| শুক্রবার, ৩০ মে ২০১৪ | প্রিন্ট
ঢাকা : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদের জনগণের প্রতিনিধি বলা যাবে কি না, এ ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।
বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে এ-সংক্রান্ত এক রিটের অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে বক্তব্য দেয়ার সময় ড. কামাল এ কথা বলেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিদের কেন অবৈধ ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের অ্যামিকাস কিউরি তিনি।
হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি খোরশেদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে ড. কামাল তার মতামত তুলে ধরেন। বৃহস্পতিবার তার বক্তব্য অসমাপ্ত অবস্থায় আগামী ৪ জুন বুধবার পর্যন্ত মূলতবি করেন আদালত।
বাংলাদেশ সংবিধানের প্রণেতা বলেন, “সংবিধানের মূলনীতি হলো গণতন্ত্র। সংবিধানে বলা আছে, জনগণ সব ক্ষমতার মালিক। সংবিধানের দেয়া এই ক্ষমতার প্রয়োগ করবে জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা। কিন্তু যারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন, তাদের কি জনপ্রতিনিধি বলা যাবে?”
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এমপিরা সর্বোপরি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন বলে আদালতে তার মতামত পেশ করেন ড. কামাল হোসেন।
এই সংবিধান বিশেষজ্ঞ বলেন, “বাংলাদেশে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন থাকবে এবং জনপ্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হবেন, এ বিষয়গুলো সংবিধানেই বলা আছে। এ বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন বুঝতে হবে হোয়াট ইজ ইলেকশন, অর্থাৎ প্রতিনিধিরা (সংসদ সদস্য) কীভাবে নির্বাচিত হবেন।”
ড. কামাল বলেন, “তারা জনগণের ইচ্ছানুযায়ী/পছন্দ অনুযায়ী নির্বাচিত হবেন। সর্বোপরি জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে এমপি নির্বাচিত হবেন। কিন্তু যে নির্বাচনে কোনো প্রতিযোগিতা নেই, প্রতিদ্বন্দ্বী নেই, সে নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীকে কীভাবে নির্বাচিত প্রতিনিধি বলা যাবে!”
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই আইনজ্ঞ বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র ব্যতিক্রম বাংলাদেশ, যেখানে পাঁচ বছর পরে জনগণের একটি ভোট, তার অধিকারও খর্ব করা হয়েছে।” এ সময় তিনি নির্বাচন কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
নির্বাচন কমিশন তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে উল্লেখ করে ড. কামাল বলেন, “নির্বাচন কমিশন থাকবে নিরপেক্ষ। সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব কমিশনের। কিন্তু তারা সে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।
এর আগে বুধবার দুপুরে ড. কামাল হোসেন তার লিখিত বক্তব্য আদালতে দাখিল করেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতা-সংক্রান্ত ধারা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা রিটের অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধৃ) হিসেবে বক্তব্য উপস্থাপন করার জন্য ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, রফিক-উল হক, মওদূদ আহমদ, রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কিউসি ও বদি-উল আলম মজুমদারকে নির্বাচিত করেন আদালত।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একক প্রার্থীকে নির্বাচিত করার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ১৯ ধারা কেন সংবিধানপরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ খুরশিদ আলম সরকারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারির আদেশ দেন। রুলে ১০ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ-সচিব, আইনসচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবকে জবাব দিতে বলা হয়।
২০১৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার আবদুস সালাম সুপ্রিম কোর্টে রিট আবেদনটি করেন। পরে ওই রিটের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী হাসান এম এস আজিম। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আল আমীন সরকার।
Posted ০২:৫৮ | শুক্রবার, ৩০ মে ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin