শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রুলিং ও বিধি লঙ্ঘন করে সংসদে বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গার চলছেই

  |   বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৪ | প্রিন্ট

parliament
বিশেষ প্রতিবেদক, 

ঢাকা: বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ যখন নবম জাতীয় সংসদের স্পিকার, তখন তিনি একাধিকবার এই বলে রুলিং দিয়েছিলেন যে, সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা যাবে না; কারো পোশাক বা ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও সমালোচনা করা যাবে না। কিন্তু সংসদ সদস্যরা তা মানছেন না।

চলমান দশম সংসদের শুরু থেকেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সিনিয়র জুনিয়র সব পর্যায়ের সংসদ সদস্যই বিগত সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন  বেগম খালেদা জিয়াকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করে এমন সব বক্তব্য রাখছেন, যা স্পষ্টতই সাবেক স্পিকার আবদুল হামিদের রুলিংয়ের লংঘন। এমনকি জাতীয় সংসদ পরিচালিত হয় যে কার্যপ্রণালীবিধি দ্বারা, তারও লংঘন। এতে পিছিয়ে থাকছেন না মতিয়া চৌধুরী বা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মতো বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ানরাও।

বিএনপি ও তার শরিক দলগুলো গত ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছে। ফলে তারা সংসদে বিরোধী দল নয়। কিন্তু এই সংসদেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লক্ষ্য করে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা প্রতিদিন যেভাবে বক্তব্য রাখছেন, তাতে প্রশ্ন ওঠে- বিএনপি কি এখনও সংসদের বিরোধী দল?

এই প্রশ্নটিকে আরও জোরালো করেছেন বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সিনিয়র সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ। মঙ্গলবার সংসদের পয়েন্ট অব অর্ডারে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে মানুষ সত্যিকারের বিরোধীদল হিসেবে মনে করতে চায় না’। বিরোধীদল হিসেবে কোনো সংসদীয় কমিটির সভাপতি পদ না পেয়ে তিনি এমন ক্ষোভ জানান।

ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আমাদের ব্যাপারে পাবলিক কনসেপ্ট খারাপ। মানুষ সত্যিকারের বিরোধীদল হিসেবে মনে করতে চায় না। বাইরে গিয়ে মুখ দেখাতে কষ্ট হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলাম। টেলিফোন ব্যবস্থার উন্নয়ন আমার সময়েই হয়েছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে এবার এ সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে নয় নাম্বার সদস্য হিসেবে আমাকে রাখা হয়েছে। এটার কোনো দরকার ছিলো না।

এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া অর্থের অভাবে তিন বছর ধরে বাড়িভাড়া দিতে পারছেন না- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবরের কড়া সমালোচনা করে গত সোমবার কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী সংসদে বলেছেন, ”উনি বাড়ি ভাড়া পরিশোধ করতে চান না বলেই এখন অর্থের অভাবের কথা বলছেন।”

অনির্ধারিত আলোচনায় তিনি খালেদা জিয়ার শাড়ি এবং অন্যান্য বিলাশবহুল জিনিস ব্যবহারের সমালোচনা করে বলেন, ”যিনি ৪-৫ লাখ টাকা দামের শাড়ি পরেন, তিনি বাড়ি ভাড়া দিতে পারেন না- তা তো হয় না।”

মতিয়া চৌধুরী বলেন, ”খালেদা জিয়া ব্লাউজ বানানোর জন্য দর্জিরে মজুরি দেন ২৫ হাজার টাকা। আর ওনার পরচুলার কত দাম, জানি না।”

খালেদা জিয়া ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে চলে যাবার সময় সেখানে পাওয়া জিনিসপত্রের উল্লেখ করে মতিয়া চৌধুরী বলেন, ”তখন যেসব বোতল টোতল পাওয়া গেছিল, সেগুলার দামও ওনার বাড়ি ভাড়ার চাইতে কম না।”

মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনীত প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুও খালেদা জিয়ার কড়া সমালোচনা করেন। তিনি খালেদা জিয়াকে মিথ্যাবাদী বলে মন্তব্য করেন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে  ‘চার নম্বর মীরজাফর’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি বলেন, রাজাকার আমদানির মধ্য দিয়ে তিনি চার নম্বর মীরজাফর হয়েছেন। আর খালেদা জিয়া রাজাকারের মাতা। শয়তান কখনো পাগল হয় না, বদলায় না, ভুল স্বীকার করে না। মানুষ আর শয়তান কখনো মিটমাট করতে পারে না। ইয়াহিয়া, জিয়া ও খালেদা জিয়ার ভূমিকা শয়তানের ভূমিকা। তাদের সঙ্গে কখনো আপস করা যায় না।

জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালীবিধির ২৭০ বিধিতে বলা হয়েছে, ”বক্তৃতা দেয়ার সময় কোনা সংসদ সদস্য কাউকে লক্ষ্য করে আক্রমণাত্মক, কটূ বা অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করবেন না। কোনো বিতর্ক অসৌজন্যমূলকভাবে কোনো সদস্যের উল্লেখ করবেন না এবং সংসদ-বিগর্হিত কোনো কথা বলার অনুমতি তাকে দেওয়া হবে না।”

কিন্তু দেখা যাচ্ছে, বর্তমান সংসদে সাবেক বিরোধীদলীয় নেতাকে লক্ষ্য করে প্রতিদিনই আক্রমণাত্মক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে।যদিও কোনো শব্দ যদি অসংসদীয় হয়, সেক্ষেত্রে স্পিকার ওইসব শব্দ সংসদের কার্যতালিকা থেকে বাদ দিতে পারেন, অর্থাৎ এক্সপাঞ্জ করতে পারেন। কিন্তু স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এই ইস্যুতে কারো কোনো বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেননি। বিগত নবম সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ সরকারি ও বিরোধী- উভয় দলের সংসদ সদস্যদের অনেক শব্দ এক্সপাঞ্জ করেছিলেন।

বিগত নবম সংসদে যখন বিরোধী দল উপস্থিত থাকত, তখন প্রায় প্রতিদিনই সংসদ উত্তপ্ত হয়ে যেত এই আক্রমণাত্মক বক্তব্যের কারণে। সংসদে সদস্যদের অশালীন ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। খালেদা জিয়ার বংশ পরিচয় নিয়েও ক্ষমতাসীন দলের একজন সদস্য সংসদ সদস্যের মন্তব্যকে ঘিরে সংসদ  উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।

অবশ্য তখন সংসদের ওই অসংসদীয় কথাবার্তার সমালোচনা এসেছিল সরকারি দল থেকেই। আওয়ামী লীগের সিনিয়র সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, তৎকালীন মহাজোট সরকারের শরিক জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য রওশন এরশাদ, আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জুনায়েদ আহমেদ পলকসহ অনেকেই এ জাতীয় বক্তব্য না দেয়ার আহ্বান জানান। অনেকে অসংসদীয় কথা বললে জরিমানার বিধান করারও পরামর্শ দিয়েছিলেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:১৯ | বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com