বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাংলাদেশ ঋণের সব বিপদসীমা পার হয়ে গেছে: রুমিন

  |   সোমবার, ২০ জুন ২০২২ | প্রিন্ট

বাংলাদেশ ঋণের সব বিপদসীমা পার হয়ে গেছে: রুমিন

বাংলাদেশ ঋণের সব বিপদসীমা পার হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএপির সংরক্ষিত আসনের এমপি রুমিন ফারহানা। তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ এখন শ্রীলংকার পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অর্থনীতিবিদরা ভয়ে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে পারছেন না প্রকাশ্যে। কিছু অর্থনীতিবিদ অবশ্য শ্রেফ ভয়ে ভয়ে বলেন যে শ্রীলংকার পরিস্থিতি হবার কোনও সম্ভাবনা এখন বাংলাদেশে নেই। তবে এই অনেক অর্থনীতিবিদ আমাকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের জন্য অবশ্যই ঝুঁকি রয়েছে, বাংলাদেশ যদি সতর্ক না হয় তাহলে সেই ঝুঁকিতে বাংলাদেশ পড়তে পারে। অথচ এই বিষয়ে এবারের বাজেটে কোনও দিক নির্দেশনা নেই। আমরা ঋণের সব ধরনের বিপদ সীমা পার হয়ে গেছি বলে জানান রুমিন।

রোববার তিনি জাতীয় সংসদে বলেন, করোনা মহামারীর পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ চলছে। এই অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে চরম সমস্যা। আমদানি রফতানি চরম ভারসাম্যহীনতা, ডলারের তুলনায় টাকার মূল্যমান কমে যাওয়া, বিদেশী বিনিয়োগ কমে যাওয়া, কর্মসংস্থানের চরম সংকট হওয়া ইত্যাদি।

তিনি বলেন, অর্থনীতির ৬টি চ্যালেঞ্জের মধ্যে প্রথমেই বলেছে- বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ানো ও অভ্যান্তরীন বিনিয়োগ বাড়ানো। বর্তমান মূল্যস্থীতি ডিমান্ড ফুলফিল নয়, যে চাহিদার অনেক বৃদ্ধি জনিত কারণে হয়নি, যাতে প্রবৃদ্ধি কমানো যাবে। করোনা অভিঘাতে মধ্যবিত্ত থেকে সব মানুষের আয় কমেছে, দরিদ্র আরো বেড়েছে, তাহলে চাহিদা বাড়ানো সম্ভব কি করে। এধরনের অবস্থায় প্রবৃদ্ধি আরো কমিয়ে সরবরাহ আরো বাড়ানো কি করে সম্ভব হয় তা বোধগম্য নয়। বর্তমান মূল্যস্থিতি কষ্ট পোস্ট অর্থাৎ আমদানী জনিত মূল্য বৃদ্ধির কারণে। যতনা মূল্য বেড়েছে তার চেয়ে বেশী বেড়েছে সরকারের সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীদের সি-িকেটের কারণে বেড়েছে কয়েকগুন, কমানোর কোন চিন্তা বাজেটে নেই। বর্তমান যখন সরকার বলছে মূল্যস্ফিতি ৬ শতাংশের বেশী, কিন্তু থিম ট্যাঙ্ক গুলো বলছে মূল্য স্ফিতি দ্বিগুনেরও বেশী।

