| রবিবার, ১৮ মে ২০১৪ | প্রিন্ট
ঢাকা, ১৮ মে : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারতের অভিন্ন নদীর পানি বন্টন নিয়ে সৃষ্ট সমস্যাগুলো আঞ্চলিক। তাই আঞ্চলিক এ সমস্যার সমাধানে দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রসমুহের আঞ্চলিক সংস্থা সার্ককে কাজে লাগাতে হবে। সার্কের মাধ্যমে এর সদস্য রাষ্ট্রগুলোর অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান সম্ভব। এতে সার্ক আরো গতিশীল ও প্রাণবন্ত হবে।
রবিবার বিকালে রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে শত নাগরিক আয়োজিত ‘আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টন ও ব্যবহার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ-ভারত’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, সার্কভুক্ত ৮টি সদস্যরাষ্ট্রের সবগুলোতেই জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকার বিরাজমান। তারা যেকোন ভাবেই ক্ষমতায় আসুক, তারা জনগণের প্রতিনিধি। তাই এদেরকে চাপ দিতে হলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন।
তিনি বলেন, পানি আমাদের বাঁচা-মরার প্রশ্ন। ভারতের পানি আগ্রাসন এখনই প্রতিরোধ করতে না পারলে আজ থেকে এক’শ বা দুই’শ বছর পর এদেশে মরুভূমিতে পরিণত হবে। আর মরুভূমিতে বেচে থাকার কথাতো চিন্তাই করা যায় না। তাই আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
বৈঠকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ায় নদীই বাংলাদেশের প্রাণ। তাই পানির প্রশ্নে আরো ব্যাপক আলোচনা হওয়া উচিৎ। তিনি বলেন, আমাদের দেশের বিদ্যমান পানি সংকট নিরশনে নানা প্রস্তাবনা এসেছে। প্রয়োজনে সবগুলো প্রস্তাবই প্রয়োগ করে দেখতে হবে। কিন্তু দুঃখজনক হলো স্বাধীনতার ৪২ বছর পরেও আমাদের দেশে নেতৃত্বের মধ্যে মতৈক্য নেই। তাই জাতীয় স্বার্থে দেশের জনগনের মধ্যে ঐক্যমত তৈরী করতে হবে।
তিনি বলেন, পানি বন্টন বা ভাগাভাগি মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হলো আমাদের নদীগুলো বাঁচবে কিনা। আগে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচানোর উদ্যোগ নিতে হবে। নদীগুলোকে বাঁচাতে আরো গবেষণা করতে হবে। ভারতকে বুঝাতে হবে। তারা বুঝতে না চাইলে বাধ্য করতে হবে।
তিনি বলেন, ভারত ধনীদের রাষ্ট্র, তারা সবসময় ধনীদের সুবিধার জন্যই কাজ করে। পানি আগ্রাসনের ফলে এই অঞ্চলের মানুষ যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি ভারতেও দরিদ্রশ্রেণীও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই ভারতের দরিদ্র শ্রেণীর সাথে যোগাযোগ করে আন্দোলন জোরদার করতে হবে।
বৈঠকে সাবেক বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, এখন জোর জবরদস্তির আমল চলছে। যারা মনে করছেন, ভারতের কাছে হাত কচলিয়ে কিছু পাওয়া যাবে তারা বোকার স্বর্গে বাস করছেন। অধিকার আদায়ে প্রয়োজন কার্যকর প্রতিরোধ।
তিনি বলেন, যারা ভারতের সাথে বাংলাদেশের অধিকার নিয়ে সোচ্চার তারা যদি ভারতীয় পন্য বর্জন করেন তাহলে দেখবেন আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। কারণ বাংলাদেশ একটি বড় অর্থনৈতিক বাজার অত সহজে কেউ তা হারাতে চাইবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, ৪২ বছর আগে তারা (ভারত) বাংলাদেশ স্বাধীন করার জন্য সহযোগিতা করেছে বলে তাদের কথায় মিউ মিউ করলে কিংবা কুকড়ে গেলে পানি পাওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের স্বার্থে প্রতিনিধিত্ব করে এমন গণতান্ত্রিক সরকার না আসা পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে পানির সমস্যা সমাধান হবে না।
পরিবেশ ও পানি বিশেষজ্ঞ ড. এস আই খান বলেন, আন্তর্জাতিক নীতিমালা ও কনভেনশন লঙ্ঘন করে ভারত একতরফা উজানে বাংলাদেশের পানি সরিয়ে নেয়ার কারণে বাংলাদেশ নদীর প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে। পাতালে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নলকূপে পানি উঠছে না এবং সমুদ্রের লোনা পানি দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করছে। ফলে বাংলাদেশ পরিবেশ ও জীববৈচিত্র ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দেশে মরুকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রফেসর মাহবুব উল্লাহ, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালের ড. সাব্বির মোস্তফা খান, পাওয়ার ডিভিশনের সাবেক সচিব আ ন হ আক্তার হোসেন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কবি আব্দুল হাই শিকদার প্রমুখ।
Posted ১৭:৪৬ | রবিবার, ১৮ মে ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin