শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পথেঘাটে মালিকবিহীন দামি দামি গাড়ি

  |   রবিবার, ২২ জানুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

পথেঘাটে মালিকবিহীন দামি দামি গাড়ি

কদিন ধরে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পথেঘাটে পাওয়া যাচ্ছে মালিকবিহীন দামি দামি গাড়ি। শুল্ক গোয়েন্দারা বলছেন, তাদের চলমান অভিযানে আটক হওয়া থেকে বাঁচতে এসব বেআইনি গাড়ি ফেলে যাচ্ছে মালিকরা। সমাজে মুখ রক্ষা করতে তারা গাড়ি ‘উৎসর্গ’ করছেন।

গত তিন দিনে তিনটি দামি গাড়ি পাওয়া গেছে রাস্তায় ও নদীতে। এগুলো ব্যবহারের জন্য কেনা হলেও শুল্ক আইন মানা হয়নি। ফলে এগুলো লুকিয়ে-চুরিয়ে ব্যবহার অথবা গ্যারেজে রাখা হতো গোয়েন্দাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে।  গত ছয় মাসে এ রকম ১০টি গাড়ি জব্দ করেছে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর বনানী থেকে উদ্ধার করা হয় একটি বিএমডব্লিউ মডেলের গাড়ি। ওই গাড়ির মালিক ছিলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক। তিনি একজন বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর কাছে গাড়িটি হস্তান্তর করে চলে যান। কিন্তু অদ্ভুত একটি নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে গাড়িটি ব্যবহার করতেন বাংলাদেশি ব্যক্তিটি। শর্তভঙ্গ করায় গাড়িটি জব্দ করে শুল্ক বিভাগ।

পরদিন ১৯ জানুয়ারি গাজীপুরের কাপাসিয়ার দস্যুনারায়ণপুর বাজারসংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে পাওয়া যায় একটি টয়োটা প্রাডো গাড়ি। একই দিন  শেরপুরের শ্রীবর্দীর ভায়াডাঙা বাজার থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় টয়োটা অ্যাভাঞ্জা গাড়ি উদ্ধার হয়।
এভাবে রাস্তায় একের পর এক মালিকবিহীন গাড়ি পড়ে থাকার ঘটনা বিগত ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের সময়ও রাজধানীসহ সারা দেশে দেখা গেছে। সেনাসমর্থিত সরকারের অভিযান ও তল্লাশির মুখে অনেক মালিক নিজেদের দামি গাড়ি রাস্তায় ফেলে যেতেন তখন।
মাঝখানে এ ধরনের ঘটনা খুব একটা দেখা না গেলেও গত বছরের জুন থেকে আবার যেখানে-সেখানে মিলতে শুরু করে মালিকবিহীন কিংবা অবৈধভাবে ব্যবহৃত গাড়ি।

গত বছরের ২৯ নভেম্বরে ইউএনডিপির এক কর্মকর্তার শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা  একটি মিতসুবিশি গাড়ি জব্দ করা হয় রাজধানীর উত্তরা থেকে।  স্টিফেন প্রিসেনার নামের ওই কর্মকর্তা বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার সময় শুল্ক আইন ভেঙে গাড়িটি বিক্রি করে যান উত্তরার আশিক নামের এক ব্যক্তির কাছে। তিনি গাড়িটি কূটনৈতিক নম্বরপ্লেট ব্যবহার বেআইনিভাবে ব্যবহার করে আসছিলেন।
এর আগে ১৬ আগস্ট কাকরাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের কার্যালয়ের সামনের সড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়ায় যায় একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি। এর ভেতরে মালিক একটি চিঠিও রেখে যান। এতে লেখা ছিল, ‘আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আমার দখলে থাকা গাড়িটি শুল্ক গোয়েন্দার সদর দপ্তরে জমা করছি।’

শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, গাড়িটি কারনেটের আওতায় দেশে আনা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। শর্ত অনুযায়ী, বিদেশে ফেরত নেওয়ার কথা থাকলেও শর্ত ভঙ্গ করে কারনেটের সুবিধার অপব্যবহার করে এ দেশে চালানো হয়েছিল গাড়িটি।
গত বছরের ১২ জুন রাজধানীর বারিধারা এলাকার স্বদেশ মটরস নামে একটি গাড়ি বিক্রি ও সার্ভিসিং সেন্টার থেকে জব্দ করা হয় দুটি সেডান ও দুটি জিপ। শুল্ক বিভাগ সূত্র জানায়, গাড়িগুলো সেখানে নেয়া হয়েছিল মেরামতের জন্য, শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে আর গাড়ি নিতে যাননি কিন্তু মালিক।

একই বছরের ৯ জুন হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে থেকে দুই কোটি টাকা মূল্যের মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি উদ্ধার করে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। অন্যের নামে কেনা গাড়িটি ভুয়া নম্বরপ্লেট ব্যবহার করে গাড়িটি রাস্তায় চালানো হচ্ছিল। শুল্ক গোয়েন্দাদের অভিযানের খবর জানতে পেরে ভুয়া মালিক গাড়িটি ফেলে পালিয়ে যায়।

এভাবে দামি গাড়ি ফেলে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের একটি সূত্র বলছে, অবৈধ গাড়ির বিরুদ্ধে কঠোরভাবে অভিযান চালাচ্ছে তারা। যাদের কাছে অবৈধ পন্থায় আনা কিংবা কেনা দামি গাড়ি রয়েছে, কিংবা ব্যবহার করছেন তারা সমাজের এলিট শ্রেণীর মানুষ। নিজেদের সম্মানের কথা চিন্তা করে তারা রাস্তাঘাটে গাড়িগুলো ফেলে যাচ্ছেন।
সূত্রটি আরো জানায়, জব্দ করা গাড়িগুলো এখন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের সদর দপ্তরের কার্যালয়ের গ্যারেজ ও ঢাকা কাস্টমস হাউজে। শুল্ক আইনে এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে, জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, কেউ যদি শুল্ক বিভাগের ধার্যকৃত জরিমানা পরিশোধ করে গাড়িটি ফেরত নিতে চায়, তাহলে তা নিতে পারবেন। আর কোনো দাবিদার না থাকলে একসময় এসব গাড়ি নিলামে বিক্রি করবে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

জানতে চাইলে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মঈনুল খান বলেন, ‘আমরা যেসব অভিযান চালাচ্ছি এরই প্রভাবের ফল পথেঘাটে গাড়ি ফেলে যাওয়া।’ শীতলক্ষ্যায় ফেলে যাওয়া গাড়িটিও এর ব্যতিক্রম নয় উল্লেখ করে ড. মঈনুল খান বলেন, ‘গাড়িটি সম্ভবত কারনেট সুবিধায় আনা হয়েছে। তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৬:৫৯ | রবিবার, ২২ জানুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com