বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোলায় কোটি টাকার বালু বাণিজ্য

  |   মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৮ | প্রিন্ট

ভোলায় কোটি টাকার বালু বাণিজ্য

ভোলায় ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের নামে কোটি টাকার বালু বাণিজ্য চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডাব্লিউটিসি) কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত।

স্থানীয় সূত্র জানায়, নাব্যতা সংকট মোকাবেলায় যেখানে খনন করার কথা, সেখানে না করে অন্য জায়গা থেকে বালু কাটা হচ্ছে। একটি সিরামিক কম্পানির ২০ থেকে ২৫ একর জমি প্রায় ১০ ফুট উঁচু করে দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান থেকে বালু ও মাটি কাটা হচ্ছে। এর ফলে ছোট নদীর কিনারায় ভাঙন দেখা দিতে পারে। দুই মাস আগে খননের ফলে ভোলা সদরের সদুর চর ও জাঙ্গালিয়া মৌজার তেঁতুলিয়া নদীর দুই পাশে কয়েক হাজার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এরই মধ্যে অনেকে ভিটেমাটিছাড়া হয়ে গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে, সরকারের তেল খরচ করে পকেটে যা পাওয়া যায় তাই লাভ মনে করছেন কর্মকর্তারা। তাই এখন ব্যক্তিস্বার্থ তাঁদের কাছে মুখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। এলাকার সাধারণ মানুষের কোনো কথায় কর্ণপাত করছেন না তাঁরা।

এদিকে এলাবাসী অনেকবার প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিআইডাব্লিউটিসির কর্মকর্তারা তাদের পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন। কখনো আবার এলাকাবাসীর ছবি মোবাইলে তুলে রাখছেন তাঁরা এবং বলে বেড়াচ্ছেন, ‘ছবি তুলে রাখলাম। এবার দেখে নেব।’ এদিকে স্থানীয়রা বিষয়টি বাণিজ্যমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসককে জানানোর প্রস্তুতি নিয়েছে।

এলাকাবাসী জানায়, এ নদী খুব শান্ত ও নীরব ছিল। দশ বছরে দুই হাতও ভাঙেনি। ভোলা-বরিশাল ও ভোলা-ঢাকা রুটের ছোট-বড় অনেক লঞ্চ এর ওপর দিয়ে চলাচল করে। তাদের কোনো সমস্যা হয় না। ছয় মাস আগে একবার এসে এই ড্রেজার সিরামিক কারখানাকে বালু দিয়েছে। এর পর থেকে নদী ভাঙা শুরু হয়েছে। আবার এখন বাগেরহাটের পাশ থেকে বালু কেটে মানুষের কাছে বিক্রি করে এখন হাক্কাঘাটা কারখানা এলাকায় এসেছে। এখানে বালু কাটার কথা না থাকলেও তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এ বালু দিচ্ছে।

এ বিষয়ে সিরামিক কম্পানির কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি। তবে তাঁরা একটি কাগজে লিখে একটি স্মারক নম্বর দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে জায়গা ভরাটের কথা থাকতে পারে। তাই যদি হয় তাহলে সরকারের কোটি টাকার তেল গচ্চা যাবে। আর কম্পানির লাভ হবে কয়েক কোটি টাকা।

সরেজমিনে গেলে ড্রেজার বন্ধ করে দেওয়া হয়, যাতে এর ভিডিও ফুটেজ না নেওয়া যায়। তবে একজন বালু ব্যবসায়ী জানান, এর আগে ওই কম্পানি প্রায় ২৫ একর জমি বালু দিয়ে ভরাট করেছে। সে সময় বালুগুলো বাইরের নদী থেকে জাহাজে করে এনে এখানে ফেলা হতো। সেখানে তাদের প্রায় এক কোটি ফুট বালু ভরাট হয়েছে। এ জন্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এখন আবার আরো প্রায় ২৫ একর জমি ভরাট চলছে। এর ফলে এক কোটি ফুট বালু লাগবে। এত পরিমাণ বালু যদি এ এলাকা থেকে কাটা হয় তাহলে দুই হাজার ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (খনন বিভাগ) মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘সাধারণত স্কুল, কলেজের মাঠ, মসজিদের মাঠ, রাস্তার দুই পাশ ছাড়াও এলাকার কোনো মানুষের সমস্যা না হয়, এমন যায়গায় ভরাট করা হয়। লাখ লাখ ফুট বালু প্রয়োজন হলে তারা খাসমহল থেকে ভরাট করবে। কোনো অনুমতি ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে প্রাধান্য দিয়ে পকেট ভারী করা যাবে না। আমার যা ধারণা, ভোলার ওই সিরামিক কারখানা থেকে ড্রেজিং অনেক আগেই করা হয়ে গেছে।’

এ বিষয়ে ভোলা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিকী বলেন, ‘বিআইডাব্লিউটিসির যে ড্রেজিং হচ্ছে তার বালুগুলো ফেলা হবে সম্পূর্ণ ফ্রি। কয়েক মাস আগে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব পরিদর্শনে এসে এ কথা বলে গেছেন। কোনো টাকা ছাড়া স্কুল-কলেজের মাঠ, হাট-বাজার, রাস্তার দুই পাশ ও চাহিদামতো মানুষকে দিতে হবে। একটি কম্পানিকে যে নদী কেটে বালু দেওয়া হচ্ছে তা আমি অবগত নই। এলাকাবাসীর অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।’  কালের কন্ঠ

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৫৪ | মঙ্গলবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com