মঙ্গলবার ২৩শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘যুদ্ধদিনের স্মৃতি কি রক্ষা হবে না ?’

  |   শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

‘যুদ্ধদিনের স্মৃতি কি রক্ষা হবে না ?’

ctg-barkal-school-(3)20170216180750

নিজস্ব প্রতিনিধি ( চন্দনাইশ ) চট্টগ্রাম :  বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন চন্দনাইশের বরকল এস জেড উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগে সেই অগ্নিগর্ভ সময়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ছাত্র-জনতা যে কয়েকটি জায়গায় যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছিল, তার মধ্যে একটি এই স্কুলের মাঠ। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই মাঠেই লাল-সবুজের পতাকা নিয়ে এক হয়ে উল্লাস করেছিলেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধা। আবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের আহ্বানে বরকল স্কুলের মাঠেই অস্ত্র সমর্পণ করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা।

স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এসে ঐতিহাসিক এই মাঠে বাণিজ্যিক ভবন তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিশ্চিহ্ন করার পাঁয়তারা শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর মাঠে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ নিয়ে স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী যারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন তারা এবং বর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, স্কুলের মাঠ রক্ষায় প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধা কালাম চৌধুরীকে গত ১৬ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছে।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই স্থান নিয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম চৌধুরীর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। কান্নাজড়িত কন্ঠে তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা বরকল স্কুলের মাঠে যুদ্ধের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখানেই আমরা অস্ত্র সমপর্ণ করেছি। খোলা জিপে চড়ে ৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা জাতীয় পতাকা নিয়ে এই মাঠে প্রবেশ করেছি।

‘এই মাঠে গেলে আমাদের সেই যুদ্ধদিনের কথা মনে পড়ে যায়। অথচ আমাদের চোখের সামনে মাঠটি দখল হয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মুছে ফেলা হচ্ছে। যুদ্ধদিনের এই স্মৃতি কি রক্ষা হবে না ?’ বলেন আবুল কালাম চৌধুরী গত ডিসেম্বরে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ প্রায় আড়াই’শ ফুট একটি সীমানা দেওয়াল ভেঙ্গে মাঠে তিনতলা একটি মার্কেট নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করে। ১৬ ডিসেম্বর চন্দনাইশের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মার্কেটের কাজের উদ্বোধন করেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আবু জাফর বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, মার্কেটের নিচতলায় দোকান বরাদ্দ দেয়ার পরিকল্পনা আছে। উপরের দুইতলায় হবে একাডেমিক ভবন।

স্কুলমাঠে বাণিজ্যিক স্থাপনার নির্মাণের বিষয়টি জানাজানির পর প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও মুক্তিযোদ্ধারা প্রতিবাদ শুরু করেন। এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে বিচারপতি নাঈমা হায়দার ও বিচারপতি আবু তাহের মোহাম্মদ সাইফুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বেঞ্চ গত ১৭ জানুয়ারী বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের উপর নিষেধাজ্ঞা দেন। একইসঙ্গে মার্কেট নির্মাণ করতে গিয়ে ভেঙে ফেলা স্কুলের সীমানা প্রাচীরকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেয়া হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু জাফর জানিয়েছেন, ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রতিবেদন দাখিলের শেষ সময়। ওইদিন প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।

তবে স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মুরিদুল আলমের ছেলে এবং মাঠ রক্ষা কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান শিবলীর অভিযোগ, হাইকোর্টের আদেশে সীমানা প্রাচীর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেয়া দূরে থাকুক উল্টো তারা রাতের আঁধারে মার্কেট নির্মাণের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। এভাবে সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে মার্কেটটি নির্মাণ করতে পারলে একসময় পুরো মাঠই নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হবে বলে অভিযোগ তার।

তবে প্রধান শিক্ষক আবু জাফর বলেন, মাঠের দৈর্ঘ্য ২২০ ফুট। মূল মাঠের আকৃতি, প্রকৃতি এবং আয়তনে কোন আঘাত করা হয়নি। শুধুমাত্র মাঠের পাশে ১০ ফুটের মতো জায়গায় স্থাপনার অংশ আছে। প্রধান শিক্ষকের দাবি, হাইকোর্টের আদেশ আসার পর থেকে তারা আর কোন কাজ সেখানে করেননি। তিনি বলেন, আমাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রী দেড় হাজার। ১০ জন আছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক। ১৪ জন আছেন নন এমপিও। ১৪ জনের বেতন বাবদ মাসে খরচ হয় ৮০ হাজার টাকা। এজন্য মার্কেট নির্মাণ করে আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল।

‘কিন্তু বিষয়টা নিয়ে এখন দুইটা পক্ষ হয়ে গেছে। আমি তো শিক্ষক, আমি কোন পক্ষ নিতে পারি না। আমি মার্কেট নির্মাণের পক্ষেও বলব না, বিপক্ষেও বলব না। আমি কোন বাড়াবাড়িতে না গিয়ে স্কুলের স্বার্থে যেটা প্রয়োজন সেটাই চাই।’ বলেন প্রধান শিক্ষক। রিট আবেদনকারী আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, স্কুল পরিচালনা কমিটি যা করছে তা গায়ের জোরে করছে। কিন্তু প্রধান শিক্ষক ইতিহাস-ঐতিহ্য এবং শিক্ষার্থীদের পক্ষে না থেকে পরিচালনা কমিটিকে সহযোগিতা করছে। এটা খুবই দু:খজনক।

স্কুল পরিচালনা কমিটির সাবেক সদস্য রিজোয়ানুল হক চৌধুরী মিঠু জানান, ২০০৯-২০১০ অর্থবছরে সরকার বরকল স্কুলে একটি নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণের জন্য করার ৬০ লাখ টাকা বরাদ্ধ দিয়েছিল। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে স্কুল কর্তৃপক্ষ ভবন নির্মাণের জন্য মাঠ দেখিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু খেলার মাঠে স্থাপনার তৈরিতে সরকারের কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে জানিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ না করে ফেরত যায়।

‘এখন খেলার মাঠ দখল করে মার্কেট নির্মাণের সাহস কোথায় পায় স্কুল কর্তৃপক্ষ। এর পেছনে কারা আছে। বরকল স্কুলের মাঠ এলাকার ক্রীড়া-সংষ্কৃতি এবং প্রগতিশীল অসম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার আতুরঘর বলে আমরা মনে করি। এই ঐতিহাসিক স্থান রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। ’

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৮:২৭ | শুক্রবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com