তিনি বলেন, বাজেটে প্রয়োজনীয় পণ্যের সব ধরনের শুল্ক তুলে দেয়া কিন্তু বাজেটে তার কোন প্রতিফলন নেই। চরম মূল্যস্ফিতির সময় মানুষ যখন আধ পেটা খেয়ে বেচে আছে তখন বিধবা ভাতা, বয়ষ্ক ভাতা জিডিপির মাত্র ১ শতাংশ। তা ছাড়া আরো ২ কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে নেমে এসেছে। তাদের হিসেব কেউ রাখে না। গরীব মারা এই বাজেটের বিপুল পরিমান অর্থ তুলে দেয়া হবে অলিগার্ডদের হাতে। এবারের বাজেটে ভর্তূকি পরিমান রাখা হয়েছে ৮৩ হাজার কোটি টাকা যার অধিকাংশই যাবে বিদ্যুৎ উদপাদন খাতে। এটা ষ্পষ্ট রাষ্ট্রিয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎকেন্দ্র গুলো বসিয়ে রেখে ব্যক্তি মালিকানাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রেগুলোর মালিকদের হাতে ক্যাপাসিটি চার্জ বা বিদ্যুৎ কেনার নামে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে দেয়া হবে। গত ১০ বছরে এক ইউনিট বিদ্যুৎ উদপাদন না করেও এই বিদ্যুগুলো তুলে নিয়েছে ৬৪ হাজার কোটি টাকা। ভারতের আদানী গ্রুপের তৈরি বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২৫ বছরের চুক্তিতে বিদ্যুৎ কিনে বা না কিনে বাংলাদেশ এক লাখ কোটি টাকা তুলে দেবে। তাতে তিনটা পদ্মা সেতু, ৯টি কর্ন ফুলি ট্যানেল ও চারটি মেট্রো রেলের মতো প্রকল্প তৈরি করা সম্ভব। আগষ্টে বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরি হলেও সঞ্চালন লাইনের অভাবে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হবে ৯ হাজার কোটি টাকা। অথচ সামনে আসছে কয়েকটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

পাঁচার করা টাকা ফেরৎ আসার সুযোগ দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশ পাচার হওয়া টাকা বৈধ করার নামে ৭-১৫ শতাংশ কর দিয়ে দেশে ফেরৎ আনার সুযোগ দেয়া হয়েছে, যাতে বিদেশে কখনো টাকা পাচারকারীদের ধড় পাকড় শুরু করলে তারা যেন নির্বিঘ্নে টাকা এদেশে নিয়ে আসতে পারে। ফেরৎ আনার জন্য নয়, পাচারকারীদের নিশ্চিন্তে পাচারে উৎসাহিত করবে এটা। আমি দুদকের ২৭ (১-২)ধারা , মানি ল-ারিং ৪৯(১) ধারা এবং সংবিধানের ২০(২) ধারার সম্পূর্ণ অবৈধ, নিষিদ্ধ, অসাংবিধানিক। গত কয়েকমাসে বাংলাদেশে ৭ বিলিয়ন ডলারের জিনিষ আমদানী হয়েছে। আর এপ্রিল মাসে পৌছেছিল ৮ বিলিয়ন ডলারে। কোভিড পরবর্তি আয়হীন মানুষের ক্রয় ক্ষমতা একবারে তলানীতে এসেছে।

রুমিন বলেন, সরবরাহ ব্যবস্থার সঙ্কটের কারণে ও জাহাজ ভাড়া বাড়ার কারণে দ্রব্যমূল্য নিশ্চয় বেড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আমদানীর নামে বড় অংকের টাকা পাচার করা হয়েছে। নির্বাচন এলে এদেশে পাচার বাড়ে এটা বলছে গ্লোবাল ইনফিনিটি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে বিদেশ টাকা পাচার ১ লাখ কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছিল। ২০১৫ সাল থেকে জাতিসংঘে সরকার আমদানী রপ্তানীর তথ্য দেয়া বন্ধ হয়েছিল। পাচারের এ তথ্য লুকানোর চেষ্টা প্রমান করে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এ পাচারের সঙ্গে জড়িত।

তিনি বলেন, আমাদের জিডিপির আকার বড় করে দেখানো হয়। বড় ব্যবসায়ীদের করপোরেট কর কমেছে। এদেশে এখনো নেই কোনও সম্পদ কর। জিডিপি এবার ৪৪ লাখ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে। এখানে জিডিপি বড় করে দেখানো হয়েছে। ঘুম থেকে উঠলেই আমরা বড় লোক হয়ে গেছি। দেখানো হয় মাথা পিছু আয়ও, কেননা লোকসংখ্যা কম দেখানো হয়। সরকারী হিসেবে ঋণ ৪৫ শতাংশ দেখানো হতো, প্রকৃত হিসেব করলে দেখা যাবে এটা ৭০ শতাংয়ের ওপরে। অর্থাৎ আমরা ঋণের সব ধরনের বিপদ সীমা পার হয়ে গেছি । করের টাকার ১/৫ অংশ চলে যাবে এ ঋণ পরিশোধের জন্য। আজ যে শিশু জম্ম নিচ্ছে তার মাথাও ওপর ঋণ ৯৬ হাজার টাকা ঋণ। এখানে শিক্ষার স্বাস্থ্যের বরাদ্দ কমেছে। মান একেবারে কমেছে, কিন্তু এ খাতে বাজেটে বরাদ্দ কম। আবার সার্বজনীন পেনশনের নামে মানুষের পকেটের টাকা বের করে আনার সুযোগ নিচ্ছে সরকার। যেহেতু পেনশনের টাকা মানুষ আগে থেকে জমা দিতে থাকবে আর পেনশন পেতে শুরু করবে অনেক পরে। তাই সরকারকে সেই টাকা পরিশোধ করতে হবে অনেক বছর পরে। অনাগত সরকারের ঘাড়ে পড়বে এ দায়। লুটপাট করার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকা হাতে পাওয়ার এর চেয়ে আর কিইবা ভালো উপায় থাকতে পারে। আর দুর্নীতি করতেও সুবিধা হবে এর ফলে।

পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অতিরিক্ত খরচের সমালোচনা করে রুমিন বলেন, এ প্রকল্পে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের একটি ঘনবসতীপূর্ণ দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎখাতে কোনও যুক্তি ছিল না। রুশ পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি মেগাওয়ার্ট ইউনিট খাতে ব্যয় হবে ৫০ লাখ ডলার। ভারতে কুদানকুলাম বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রতি মেগাওয়ার্টে ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ ডলার। কেন্দ্রের মূল্য বাবদ লুটপাট হচ্ছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। এখনো পর্যন্ত ১২ বিলিয়ন ব্যয়ে এ প্রকল্পটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ঝুকি তৈরি হয়েছে।

তিনি এসময় পদ্মা সেতু রেল প্রকল্পসহ রামু কক্সবাজারসহ বেশ কিছু প্রকল্পের অধিক ব্যয় হচ্ছে অর্থাৎ লুটপাট বাড়ছে। এগুলো দীর্ঘদিন পরে বাস্তবায়িত হলে এগুলো আয় দেয়া তো দূরের কথা পরিণত হবে শ্বেত হস্তিতে। এসব কারণে বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ আশঙ্খাজনক অবস্থা বেড়েছে।

তিনি বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরের চেয়ে ২০২১-২২ অর্থ বছরে বিদেশী ঋণ বেড়েছে ২০ গুন। জিডিপির সঠিক হিসেব করা হলে বিদেশী ঋণের ২৫ শতাংশ, সঠিক হিসেব করা হলে বিদেশী ঋণ ২৫ শতাংশ হবার কথা।
অনেকগুলো বিদেশী ঋণের গ্রেস পিরিয়ড চলছে, এগুলো শেষ হলে এককালে পরিশোধের চাপ আসবে। শ্রম বাজারের স্বর্ণযুগ এখন শেষ। শ্রীলংকার বর্তমান অবস্থার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বিরোধীদের স্বৈরাচারী মনোভাব, স্বজনপোষন ও দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি, বিরোধীদের দমন পিড়িন , যার সবগুলো আমাদের দেশে বিদ্যমান। তাই আমাদের দেশ শ্রীলংকার মতো হবে না তা হলফ করে বলা মুশকিল, সব কটি ঝুঁকিপূর্ণ ফ্যাক্টর বিদ্যমান।

তিনি বলেন, বর্তমান সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত না হয়ে একের পর এক টার্মে ক্ষমতায় থাকার পরে বাংলাদেশ চরম কতৃর্তবাদী গোষ্ঠীতন্ত্র কায়েম হয়েছে। নিজেদের আখের গুছিয়ে নিজেদের অনাগত বহু প্রজম্মের নিশ্চিন্ত আখের গোছানোর পরে দেশ শ্রীলংকা হলে দোষ কি?

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৪৩ | সোমবার, ২০ জুন ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com