শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘সব কিছুর দাম বেড়েছে, বাড়েনি মানুষের দাম

  |   সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট

‘সব কিছুর দাম বেড়েছে, বাড়েনি মানুষের দাম

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস বলেছেন, আমাদের বাংলাদেশ আজ অদ্ভুত এক দেশে পরিণত হয়েছে। এখানে ৪০ টাকা ডিমের হালি, তেলের দাম ১৮০ টাকা, ১২৬০ টাকা গ্যাসের চুলা, ৭০ টাকা চাল, ১২০ টাকা ডাল। সবকিছুর দাম বেড়েছে, শুধু বাড়েনি মানুষের দাম। একদিকে মানুষ দ্রব্যমূল্য নিয়ে দিশেহারা, আর সরকারের নেতা-পাতিনেতারা ব্যস্ত লুটপাটে। মফস্বলের ছাত্রলীগ নেতার অ্যাকাউন্টে পাওয়া যায় দুই হাজার কোটি টাকা।

তিনি সোমবার বিকালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির উদ্যোগে নগরীর পলোগ্রাউন্ড স্কুল সংলগ্ন মাঠে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।

মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় গেছে- তখনই তাদের নেতাকর্মীরা লুটপাট করেছে। ১৯৭৩-৭৪ সালে তারা যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল। গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলায় ৩৫ হাজার নেতাকর্মীকে খুন করেছিল। চারটি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা নিষিদ্ধ করেছিল। কোনো টেলিভিশন চ্যানেল ছিল না। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশে গণতন্ত্র এনে দিয়েছিল। কিন্তু সেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে আজকের আওয়ামী লীগ সরকারের কোনো তফাৎ নেই।

তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন জনগণের ভোটের মাধ্যমে। আর আজকের প্রধানমন্ত্রী তিনবার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জনগণের ভোটচুরি করে। এই সরকারের জনগণের প্রতি কোনো মায়া দয়া নেই। কারণ তাদের ভোটের প্রয়োজন নেই। যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকে, আপনারা আর কোনোদিন ভোট দিতে পারবেন না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যখন নির্বাচন হবে, সেদিনই বাংলার জনগণ ভোট দিতে পারবে। ইনশাল্লাহ বিএনপি সেদিন সরকার গঠন করবে। বিএনপি নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না।

মির্জা আব্বাস আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার সময় একটি সুন্দর বাংলাদেশ ছিল, গুম-খুন ছিল না, দ্রব্যমূল্য বাড়েনি। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হতো না। এই প্রধানমন্ত্রীর সময় গুম-খুন হচ্ছে। দেশটাকে লুটপাট করে খাচ্ছে। দেশের মানুষ কথা বলতে পারে না। কথা বললে গুম হয়ে যায়, খুন হয়ে যায়। বিএনপির নেতাকর্মী সবাইকে মামলা দেয়া হয়েছে। এই প্রধানমন্ত্রী থাকলে দেশে কোনোদিন গণতন্ত্র ফিরে আসবে না। আর গণতন্ত্র ফিরে না এলে আমাদের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব থাকবে না।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে দুই কোটি টাকার জন্য সাজা দেয়া হয়েছে। সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে চাই, দুই কোটি টাকা বেগম জিয়ার অ্যাকাউন্টে ছিল যদি প্রমাণ করতে পারেন; তাহলে রাজনীতি করব না। দুই কোটি টাকা আট কোটি টাকা হয়ে গেছে। একটা টাকাও তসরুফ হয়নি। বিএনপির নেত্রীর অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা, বিএনপির অস্বাভাবিক জনপ্রিয়তা। এই জনপ্রিয়তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে আওয়ামী লীগ আর কোনোদিন রাজত্ব করতে পারবে না। এ কারণে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী জেলে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গুম-খুন।

তিনি বলেন, মন্ত্রীরা বলছেন- ‘কোনো গুম-খুন নাকি হয়নি।’ গুম-খুন যদি না-ই করে থাকেন, তাহলে স্যাংশন দেয়া হলো কেন? গণতন্ত্রকে হত্যার দায়ে, মানুষ খুনের দায়ে, গুমের দায়ে স্যাংশন দেয়া হয়েছে।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, সরকারের অনুগত লোক দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এটা আরেকটি হুদা কমিশন। নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের পছন্দের লোক। তারা সবাই সরকারের অনুগত, সুবিধাভোগী ও তোষামোদকারী। এদের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। শেখ হাসিনার সরকার বা তাদের করা কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।

প্রধান বক্তা বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, এই ফ্যাসিবাদ আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। ভোট ডাকাত সরকার তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করার জন্য আবারো তথাকথিত নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এই নির্বাচন কমিশন ও অতীতের মতো আওয়ামী নির্বাচন কমিশন হিসেবে কাজ করবে। কাজেই এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া তো দূরের কথা আওয়ামী সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ মেনে নেবে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ হয়েছে। প্রশাসনের সর্বত্র সরকারের লোকজন। যারা নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ পেয়েছেন তারা সরকারের সুবিধাভোগী। সরকার তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। অনুগত বলেই তাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, বীর চট্টলা আমাদের আবেগ-অনুভূতির জায়াগা। এই চট্টগ্রাম থেকে এরশাদের পতন হয়েছে, শেখ হাসিনার পতন হবে। আমরা স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়ার কর্মী, আর আওয়ামী লীগ হচ্ছে লুটপাটকারী দল।

কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুল বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার দেশের গণতন্ত্রকে বিপন্ন করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র এখনো অব্যাহত আছে। শেখ হাসিনার দুর্নীতির যে ইতিহাস, গুম খুনের যে ইতিহাস, সেজন্য তাকে বাংলাদেশের মানুষ একদিন মমি করে রাখবে। ২০১৮ সাল ও ২০২২ সাল এক নয়। আগের মতো নিশিরাতের নির্বাচন আর করতে দেওয়া হবে না। এই চট্টগ্রাম থেকে যে আন্দোলন শুরু হয়েছে তাতে এই সরকারের শেষ রক্ষা হবে না।

চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নিত্যপণ্যের বাজারে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। দুর্নীতির কারণে এখন এমন একটা পর্যায়ে চলে গেছে যে, প্রতিটি ক্ষেত্রে ২০-২৮ শতাংশ জিনিসপত্রের দাম বেড়ে গেছে। বাজারের ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়েছে। তারা কৃত্রিমভাবে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোথাও কোনো জবাবদিহিতা নেই। চরম দুর্নীতির প্রভাব বাজারে গিয়ে পড়ছে। লাগামহীনভাবে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় জনগণকে তার মাশুল দিতে হচ্ছে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য চাল-ডাল-তেলসহ পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য লাগামহীনভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে দেশের মানুষ আর্থিক দিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদের প্রকৃত আয় অনেক কমে গেছে। মানুষ মধ্যবিত্ত থেকে নিম্নবিত্তে চলে গেছে, যা বেশিরভাগ মানুষ বলতে পারেন না-এটাই বাস্তবতা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৬:২৪ | সোমবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com