ হাজার টাকার গরুর চামড়া বিক্রি করেন ১৫০ টাকায়। এলাকার মৌসুমি পশুর চামড়া ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন ও আব্দুস সামাদ বলেন, গ্রামে গ্রামে ঘুরে ৫০ পিস গরুর চামড়া কিনে মাথায় হাত পড়েছে। ৫০টি গরুর চামড়া গড়ে প্রতিটি ৪০০ টাকা করে ২০ হাজার টাকায় তাঁরা কেনেন। বাজারে পাইকাররা দাম বলছে এর অর্ধেকের একটু বেশি। তা ছাড়া চামড়া ভালো রাখার একমাত্র উপকরণ লবণের দামও চড়া বলে জানান তাঁরা।

গতকাল রংপুর বাস টার্মিনাল রোডে চামড়াপট্টিতে কথা হয় রংপুর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ খানের সঙ্গে। তিনি জানান, ট্যানারি মালিকদের কারণে আজ চামড়া ব্যবসা ধ্বংসের পথে। তিনি বলেন, ‘আমরা কী করব ভাই, ঢাকার ট্যানারি মালিকরা তিন বছর ধরে বকেয়া টাকা দিচ্ছেন না। আগের বছরগুলোতে দেওয়া চামড়ার বিপরীতে তাঁরা মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ টাকা পরিশোধ করেছেন। বাকি টাকা কবে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত। রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের তিন শতাধিক ব্যবসায়ীর প্রায় ২০০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের ট্যানারিগুলোতে। এভাবেই ট্যানারিগুলো বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে।’

সিলেট : পুঁজির সংকট এবং বকেয়া টাকা আটকে যাওয়ায় সিলেটে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক চামড়াও সংগ্রহ করতে পারেননি সিলেটের ব্যবসায়ীরা। কয়েক বছর ধরে চামড়া ব্যবসায়ীদের দুর্দিন চলছে বলে জানিয়ে সমিতির সভাপতি শাহিন আহমদ বলেন, সিলেটের তিন শতাধিক চামড়া ব্যবসায়ীর বেশির ভাগই এ বছর ক্ষতির আশঙ্কায় চামড়া কেনেননি। এই সুযোগে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কম দামে চামড়া কিনছে। এর পরও তারা লাভ করতে পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে। চামড়া ব্যবসায়ী ছমির উদ্দিন বলেন, ‘আড়তদারদের কাছে লাখ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে। এবার সামান্য টাকা পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় আড়তদাররা সময়মতো চামড়া না নিলে আমাদের মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। ব্যাংক ঋণ ও ধার-দেনার টাকায় কিছু চামড়া সংগ্রহ করেছি।’

বেনাপোল : বাংলাদেশের চামড়ার মান উন্নত বলে নিকট প্রতিবেশী দেশ ভারতেও পাচার করে থাকে সংঘবদ্ধ অপরাধীচক্র। জানা যায়, বাংলাদেশি চামড়ার সঙ্গে মিশিয়ে ভারতীয় চামড়া আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়। পাচারের অন্যতম রুট সীমান্ত জেলা যশোর।

তবে যশোর ২৬ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফুল হক বলেন, পাচার প্রতিরোধে সীমান্তে কড়া সতর্কতা বজায় রাখায় পাচারকারীরা এবার সুবিধা করতে পারেনি।

বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সালেহ মাসুদ করিম বলেন, চামড়া পাচার রোধে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে সীমান্তে কড়া নজর রাখা হয়েছে। গ্রাম পুলিশ, আনসারসহ সবাইকে সতর্ক করা হয়েছে যাতে একটি চামড়াও পাচার হতে না পারে।-কালের কণ্ঠ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:২২ | শনিবার, ২৫ আগস্ট ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com