শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মিয়ানমার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ব্যর্থ, ওআইসিকে প্রধানমন্ত্রী

  |   শনিবার, ০১ জুন ২০১৯ | প্রিন্ট

মিয়ানমার প্রতিশ্রুতি দিয়েও ব্যর্থ, ওআইসিকে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও মিয়ানমার থেকে জোর করে তাড়িয়ে দেওয়া ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমানদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই রোহিঙ্গাদের যথাযথ প্রত্যাবর্তন এখনও অনিশ্চিত। মিয়ানমার বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েও দেশের উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনে তাদের ফিরে যাওয়ার জন্য একটি সহায়ক পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে।

শনিবার ভোররাতে সৌদি আরবের মক্কার সাফা প্যালেসে ইসলামি দেশগুলোর জোট ওআইসির ১৪তম শীর্ষ সম্মেলনে এশিয়া গ্রুপের পক্ষ থেকে বক্তব্য দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আবুধাবির কাউন্সিল অব ফরেন মিনিস্টার (সিএফএম) রোহিঙ্গাদের আইনগত অধিকার নিশ্চিত করার জন্য জবাবদিহিতা ও বিচার সম্পর্কিত প্রশ্নের সম্মুখীন করতে আন্তর্জাতিক আদালতে একটি পথ তৈরি করেছে। এই প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ার জন্য আমরা গাম্বিয়াকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। মিয়ানমারে সৃষ্ট গণহত্যা ও সহিংসতাকে ১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশনের আওতায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বিচারের ব্যবস্থা গ্রহণে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা। এর আগে আমরা স্বেচ্ছাসেবক তহবিল ও কারিগরি সহায়তার মাধ্যমে মামলাটি চালিয়ে যাওয়ার জন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোতে আপিল করি।

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের প্রতি বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি ঘোষণার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি তা মোকাবেলায় ওআইসির সক্রিয়তা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা।

রিয়াদ সম্মেলনে নিজের দেয়া চারটি প্রস্তাব মক্কা সম্মেলনেও তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো হল- অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা, সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ করা, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ভেদাভেদ নিরসন, সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইসলামের আবির্ভাব হয়েছিল অন্ধকার জগতের আলোকবর্তিকা হিসেবে। কিন্তু অপব্যাখ্যার কারণে সন্ত্রাসবাদ ও সংঘাতের ভাবধারা হিসেবে ইসলামকে ভুলভাবে তুলে ধরা হচ্ছে।’

শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘খ্রিস্টান চার্চ আক্রমণের দুঃখভোগী পরিবারের প্রতি আমরা সহানুভূতি ও সংহতি জানিয়েছি, যে হামলায় আমার আট বছর বয়সী নাতি শেখ জায়ানও নিহত হয়।’

ফিলিস্তিন, সিরিয়া ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় সাহায্য-সহযোগিতাহীন মানুষ যেভাবে হত্যাকাণ্ডে শিকার হচ্ছে সেসব অসহায় মানুষের বেদনা ও যন্ত্রণার সঙ্গেও সংহতি প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ওআইসি যে লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল, তা পূরণ না হওয়ার কথাও সম্মেলনে তুলে আনেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের ফিলিস্তিনি ভাই ও বোনদের জমি ও সার্বভৌমত্বের অধিকার ফিরিয়ে আনতে, উম্মাহর মর্যাদা ও অধিকার রক্ষা এবং মুসলিম বিশ্বের জনগণের মধ্যে একাত্মতা ও সহযোগিতা জোরদার করা ওআইসির লক্ষ্য ছিলো। কিন্তু সাত দশক পরেও ফিলিস্তিনের সমস্যা এখনও বিদ্যমান এবং এ বিষয়ে মুসলিম উম্মাহ এখনও বিভক্ত।’

মুসলমানদের অমর্যাদা ও দুর্ভোগের অবসানের পথ নির্দেশনা তৈরি করতে সৌদি বাদশাহর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বর্তমান বিশ্বে রয়েছে অর্থনীতি, বাস্তুতন্ত্র ও নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ। এসব মোকাবেলায় ওআইসিকে একটি বিস্তৃত কৌশল গড়ে তুলতে হবে, যার মধ্যে সদস্য রাষ্ট্রগুলো একে অন্যের জন্য কাজ করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর কৌশলগত সম্পদের এক তৃতীয়াংশেরও বেশি এবং যুবশক্তির বেশিরভাগই রয়েছে আমাদের হাতে। আমাদের নিজেদের সমস্যা নিজেদেরেই সমাধান করার সমক্ষতা থাকা উচিত।’

দরিদ্রকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ উল্লেখ করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এ অসঙ্গতি মোকাবেলার জন্য যৌথ ইসলামী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ওআইসি-২০২৫ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে হবে।’

ওআইসির ইন্সটিটিউশনগুলোকে বিশেষ করে ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংকের নীতিমালা ও অনুশীলনগুলোকে ওআইসির এজেন্ডার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার ওপরও জোর দেন তিনি।

‘পণ্য বাজারজাত ও পরিষেবায় ধারণা ও উদ্ভাবন আজ ইসলামী বিশ্বের প্রয়োজন’ বলেও মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশনের (আওএম) উপ মহাপরিচালক পদে প্রার্থী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের জন্য ইসলামী দেশগুলো নেতাদের সমর্থন চান।

এর আগে ওআইসির চতুর্দশ সম্মেলনে যোগ দিতে শুক্রবার বিকালে জাপান থেকে সৌদি আরবে পৌঁছেন শেখ হাসিনা।

সৌদি সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানা ছাড়াও রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক, মূখ্য সচিব নজিবুর রহমান, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন প্রমুখ।

সম্মেলনে যোগ দেওয়ার পর শনিবার সন্ধ্যায় ওমরাহ পালন করবেন শেখ হাসিনা। এরপর রোববার মদিনায় হজরত মুহাম্মদ (স.) এর রওজা জিয়ারত করবেন তিনি।

সৌদি আরব সফর শেষে মদিনা থেকে জেদ্দা ফিরে সোমবার ভোরে ফিনলান্ডের উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। ফিনল্যান্ড সফর শেষে ৮ জুন দেশ ফিরবেন তিনি।

‘ফিউচার অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দিতে মঙ্গলবার ঢাকা থেকে টোকিও পৌঁছান শেখ হাসিনা।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:৩৮ | শনিবার, ০১ জুন ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com