শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বরফ গলে বেরিয়ে আসছে নিখোঁজ মরদেহ

  |   সোমবার, ২৫ মার্চ ২০১৯ | প্রিন্ট

বরফ গলে বেরিয়ে আসছে নিখোঁজ মরদেহ

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে গলতে শুরু করেছে হিমালয়ের বরফ, পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্টের বিভিন্ন হিমবাহও। সেই বরফ গলতেই বেরিয়ে আসছে দীর্ঘদিন ধরে বরফের নিচে চাপা পড়ে থাকা একের পর এক পর্বতারোহীর মৃতদেহ।

গত একশো বছর ধরে হিমালয়ের তুষারে সমাধিস্থ পর্বতারোহীদের মৃতদেহ বেরিয়ে আসায় সমস্যায় পড়েছেন নেপালের পর্বতারোহী সংস্থার কর্তাব্যক্তিরা। মৃতদেহ বেরিয়ে এলে তা নামিয়ে নিয়ে আসা উচিত কিনা, তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক।

১৯২২ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ হাজার ৮০০ পর্বতারোহী জয় করেছেন পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট। কিন্তু তাদের অনেকেই শৃঙ্গ জয় করার পর নিরাপদে ফিরে আসতে পারেননি। ফেরার পথেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা গেছেন এভারেস্টের বুকেই। অনেকেই আবার শৃঙ্গ জয় করতে যাওয়ার পথেই প্রাণ হারিয়েছেন। এখনও পর্যন্ত সরকারি হিসাবে প্রায় তিনশো পর্বতারোহী এভারেস্ট জয় করতে গিয়ে মারা গেছেন। আর তাদের দুই-তৃতীয়াংশই সমাধিস্থ আছেন এভারেস্টেই। বরফের তলায় চাপা পড়ে যাওয়ার তাদের খুঁজে পাওয়া যায়নি এত দিন।

গত কয়েক বছর ধরে সারা পৃথিবীর সঙ্গে বাড়ছে হিমালয়ের তাপমাত্রাও। আরও বেশি করে গলছে এভারেস্টের বিভিন্ন হিমবাহ। তার ফলেই এত দিন ধরে বরফে চাপা পড়ে থাকা পর্বতারোহীদের মৃতদেহ বেরিয়ে আসছে অনেক বেশি সংখ্যায়। এই পরিস্থিতির মুখোমুখী হয়েছেন নেপাল মাউন্টেনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আং শেরিং শেরপা। তার কথায়, ‘জলবায়ু পরিবর্তন এবং উষ্ণায়নের জন্য দ্রুত গতিতে গলছে হিমালয়ের বরফ আর হিমবাহ। সেই কারণেই বেরিয়ে আসছে একের পর এক মৃতদেহ। এভারেস্টে ওঠার পথে বিভিন্ন জায়গায় তা দেখতেও পাচ্ছেন পর্বতারোহীরা।

তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত আমরা আট জন পর্বতারোহীর মৃতদেহ উদ্ধার করে নিচে নামিয়ে এনেছি। তার মধ্যে কোনো কোনো মৃতদেহ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে বরফের তলায় চাপা পড়ে ছিল।’

নেপাল ন্যাশনাল মাউন্টেন গাইড অ্যাসোসিয়েশনের তরফে সবিত কুয়ার বলেন, ‘বিষয়টি উদ্বেগজনক। সময়ের সঙ্গে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে-এমনটাই আশঙ্কা আমাদের। খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা তা সবাইকে জানাচ্ছি, যাতে কিছু একটা করা সম্ভব হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা মৃতদেহ নামিয়ে আনছি। কখনও আবার শুধুই প্রার্থনা করে পাথর আর বরফ দিয়ে মৃতদেহগুলো চাপা দিয়ে দিচ্ছি।’

এভারেস্টে ওঠার পথে সব থেকে বিপজ্জনক জায়গা হল খুম্ভু হিমবাহ। একশো বছর ধরে এই হিমবাহের আশপাশেই মারা গেছেন সব থেকে বেশি পর্বতারোহী। আর এই অংশেই বরফ গলে বেরিয়ে আসছে সব থেকে বেশি মৃতদেহ।

মাউন্ট এভারেস্টের ওপরের দিকে ক্যাম্পগুলো অত্যন্ত দুর্গম। উচ্চতার কারণে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণও অত্যন্ত কম। সেই উচ্চতা থেকে মৃতদেহ নামিয়ে আনা অনেক সময়ই বিপজ্জনক এবং সময়সাপেক্ষ। এ ধরনের অভিযানের খরচও অত্যন্ত বেশি।

পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা মনে করেন, নেপাল সরকার এবং বিভিন্ন পর্বতারোহণ সংস্থা এক যোগে কিছু করলে তবেই বরফ গলে বেরিয়ে আসা পর্বতারোহীদের সুষ্ঠু ভাবে নিচে নামিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব।

নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে আং শেরিং শেরপা বলেন, ‘কিছু দিন আগেই একটি মৃতদেহ বেরিয়ে এসেছিল পর্বতশৃঙ্গের প্রায় কাছে- ৮৭০০ মিটার উচ্চতায়। মৃতদেহটি ঠান্ডায় জমাট বেঁধে গিয়েছিল। মৃতদেহটির ওজন হয়ে গিয়েছিল প্রায় ১৫০ কেজি। আর তা বেরিয়ে এসেছিল অত্যন্ত দুর্গম একটি জায়গায়। ওই জায়গাটি থেকে মৃতদেহ নিচে নামিয়ে আনতে বেশ কষ্টই হয়েছিল আমাদের।’

পর্বতারোহণের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের অনেকেই অবশ্য মৃতদেহ নামিয়ে আনার বিষয়ে একমত নন। পর্বতে আরোহণ করতে গিয়ে মৃত্যু হলে হিমালয়ের বুকে সমাধিস্থ থাকার পক্ষেই তাদের মত। পর্বতের প্রতি ভালোবাসা থেকেই এ রকম ইচ্ছা তাদের। সে ক্ষেত্রে কোনো পর্বতারোহীকে নামিয়ে আনা তাদের জন্য অসম্মানজনক। তাই মৃতদেহ বেরিয়ে এলে তা নামিয়ে আনা উচিত কিনা, তা নিয়েও শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক।

সূত্র: সিএনএন

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১১:৩৫ | সোমবার, ২৫ মার্চ ২০১৯

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com