| শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২ | প্রিন্ট
শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর : বাঁশের তৈরি পণ্যে জীবিকা নির্বাহ করছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার তিন শতাধিক পরিবার। বিভিন্ন প্রতিকূলতার মাঝেও ধার-দেনায় পুঁজি খাটিয়ে বাপ-দাদার এই পেশাকে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন তারা।
উপজেলার চন্দ্রকোনা, নারায়ণখোলা, চরকৈয়া, মমিনাকান্দা, বারমাইসা, ছত্রকোনা, বাউসা, মোজার, চিথলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার একমাত্র অবলম্বন বাঁশের তৈরি পণ্য। এ পেশোতেই চলে তাদের জীবন ও জীবিকা।
উপজেলার চরঅষ্টধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা গ্রামের একটি এলাকার প্রায় সব পরিবার এই পেশার সাথে যুক্ত থাকায় এলাকাটি সবার কাছে বেপাড়িপাড়া হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এখানে শিশু থেকে বৃদ্ধ এমনকি শিক্ষার্থীরাও এই পেশায়
জড়িত।
নারীরা সাধারণত সাংসারিক কাজ শেষ করে এবং শিক্ষার্থীরা পড়া লেখার ফাঁকে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির দিনে এই কাজ করে থাকে। তাদের এই কাজের আয় থেকেই পড়া লেখার খরচ চলে যায়। ফলে পরিবারের প্রধানকে তাদের ছেলে মেয়েদের পড়া লেখার খরচ বহন করতে বাড়তি চাপ নিতে হয় না।
নকলার বাঁশ শিল্পীরা বাঁশ দিয়ে সাধারণত ডালা, কুলা, চালনি, পানডালা, মাছ ধরার ঝুড়ি, চাটাই, বিভিন্ন খেলনা, ধান মজুদের ডুলি, ধান রাখার গোলা, মাচা ও বিভিন্ন ধরনের খাঁচাসহ গৃহসজ্জার বাহারি পণ্য ও দৈনন্দিন কাজের নানা রকমের জিনিস তৈরি করেন। বিভিন্ন জেলাতে নকলার তৈরি বাঁশ পণ্যের বেশ চাহিদা রয়েছে। অনেক সময় অগ্রীম টাকা নিয়ে অর্ডার রেখেও তারা কাজ করেন।
এতে করে বাঁশ কিনতে নিজের পকেটের টাকা ব্যয় করতে হয় না। ক্রেতাদের টাকাতে বাঁশ কিনে পণ্য তৈরি শেষে তাদের কাছে অল্প লাভে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা-উপজেলার পাইকাররা এখান থেকে বাঁশের তৈরি পণ্য কিনে নিয়ে তাদের নিজ এলাকায় বিক্রি করে তাদের সংসার চালান।
স্থানীয় বিভিন্ন বাজারের দিনে ২ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার টাকা এবং অন্যান্য দিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে খুচরা বিক্রেতারা ৮০০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকার বাঁশ পণ্য বিক্রি করতে পারেন । তাতে প্রতি খুচরা বিক্রেতার গড়ে প্রতিদিন লাভ থাকে প্রায় ৫০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা। এই টাকাতেই চলে তাদের ছেলে মেয়ের শিক্ষা খরচসহ সংসারের যাবতীয় খরচ ।
এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত নান্টু চন্দ্র বিশ্বাস ও জগদীস চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ‘ আমাদের টাকা পয়সা কম, তাই বেশি করে বাঁশ কিনতে পারি না। ছোট একটা থাকার ঘর ছাড়া আমাদের আর কিছুই নাই। সরকার যদি ব্যাংক থেকে আমাদের এই
কাজের জন্য ঋণ দেয়ার ব্যবস্থা করতো তাহলে আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম। ছেলে মেয়েরে ভালো করে পড়া লেখা করাতে পারতাম। তাতে খালি আমাদের লাভ হতো না, সরকারেরও লাভ হতো।’
আজ ক্ষতিকর প্লাস্টিক পণ্যের ভীড়ে পরিবেশ বান্ধব বাঁশ শিল্প ধ্বংসের মুখে। দিন দিন কমছে বাঁশ শিল্পের সাথে জড়িতদের সংখ্যা। এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রশিক্ষণ এবং সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা। এসব করতে পারলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব বলে মনে করেন অনেকে।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও প্রধানমন্ত্রী এটুআই কার্যালয়ের উদ্যোগে প্রান্তিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রামে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এরই মধ্যে কয়েক ধাপে প্রশিক্ষণ সমাপ্ত হয়েছে, তাছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে তাদের মাঝে নিয়মিত অনুদান ও সহায়তা দেয়া হচ্ছে।
এই বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, বাঁশ দিয়ে কৃষি পণ্য তৈরি করে বাজারজাত করণের মাধ্যমে নকলা উপজেলার অনেক পরিবার জীবিকা নির্বাহ করছে। তবে প্লাস্টিক পণ্য অতি সহজপ্রাপ্য হওয়ায় বাঁশ
শিল্প আজ হুমকির মুখে। বাঁশ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এবং ঘর বাড়িকে প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে বাড়ির আঙ্গীনার পতিত জমিতে বাঁশ রোপণ করার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
Posted ১০:৫২ | শনিবার, ১৬ এপ্রিল ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin