| শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বিএনপি কখনো ক্ষমতায় যাওয়াটা মূল লক্ষ্য মনে করে না। ১৯৯১ সালেও ম্যাডাম কোনো নির্বাচনী প্রচারণায় বিএনপি ক্ষমতায় যাবে-এমন বক্তব্য তিনি দেননি। দেশের মানুষ তাকে ভোট দিয়েছে, নির্বাচিত করেছে।
শুক্রবার (৩১ ডিসেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিএনপির উদ্যোগে একাদশ নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট ডাকাতির তৃতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ‘ভোটাধিকার হরণের কালো দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
গয়েশ্বর বলেন, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের তিনটি নির্বাচন তিনটি কৌশলে বৈতরণী পার করেছে আওয়ামী লীগ। ২০০৮ সালের নির্বাচনের কৌশলটা আমরা আগে বুঝতে পারিনি। ওই নির্বাচনে প্রতিটি আসনে তৎকালীন সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের তত্ত্ববাধায়নে ৪০ হাজার ভোট বাক্সে রিজার্ভ রাখা ছিলো। আমার জানা মতে, কোনো একটি আসনে ৪০ হাজার ভোট ব্যালট বাক্সে রিজার্ভ রাখার পরও সেখানে ১৫ হাজার ভোটের ব্যবধান ছিলো। পরে অন্য জেলা থেকে এনে তা পূরণ করা হয়। এ নির্বাচনটা ছিলো যারা এক-এগারোতে অন্যায় করেছে, তাদের বেঁচে থাকা এবং শাস্তির আওতায় না আসার জন্য শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি চুক্তি।
তিনি বলেন, সেই চুক্তি অনুযায়ী মঈন ইউ আহমেদ বা তথাকথিত যে সরকার সেই সরকার নিরঙ্কুষ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনে দেয়। শেখ হাসিনা তখন বিদেশ যাওয়ার সময় এয়ারপোর্টে বলেছিলেন, আমি বর্তমান (ওয়ান ইলেভেন) সরকারের সমস্ত কর্মকাণ্ডের বৈধতা দেবো। ওই সরকারটা ছিলো অবৈধ সরকার। এ সরকারের বৈধতা এনে দিতে হলে শেখ হাসিনাকে ২০১ এর অধিক আসন তাকে দিতে হবে।
ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর বলেন, একই ধরনের প্রস্তাব আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়াকেও দেওয়া হয়েছিলো। রাতভর গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন দুই নেত্রীর (শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) সঙ্গেই কথা বলতো। তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার দুটি নাম আছে- একজন হলেন মেজর জেনারেল আমিন, তিনি বিহারী আমিন নামে পরিচিত, ফজলুল কবির বারী তিনি ছিলেন ব্রিগেডিয়ার। এক সময় এরা একজন আমাকে হুমকি দিয়ে ক্রসফায়ারের কথা বলেছিলো। আমি তখন তাকে বলেছিলাম কাজটা খুব সহজ, সময় এবং স্থান বলে দিলে আমি আসতে পারি, আমাকে খুঁজতে হবে না। আমার অপরাধ ছিলো খালেদা জিয়ার একটি বিবৃতি সর্বপ্রথম গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেছিলাম। এটিই ছিলো আমার অপরাধ।
তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়া মুক্তির তিন মাস আগে ব্রিগেডিয়ার বারী অনেক কাকুতি মিনতি করে আমার সঙ্গে বসতে চাইলেন। আমি বসলাম, দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা। আমার সঙ্গে আরো দুই-একজন ছিলো। তাদের প্রস্তাবে যেন খালেদা জিয়া সম্মতি দেয়, সে জন্য যেন আমি ভূমিকা রাখি। আমি বললাম কীভাবে সম্ভব, আমি তো তার কোনো আইনজীবী না, তার কোনো আত্মীয়-স্বজনও নয়। আমাকে বলা হলো, রাত এগারোটার দিকে আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাবো। ম্যাডামকে বোঝান অর্থাৎ তাদের অপকর্মের দায় মুক্তি আরো ইত্যাদি। তাহলে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসবে এবং দেশটাও বাঁচবে। আমি বললাম, এতদিন পরে উপলব্দিটা হলো কেন? আমি তাদের কথায় রাজি না হয়ে বললাম, আপনারা খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন, তারপর আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। সঙ্গে এও বললাম, আপনারা ম্যাডামের সঙ্গে আলোচনা করেন তিনি যদি একটা চিরকুট দেয় অথবা তার পুত্রবধূ জোবাইদা রহমানের মাধ্যমে খবর পাঠান তাহলে আমি যেতে পারি। তাছাড়া আমি আপনাদের দালাল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারবো না। তিনি খুব রাগ করলেন, আবার ক্রসফায়ারের ভয় দেখালেন। যাওয়ার আগে আমার বিরুদ্ধে একটি মামলা দিয়ে গেলো। আপনারা বোঝেন ওয়ান ইলেভেনের চক্রান্তটা কেমন ছিলো।
ওয়ান ইলেভেন সরকারের প্রস্তাব খালেদা জিয়া প্রত্যাখ্যান করলেও শেখ হাসিনা রাজি হয়েছিলেন বলে জানান গয়েশ্বর। খালেদা জিয়া বলেছিলেন, আইন ও সংবিধানের বাইরে তিনি যাবেন না। কারণ, দেশটা জনগণের। ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্র এখনো যে নেই, সেটা তো না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, সেটাও আপনারা জানেন। ১০ হাজার ভোট কেন্দ্রে ব্যালট বাক্স যায়নি। এমনকি নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারাও যেতে পারেননি।
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রসঙ্গে গয়েশ্বর বলেন, এ নির্বাচনটা আরেক কায়দায় হলো। আমাদের দুর্বলতা একটা জায়গায় এ শেখ হাসিনা কী করবে আমরা আগাম বুঝতে পারিনি। ঘটনা ঘটানোর পর আমরা বুঝতে পারি। দিনের ভোট রাতে কাটছে-এটা কে বুঝবে? কেউ-ই তো ভাবেনি। আমরা এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম একটি কারণে যে গণতন্ত্রটা সচল থাকুক। ক্ষমতায় যাওয়াটা আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিলো না।
র্যাবের ওপর মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচন পুরোপুরিভাবে পুলিশ করেছে। অথচ পুলিশ একটি প্রতিষ্ঠান। আমরা ক্ষমতায় গেলেও তাদের লাগবে। প্রতিষ্ঠানটাকে তো বাজেয়াপ্ত করতে পারবো না। র্যাব সন্ত্রাস দমন করতে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিলো। আজ র্যাবের বিষয়ে বিদেশে যে পর্যবেক্ষণ, মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় যাদের নাম এসেছে দোষটা তো তাদের নয়, আইন মেনে তারা যদি কর্ম করতো এ দোষে দুষ্ট হতো না। তারা একটি ব্যক্তির ইচ্ছা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
Posted ১৫:২৭ | শুক্রবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২১
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain