বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বর্তমান পরিস্থিতিতে চুপ থাকা যায় না : আল্লামা শফী’র খোলা চিঠি

  |   রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

বর্তমান পরিস্থিতিতে চুপ থাকা যায় না : আল্লামা শফী’র খোলা চিঠি

sofi

ঢাকা, ২৮ ডিসেম্বর  : হেফাজতে ইসলামের আমীর আল্লামা আহমদ শফী বলেছেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো নাগরিকই চুপ করে বসে থাকতে পারে না। সরকার তার ইচ্ছা অনুযায়ী নির্বাচন করতে গিয়ে শক্তি প্রয়োগ করছে। আইন শৃংখলা বাহিনীকে ব্যবহার করছে। সরকার সমাধানের চেয়ে সমস্যাকে আরো জটিল করে দেশকে  ভয়াবহ সংঘাতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
শনিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো খোলা চিঠিতে এসব কথা বলেন তিনি।
চিঠিতে তিনি বলেন, উলামা-মাশায়েখসহ দেশের সব নাগরিককে বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে এবং ৯০ ভাগ মানুষের ঈমান-আক্বীদা রক্ষায় যার যার অবস্থানে থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহবান জানাচ্ছি। তৌহিদী জনতাকে ঈমান ও ইসলাম রক্ষার আন্দোলনকে আরো বলিষ্ঠভাবে এগিয়ে নেয়ার আহবান জানাচ্ছি।
আল্লামা শফী বলেন, একদিকে রাজনীতিবিদদের একগুঁয়েমী, জেদ ও প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাবের কারণে দেশ ধবংসের দ্বারপ্রান্তে, অন্যদিকে ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির সুপরিকল্পিত চক্রান্তের কবলে পড়ে দেশের অধিকাংশ মানুষের ঈমান-আক্বীদা শুধু আক্রান্তই নয়, দেশকে ইসলামশূন্য করার নানা ষড়যন্ত্রমূলক পদক্ষেপ একের পর এক বাস্তবায়ন চলছে। দেশ, জাতি ও ইসলামের এই চরম দুঃসময়ে আলেম-ওলামা থেকে শুরু করে কারোই চুপ করে বসে থাকার সুযোগ নেই। এই অবস্থায় দেশপ্রেমিক ঈমানদার জনতাসহ সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। ইসলাম বিদ্বেষী শক্তির অপতৎপরতা রোধ, সংবিধানে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাসের নীতি পুনঃস্থাপন, রাসূল (সা.) ও ইসলামের প্রতি কটুক্তিকারী নাস্তিক মুরতাদদের সর্বোচ্চ শাস্তির আইন পাসসহ হেফাজতের ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়ন করতে না পারলে এদেশে ঈমান ইসলাম নিয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।
তিনি বলেন,  দেশে চরম অশান্তি ও অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে। রাস্তায় বের হয়ে মানুষ লাশ হয়ে বাড়ি ফিরছে। নির্বিচারে গাড়ি ভাংচুর এবং জাতীয় সম্পদের ক্ষতি সাধন করা হচ্ছে। নাশকতা প্রতিরোধের নামে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি নির্বিচারে গুলি করে পাখির মতো মানুষ মারছে। ১০ দিনে ১০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার মতো ভয়াবহ নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। যৌথবাহিনী অভিযানের নামে প্রতিবাদি লোকদের গণহারে গ্রফতার করেই ক্ষ্যান্ত হচ্ছে না; তাদের বাড়িঘরে ধবংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। যৌথ বাহিনীর সঙ্গে সরকার দলীয় লোকজনও অংশ নিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের বাড়িঘরে হামলা, অগ্নিসংযোগ এমনকি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিচ্ছে। মা-বোনদের ওপর পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগও আসছে। দেশে সরকারি দল ছাড়া আর কেউ স্বাভাবিক কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না। রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনে বিরোধী পক্ষকে এমনকি হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে শান্তিপ্রিয় আলেম সমাজকে পর্যন্ত কোনো কর্মসূচিই পালন করতে দেয়া হচ্ছে না।
আল্লামা শফী বলেন, দেশের এই ভয়াবহ পরিস্থিতির জন্য মহাজোট সরকারই দায়ি। নির্বাচনকালীন সরকার নিয়েই দেশের এই সংকট। আওয়ামী লীগ সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে একতরফা সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাদ দেয়ার কারণেই এ পরিস্থিতি সৃৃষ্টি হয়েছে। সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সুযোগ নিয়ে সংবিধানকে নিজেদের ইচ্ছামত পরিবর্তন করেছে। এখন সংবিধান রক্ষার দোহাই দিয়ে একদলীয় প্রহসনের নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে। যাতে নির্বাচনের আগেই ১৫৪ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে গেছে। দেশে বিদেশে কেউই এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে না। সবাই একে তামাশার নির্বাচন বলছে। এ পর্যায়ে সরকার আইন শৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর মাধ্যমে বিরোধী পক্ষের ওপর বল প্রয়োগের নীতি অবলম্বন করে পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। এই অবস্থায় দেশের মানুষ চরম আতংকিত এবং ভবিষ্যত নিয়েও শঙ্কিত।
তিনি বলেন, সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তনের পাশাপাশি সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা বাদ দিয়ে ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিযুক্ত করে দেশকে ধর্মহীন রাষ্ট্রে পরিণত করার পথ তৈরী করেছে। এর মধ্য দিয়ে দেশের ৯০ ভাগ মানুষের জন্য ঈমানী সংকট তৈরী করেছে। যার ফলে দেশে নাস্তিক-মুরতাদদের তৎপরতা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। তারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ঈমান-আক্বীদার ওপর আঘাত হানছে। প্রিয় রাসূল (সা.) ও  কুরআন-হাদীস সম্পর্কে অব্যাহতভাবে কটুক্তি করছে। নাস্তিকদের নেতৃত্বে শাহবাগে গড়ে উঠা কথিত ‘গণজাগরণ মঞ্চ’ থেকে ইসলাম বিদ্বেষী নানা দাবি ছাড়াও হিংসা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে সমাজকে কলুষিত করার অপচেষ্টা অব্যাহত আছে। শাহবাগে ইসলামের প্রতীক দাড়ী-টুপী, পাঞ্জাবীর প্রতি অবমাননা করতে দেখা গেছে। নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশার মতো অনৈতিক ও ইসলাম বিরোধী কার্যকলাপ চলতেও দেখেছি। দেখা গেছে সরকারকে এই ইসলাম বিদ্বেষীদের কাজে সহায়তা করতে।
তিনি বলেন, ১৩ দফা ঈমানী দাবিতে হেফাজতে ইসলামের নেতৃত্বে যখন রাজধানীর শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সরকার রাতের আঁধারে ঘুমন্ত আলেম-ওলামাদের ওপর ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা চালিয়েছে। সরকার তারপর থেকে হেফাজতকে স্বাভাবিক কর্মসূচি পালন করতে দিচ্ছে না। আলেম-ওলামাদের গ্রেফতার হয়রানি করা ছাড়াও তাদের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনার মতো কাজও করা হচ্ছে। অন্যদিকে আগের মতোই শাহবাগী নাস্তিকদের মদদ দিয়ে যাচ্ছে। কোনো রাজনৈতিক দলের নেতা কর্মীরা মাঠে নামতে না পারলেও শাহবাগীদেরকে রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে অবস্থান করতে দেয়া হচ্ছে। তারা কূটনৈতিক পাড়ায় গিয়ে পর্যন্ত মিছিল সমাবেশ করে আসছে। অথচ হেফাজতে ইসলাম দেশ-জাতির সংকট উত্তরণে গত ২৪শে ডিসেম্বর মহাসমাবেশ করতে চাইলে সরকার করতে দেয়নি। সরকার উলামা-মাশায়েখদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারও চালাচ্ছে। উলামা-মাশায়েখের সঙ্গে তথাকথিত জঙ্গীবাদকে সম্পর্কিত করে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।
হেফাজত আমীর বলেন, বিরাজমান অবস্থা দেশের কোনো মানুষ মেনে নিতে পারে না। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা সরকারের দায়িত্ব। সরকার সে নিরাপত্তা বিধানে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ। বরং উল্টো সরকারের কারণেই মানুষের জানমালের ক্ষয়-ক্ষতির ঘটনা ঘটছে। বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষকে স্বাভাবিকভাবে সভা-সমাবেশ পালন করতে না দেয়ার কারণে চোরাগোপ্তা  মিছিল সমাবেশ ও ধ্বংসাত্মক কাজের প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে এখানে সবাই নাগরিক অধিকার ভোগ করবে এবং নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় দেশ চলবে, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। এখানে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সাধারণ মানুষকে জিম্মী করে রাখার এই পরিস্থিতি আমরা বরদাশত করতে পারি না। আমরা দেশের এই অবস্থার দ্রুত পরিবর্তন চাই।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৯:০২ | রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com