বৃহস্পতিবার ২৮শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রহিমা বেগম মুখ খুললেই বেরিয়ে আসবে রহস্য

  |   রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

রহিমা বেগম মুখ খুললেই বেরিয়ে আসবে রহস্য

নিখোঁজের প্রায় এক মাস পর মরিয়ম মান্নানের মা রহিমা বেগমকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। তবে উদ্ধারের পর থেকে পুলিশের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি তিনি। এমনটাই জানিয়েছেন খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ-কমিশনার (উত্তর) মোল্লা জাহাঙ্গীর হোসেন।

 

মায়ের নিখোঁজের তথ্য জানিয়ে প্রায় এক মাস ধরে তার সন্ধান করছিলেন তার মেয়ে মরিয়ম মান্নান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মরিয়মের কান্নার ছবি ছুঁয়ে যায় সবাইকে। তবে রহিমা বেগমকে উদ্ধারের পর পুলিশ বলছে, স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে ছিলেন রহিমা বেগম।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা খুলনার দৌলতপুর থানার এসআই লুৎফুল হায়দার।

 

বোয়ালমারী থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুল ওহাব জানান, বোয়ালমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়ি থেকে রহিমা বেগমকে উদ্ধার করা হয়। খুলনা থেকে পুলিশের একটি দল এবং বোয়ালমারী থানা পুলিশ শনিবার রাত পৌনে ১১টার দিকে তাকে উদ্ধার করে। তাকে এখন খুলনা নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

 

তিনি আরো বলেন, আমরা বোয়ালমারী থানা পুলিশ খুলনা পুলিশের টিমকে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করেছি। বিস্তারিত তথ্য খুলনা পুলিশ ভালো বলতে পারবে।

 

দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম জানান, রাহিমা বেগমকে ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের কুদ্দুস মোল্লার বাড়িতে ছিলেন। কুদ্দুস মোল্লা সোনালী জুট মিলে চাকরিরত অবস্থায় রহিমা খাতুনের মহেশ্বরপাশার বাড়িতে ভাড়া ছিলেন। তিনি বর্তমানে অসুস্থ। রহিমা খাতুনকে নিয়ে খুলনার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন তিনি। পরে গণমাধ্যমে সব কিছু জানানো হবে।

 

এর আগে শুক্রবার সকালে নিখোঁজ মা রহিমা বেগমের সন্ধানে ময়মনসিংহে যায় মরিয়ম ও তার পরিবারের সদস্যরা। সকালে কাপড় দেখে মায়ের লাশ দাবি করেছেন মরিয়ম। তবে পুলিশ বলেছিল, ডিএনএ টেস্ট ছাড়া লাশ চূড়ান্ত শনাক্ত করা সম্ভব নয়। এদিকে শনিবার রাতে রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, মাকে উদ্ধারের খবর পেয়েছি। আমার থেকে খুশি এই মুহূর্তে কেউ নেই। আমি এই মুহূর্তে খুলনা যাচ্ছি।

 

রহিমাকে উদ্ধারের খবর পেয়ে রাতে দৌলতপুর থানায় ছুটে যান এ মামলায় আটক রফিকুল আলম পলাশ ও নুরুল আলম জুয়েলের বাবা আনসার উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, তার ছোট ছেলে রফিকুল আলম পলাশ চাকরি করে এবং বড় ছেলে নুরুল আলম জুয়েল মুদি দোকানি। তার দুই ছেলেকে রহিমাকে কথিত অপহরণের মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি বলেন, তাদের সঙ্গে জমির সীমানা নিয়ে বিরোধ থাকায় মামলা দিয়ে হয়রানি ও সম্মানহানি করা হয়েছে। রহিমা ও তার সন্তানরা কেন এই অপহরণের নাটক সাজালো সে ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

 

তিনি আরো বলেন, রহিমার মেয়ে মরিয়ম শুক্রবার ময়মনসিংহের ফুলপুর থানায় বসে দৌলতপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম সম্পর্কে অনেক আপত্তিকর কথা বলেছে।

 

এ মামলায় আটক মহিউদ্দিন ও গোলাম কিবরিয়ার বড় ভাই নজরুল ইসলাম বলেন, রহিমা বেগমের তিন বিয়ে। মেয়ের ঘটকালি করতে আসে বেলাল, সর্বশেষ রহিমা বেগম তাকে বিয়ে করেন। তিনি বলেন, তার ছোট ভাই গোলাম কিবরিয়া রহিমার সৎ ছেলের কাছ থেকে জমি কেনে। সেই জমিতে যাতে যেতে না পারে সেজন্য আত্মগোপন করে অপহরণ মামলা দিয়ে তাকে আটক করিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, মরিয়ম মান্নান নাটকবাজ। পুলিশ ও সাংবাদিকদের মিথ্যা কথা বলে প্রায় এক মাস বিভ্রান্ত করেছে। সে মাদকাসক্ত, তার একাধিক বয়ফ্রেন্ড আছে। ময়মনসিংহে গিয়েও মরিয়ম নাটক সাজায়। তিনি আটককৃতদের মুক্তি এবং রহিমা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যদের শাস্তির দাবি করেন।

 

এ মামলায় আটক হেলাল শরীফের মেয়ে নবম শ্রেণির ছাত্রী আন্তারা ফাহমিদা বলেন, তার বাবা কোনো অপরাধ করেনি, অথচ তারপরও তাকে জেল খাটতে হচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যরা নানা কটূক্তির শিকার হয়েছে।

 

প্রসঙ্গত, গত ২৭ আগস্ট রাত আনুমানিক ১০টার দিকে খুলনা মহানগরীর মহেশ্বরপাশার উত্তর বণিকপাড়ার নিজ বাসা থেকে টিউবওয়েলে পানি আনতে নিয়ে নিখোঁজ হন রহিমা বেগম। এরপর আর ঘরে ফেরেননি তিনি। স্বামী ও ভাড়াটিয়ারা নলকূপের পাশে ঝোপঝাড়ে তার ব্যবহৃত ওড়না, স্যান্ডেল ও বালতি দেখতে পান। সেই রাতে মাকে খুঁজতে আত্মীয়স্বজন, আশপাশসহ সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজ করেন সন্তানরা।

 

মাকে খুঁজে পেতে গত ১৪ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানায় মামলাও করেন। মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পিবিআই তদন্তের ভার পায়। ১৭ সেপ্টেম্বর দৌলতপুর থানা থেকে মামলাটি পিবিআইয়ে স্থানান্তর করা হয়।

 

পুলিশ জানায়, গত ২৭ আগস্ট নগরীর মহেশ্বরপাশা এলাকার বাড়ির সামনে থেকে রহিমা বেগম নিখোঁজ হয়-এ অভিযোগ তুলে তার মেয়ে আদুরি আকতার বাদী হয়ে পরদিন দৌলতপুর থানায় অপহরণ মামলা করেন। এ মামলায় এ পর্যন্ত ছয়জন আটক হয়েছেন।

 

রহিমা বেগমের মেয়ে মরিয়ম মান্নান মায়ের খোঁজ চেয়ে দেশবাসীর কাছে আকুতি জানান। যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। মরিয়মের আকুতি মানুষের হৃদয় ছুঁয়ে যায়। ২২ সেপ্টেম্বর রহিমার মেয়ে মরিয়ম আক্তার ওরফে মরিয়ম মান্নান দাবি করেন, তার মায়ের লাশ তিনি পেয়েছেন। তিনি ২৩ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের ফুলপুরে দিনভর অবস্থান নেন এবং ব্যস্ততম সময় পার করেন। একই সঙ্গে সেখানে ১০ সেপ্টেম্বর উদ্ধার হওয়া অজ্ঞাতপরিচয় এক নারীর লাশকে নিজের মা বলে শনাক্ত করেন। তিনি ডিএনএ প্রোফাইল করার জন্যও সম্মত হন। ২৫ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহের আদালতে ডিএনএ প্রোফাইল করার আবেদন করার কথা ছিল।

সূএ:ডেইলি বাংলাদেশ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৫:৪৬ | রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com