| বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | প্রিন্ট
সম্প্রতি রাজধানী ঢাকায় শুরু হয়েছে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান। এরই মধ্যে অবৈধ এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আলোচিত কয়েকজন ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।জুয়া বা ক্যাসিনো অভিযান চালাতে গিয়ে ঢাকায় এর বিস্তার হওয়ার পেছনের রহস্য উদঘাটন করেছে আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।যুবলীগের যেসব নেতা আত্মগোপনে আছেন তার মধ্যে একজন কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমান।
মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তার স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননা পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এ অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচিতে ব্যাপক সফলতার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল এ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন এবং ইমিউনাইজেশন-জিএভিআই কর্তৃক ‘ভ্যাকসিনেশন হিরো’ পুরস্কারে ভূষিত হওয়ায় বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ওমর ফারুক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মো, হারুনুর রশীদ শেখ হাসিনাকে পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, কাজী আনিসুর রহমান কেন্দ্রীয় যুবলীগের কার্যালয়ে পিয়ন হিসেবে যোগ দেন ২০০৫ সালে। বেতন ছিল মাসে ৫ হাজার টাকার মতো। প্রায় সাত বছর পর বনে যান কেন্দ্রীয় যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক। তিনি এখন একাধিক গাড়ি-বাড়ি, ফ্ল্যাট ও জমির মালিক। সংগঠনের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর আনুকূল্যে রাতারাতি জীবনধারা বদলে যায় যুবলীগের আলোচিত এই নেতা ।
জানা গেছে, ২০০৫ সালে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চাকরি হয় আনিসের। অফিসের পিয়নের কাজের পাশাপাশি কম্পিউটার অপারেটর ছিলেন তিনি। এতে করে কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি কার্যালয়ে আসা তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও পরিচয়ের সুযোগ হয় তাঁর। কম্পিউটারে নিয়মিত সারা দেশের সব যুবলীগ কমিটির তালিকা তৈরি করতে গিয়ে সব তথ্য তাঁর নখদর্পণে চলে আসে। মুখস্থ বলে দিতে পারতেন যেকোনো কমিটির নেতার নাম। এসব কারণেই চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ হয়ে যান তিনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কেন্দ্রীয় যুবলীগের এক নেতা বলেন, ২০১২ সালে যুবলীগের নতুন কমিটি গঠনের সময় তিনি নিজেও আনিসকে একটা সদস্যপদ দিতে সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু আনিস পেয়ে যান উপ-দপ্তর সম্পাদকের পদ। দপ্তর সম্পাদক পদটি শুরু থেকেই খালি ছিল, ছয় মাসের মধ্যেই সেটাও পেয়ে যান।
যুবলীগের তিনজন নেতা জানান, আনিস থাকতেন টিকাটুলী এলাকায়। কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার পর চেয়ারম্যানের কাছাকাছি থাকার জন্য ধানমন্ডিতে ভাড়া বাসা খোঁজেন। কিন্তু ভাড়া না নিয়ে ১৫ নম্বর সড়কে প্রায় আড়াই হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট কিনে নেন। এখানেই আছেন প্রায় সাড়ে তিন বছর। গতকাল ওই বাড়িতে গেলে ফ্ল্যাট মালিকদের তালিকায় তাঁর নাম দেখা যায়। নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, মালিক এখানে থাকেন না, ভাড়াটে থাকেন।
বর্তমানে রাজধানীর ধানমন্ডির ১০/এ সড়কের এক বাড়ির একটি ফ্ল্যাটে থাকেন কাজী আনিস। গতকাল সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যুবলীগের নেতা-কর্মীরা একের পর এক ভেতরে ঢুকছেন এবং বের হচ্ছেন। নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ফ্ল্যাটটি আনিসুর রহমানের নিজের। প্রতিদিন শত শত মানুষ গাড়ি, মোটরসাইকেল নিয়ে তাঁর সঙ্গে এখানে দেখা করতে আসেন।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ভাবড়াসুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের ফায়েকুজ্জামান (ফায়েক কাজী) কাজীর চার সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে কাজী আনিসুর রহমান। ২০০১ সালে ঢাকায় এসে প্রথমে পোশাক তৈরির কারখানায় চাকরি নেন। এরপর ২০০৫ সালে এলাকার এক নেতার মাধ্যমে চাকরি নেন যুবলীগের কার্যালয়ে।
গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার ভাবড়াসুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামে আনিসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বড় আকারের লোহার গেট পার হলেই সুন্দর লন। এক পাশে দৃষ্টিনন্দন পানির ফোয়ারা। আরেক পাশে গোলটেবিল ও চেয়ার সাজানো। এরপর মূল তিনতলা বাড়ি, যার মূল ফটক বিভিন্ন পাথরে সাজানো। তিনতলায় কাজ চলছে।
সম্পদের বিবরণী পেয়ে তাঁর অর্থের উৎস সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, চাঁদাবাজি, দরপত্র থেকে কমিশন ও যুবলীগের বিভিন্ন কমিটিতে পদ-বাণিজ্য করেই বিত্তবৈভব গড়ে তুলেছেন কাজী আনিস।
এসব অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় যুবলীগ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা সবাই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করলেও কেউ নিজেদের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি। নেতারা আরও অভিযোগ করেন, আনিসের বিরুদ্ধে কথা বলে টেকা কঠিন। বিভিন্ন ইউনিটে বছরের পর বছর সম্মেলন না করে আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চালানো হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে এসব আহ্বায়ক কমিটি বানানো ও দীর্ঘদিন বহাল থাকার সুযোগ করে দিচ্ছেন আনিস। আনিসের দাপটে পুরোনো অনেক নেতা যুবলীগে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছেন।
Posted ১২:৩৬ | বুধবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain