| মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮ | প্রিন্ট
ডেস্ক রির্পোট: মতিঝিল বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমানা পার হয়ে টিকাটুলির দিকে যেতে হাতের বাঁ পাশে রাস্তার ওপর দোকান বসেছে ২৭টি। দুই দিন আগেও এই দোকানগুলো ছিল না। শনিবার থেকে নতুন করে এই দোকানগুলো বসছে। রমজানকে সামনে রেখে লাইনম্যানেরা নতুন নতুন হকার বসাচ্ছেন ফুটপাথ ও রাস্তায়। আর ফুটপাথের কোন অংশ কে বরাদ্দ পাবেন তা নিয়ে ফুটপাথকে নিলামে তোলা হচ্ছে। যিনি বেশি টাকা দিবেন তার ভাগ্যেই মিলবে ফুটপাথের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
নিলামে ফুটপাথ বিক্রির স্ট্যান্ড রেট হচ্ছে ৫ হাত বাই ৫ হাত জায়গার জন্য মওসুমি হকারদের কাছ থেকে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা অগ্রীম নেয়া হচ্ছে। তবে শাপলা চত্বরের সোনালী ব্যাংক থেকে পশ্চিম দিক ও আলিকোর গলিতে রেট বেশি। নিলামে কোনো কোনো স্পট ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে এ বিক্রি শুধু ঈদ মওসুমের জন্য। এর বাইরেও তাদের দৈনিক ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। একইভাবে ফুটপাথে হকারদের দখল বদলাচ্ছে বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে। সেখানে পুরনো হকারকে তুলে দিয়ে নতুন হকার বসানো হচ্ছে।
মতিঝিল বিদ্যুৎ ভবনের সামনে নতুন করে পাঁচ-ছয়টি দোকান বসেছে। ফুটপাথে নয়, দোকানগুলো বসানো হয়েছে রাস্তার ওপর। ফুটপাথ লাগোয়া আড়াআড়ি এক সারি গাড়ি রাখা হয়েছে। তারপরে ভ্যানের ওপর পসরা সাজিয়ে বসেছেন হকার। এতে রাস্তার দুই-তৃতীয়াংশ বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তার যেটুকু অবশিষ্ট আছে তা দিয়ে কোনোমতে একটি গাড়ি চলাচল করতে পারে। হকারদের একজনকে রাস্তায় বসার কারণ জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জবাব দেন, ‘কোথায় যাব?’ তিনি জানালেন, নতুন করে এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে। সব ক’টি দোকান ফলের। ওই হকার বললেন, রমজানের ক’দিন শুধু ব্যবসা করবেন।
বিদ্যুৎ ভবন পার হয়ে মতিঝিল পেট্রল পাম্পের সামনে বসেছেন আরো অন্তত ১৫ জন হকার। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হকার বললেন, তারা স্থান ভেদে ১০ থেকে ২০ হাজার টাকা অগ্রীম দিয়েছেন। তিনি যে স্থানটিতে বসেছেন সেখানের অগ্রীম কম। আর বিদ্যুৎ ভবন বা বাংলাদেশ ব্যাংক লাগোয়া ফুটপাথে যারা বসেছেন তাদের বেশি টাকা দিতে হয়েছে। ওখানে ক্রেতাও বেশি।
হকার সংগঠনগুলোর কয়েকজন নেতা জানান, রাজধানীতে এখন মওসুমি হকার আসছেন। রমজানকে উপলক্ষ করে প্রতি বছরই এভাবে মওসুমি হকারেরা রাজধানীতে ভিড় জমান। রমজান মাসে ব্যবসা করে আবার শহর ছেড়ে চলে যান। এই হকারেরা বিভিন্ন স্থানে লাইনম্যান, মাস্তান, প্রভাবশালী ব্যক্তি, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু সদস্য এই হকারদের ফুটপাথ ও রাস্তায় বসার সুযোগ করে দিচ্ছেন। বিনিময়ে তারা আর্থিক ফায়দা লুটছেন। স্টেডিয়াম এলাকার এক ফল বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তিনি ২০ বছর ধরে একই স্থানে দাঁড়িয়ে ডাব বিক্রি করেন। কে কোত্থেকে কত টাকা নেয়, তা মুখস্ত তার। এই চাঁদাবাজদের নাম বললে তার আর ব্যবসা করা হবে না। তিনি বলেন, তার কাছ থেকে দিনে ২০০ টাকা নেয়। মওসুমি হকারদের কাছ থেকে বখরাটা একটু বেশিই নেয়া হয় বলে ওই হকার জানান।
রাজধানীর দিলকুশার রূপালী ব্যাংকের সামনের ফুটপাথ ও রাস্তায় তিল ধারণের ঠাঁই নেই। কাঁচাবাজার থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের পসরা এখানে। স্থায়ী এক হকার জানালেন, রমজানের আগে হকার অনেক বেড়ে গেছে। এখন আর হাঁটারও জায়গা নেই। সবার কাছ থেকে লাইনম্যানেরা টাকা নিচ্ছেন। প্রতি হকারকে অন্তত ২০০ টাকা দিতে হয়।
বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের সভাপতি এম এ কাশেম বলেন, শবেবরাত থেকে শুরু হয়ে যায় মওসুমি হকারদের আগমন। আর এখনতো ফলের সময়। ছোট ছোট টুকরি নিয়ে লাইনম্যানেরা তাদের বসায়। লাইনম্যানেরা পুলিশের লোক। লাইনম্যানেরাই অগ্রীম নেন। কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা অগ্রীম নেন তারা। এই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে মামলা করেও কোনো লাভ নেই। ফুটপাথে চাঁদাবাজির মামলার আসামিরা জামিন নিয়ে চাঁদাবাজি করছেন। সূত্র: নয়া দিগন্ত
Posted ১৩:২৯ | মঙ্গলবার, ১৫ মে ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain