| বুধবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৪ | প্রিন্ট
আব্দুর রহমান মিন্টু, রংপুর থেকে: মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ায় রংপুরসহ গোটা রংপুর বিভাগে জেঁকে বসেছে শীত। ঠান্ডায় জুবুথুবু হয়ে পড়েছে কয়েক লাখ হতদরিদ্র পরিবার। গত ৪ দিন ধরে আকাশে সূর্যের দেখা না মেলায় অনেকটাই বিপর্যস্ত এই জনপদ। গতকাল সকাল থেকে সারাদিন ছিল আকাশ কুয়াশাচ্ছন্ন সেই সাথে হিমেল হাওয়ায় কনকনে শীত। ফলে সূর্যের দেখা মেলেনি। বিরুপ আবহাওয়ায় জনজীবনে নেতীবাচক প্রভাব পড়েছে। নিতান্ত প্রযোজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বেরুচ্ছেনা। রাতের তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকা এবং সকালে ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। পৌষের শেষ ও মাঘের প্রথম দিকে আরও কয়েকটি মৃদু, মাঝারি বা তীব্র শৈতপ্রবাহের আশংকা করছে আবহাওয়া অফিস। গত কয়েক দিন থেকে রংপুরে তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং দিনাজপুরে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে এসেছে। আর গতকাল দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় রংপুরে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
বাংলাদেশের বৈচিত্রময় আবহাওয়ার মাঝে রংপুর জেলায় আবহাওয়া আরও বিচিত্র। এখানে শীতকালে পড়ে তীব্র ঠান্ডা আর গরমকালে বাতাসে উড়ে বেড়ায় ধুলো। যে কারণে অগ্রহায়ণ মাসেই রংপুর বিভাগের ৮জেলার ৫৮টি উপজেলা শীত জেঁকে বসে। কিন্তু এবার এই ষড় ঋতুর বাংলাদেশে কার্তিক মাসেই শীতের দেখা মিলেছে। আর পৌষের মাঝামাঝি সময়ে এসে প্রথম শৈত্য প্রবাহের দেখা পেল এ অঞ্চলের মানুষ। গত বুধবার থেকে শৈত্য প্রবাহের লক্ষন দেখা দিলেও গতকাল শুক্রবার তা হারে হারে টের পায় হতদরিদ্র মানুষজন। ঘন কুয়াশার আবরণে রাস্তায় গাড়ি চলাচলেও প্রতিবন্ধকতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে সন্ধ্যার আগেই কর্মব্যস্ত মানুষ যত দ্রুত সম্ভব নিজ ঘরে ফিরে যাচ্ছে। শহরের বাসিন্দারা কাজের তাগিদে গভীর রাত পর্যন্ত বাইরে থাকলেও প্রত্যন্ত এবং চরাঞ্চলের মানুষের ক্ষেত্রে চিত্র ভিন্ন। বিশেষ করে চরাঞ্চলের মানুষরা সন্ধ্যার পরেই খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ছে। তবে আকাশ মিডিয়া ও বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় হাট-বাজারে গভীর রাত পর্যন্ত লোক সমাগম থাকে। প্রত্যন্ত গ্রাম ও চরাঞ্চলগুলোতে জনবসতি কম থাকায় ফাঁকা স্থানের সুবিধা নিয়ে শীতের তীব্রতা একটু বেশি পড়েছে। সেই সাথে ঘন কুয়াশার কারণে জীবন যাত্রাও ব্যাহত হচ্ছে। রাস্তায় চলতে গিয়ে কুয়াশার কারনে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে পথচারি ও যানবাহনগুলো। অপরদিকে ছিন্নমূল ও হত দরিদ্র মানুষকে খড়-কুটো জ্বালিয়ে উষ্ণ তাপ নিতে দেখা গেছে। শীতের জন্য নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষগুলোর কর্মের অভাব দেখা দিয়েছে। খেটে খাওয়া মানুষেরা ঠিকমত নিজেদের শ্রম বিক্রি করতে না পেরে চরম বেকায়দায় রয়েছে। ঘন কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারনে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ক্রেতা বিক্রেতার সমাগম কমে গেছে। রাস্তাঘটে যানবাহন চলাচল করছে নিয়ন্ত্রিত গতিতে। দুর পাল¬ার যান বাহনগুলো দিনের বেলা হেড লাইট জ্বালীয়ে চলতে হচ্ছে দুর্ঘটনার আশংকা নিয়ে। ফলে কুয়াশা আর শীতের চাদরে ঢেকে যাওয়া প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষকে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। তাদের এই দুর্ভোগ নতুন নয়। প্রতি বছরেই ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে কোনভাবে বেঁচে থাকে খেটে খাওয়া ও অসহায় মানুষগুলো। তবে মানুষের দুর্ভোগ লাঘব করতে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারী, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দাতা সংস্থা, দানশীল ব্যক্তিবর্গ প্রতি বছর শীতবস্ত্র বিতরণ করে আসছে। কিন্তু তাদের এই শীতবস্ত্র বিতরণের চিত্র দেখা যায় হাঁড় কাঁপানো শীতের সময় বা পরে। এতে করে দরিদ্র মানুষরা যথাসময়ে শীতের কাপড় না পেয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবন যাপন করে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এ পর্যাপ্ত শীত বস্ত্র না পাওয়ায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অসহায়ের মত বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে। হতদরিদ্র মানুষের অভিযোগ, শীতের তীব্রতা বাড়লেও শীতবস্ত্র প্রদানে কারও কোন তাগিদ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি সরকারি ভাবে এক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ চোখে পড়ার মত নয়। যে কারণে অদ্যবধি রংপুর বিভাগীয় প্রশাসন বা জেলা প্রশাসন কর্তৃক গরম কাপড় প্রদানের কোন তাগাদাও নেই। রংপুর ত্রান ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম জানান, প্রতিটি জেলায় চাহিদার বিপরিতে বরাদ্দ এসেছে খুব সামান্য। প্রতিটি জেলায় গড়ে বরাদ্দ এসেছে ৫ থেকে ৭ হাজার পিছ কম্বল। চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল বরাদ্দ আসায় স্থানীয় প্রশাসনকে বিব্রত অবস্থায় পড়তে হচ্ছে। অপর দিকে শীতজনিত রোগ বালাই বেড়ে যাওয়া কারনে প্রতিদিনই শিশু ও বৃদ্ধমানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। সূত্র মতে গত কয়েক দিনে শীতজনিত রোগ নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট জনিত রোগে দু’শতাধিক শিশু ও বৃদ্ধ আক্রান্ত হয়েছে। তাই সমাজে বসবাসরত বিভিন্ন শ্রেণীর অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা এবারও যথা সময়ে শীতবস্ত্র বিতরণ নিয়ে আশংকায় রয়েছেন। তাদের মতে, এবার শীত বেশি পড়ার আশংকা থেকেই আগাম শীতবস্ত্র বিতরণ করা দরকার। তা না হলে শীতে কাঁ
পতে কাঁপতে প্রাণহানীর সম্ভাবনা অভিজ্ঞ মহলকে ভাবিয়ে তুলছে। বিভিন্ন এলাকার খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোও সকলের প্রতি শীতবস্ত্র চেয়ে তা আগাম প্রদানের অনুরোধ করেছেন। এদিকে ঢাকা আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় ঠান্ডার প্রকোপ বেশি হতে পারে।
Posted ১২:৪১ | বুধবার, ০৮ জানুয়ারি ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin