| শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট
এস.এম. জুবাইদ, পেকুয়া : কক্সবাজারের পেকুয়ার মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটি দীর্ঘ দিন ধরে এক প্রভাবশালী দম্পতির হাতেই জিম্মি হয়ে আছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সম্প্রতি ইউএনও, জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসার সহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে স্কুলের বেশ কয়েকজন অভিভাবক এই দম্পতির বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ ও দায়ের করেছেন বলে জানা গেছে।
তথ্যসূত্রে জানায়,ওই স্কুলের এডহক কমিটির বর্তমান সভাপতি তাহমিনা চৌধুরী লুনা। কাগজে কলমে তিনি সভাপতি হলেও মূলত স্কুল পরিচালনা কমিটির বৈঠক থেকে শুরু করে যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন তারই স্বামী স্কুলের সদ্য সাবেক সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আবু হেনা মোস্তাফা কামাল চৌধুরী। এর আগে ৬ মাস করে ২ মেয়াদে এডহক কমিটির সভাপতি ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের নেতা আবু হেনা মোস্তাফা কামাল চৌধুরী। তিনি ২০১১ সাল থেকেই কোন না কোনভাবে এ পদটিতে আঁকড়ে আছেন।
বিধি অনুযায়ী এক ব্যক্তি ২ মেয়াদের বেশী কোন প্রতিষ্ঠানের এডহক কমিটির সভাপতি পদে আসীন থাকার বিধান নেই। আর তাই প্রভাব খাটিয়ে এবার তার স্ত্রীকেই সভাপতি বানিয়ে এনেছেন বলে অভিযোগ স্কুলের অভিভাবকদের। স্ত্রী তাহমিনা চৌধুরী লুনা কক্সবাজার জেলা পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ডের সদস্য ও স্বামী আবু হেনা মোস্তাফা কামাল চৌধুরী জেলা আওয়ামীলীগের নেতা। এই দম্পতির অনুগত দুই শিক্ষকের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে শারিরীক নির্যাতন সহ নানভাবে কোনঠাসা করে পুরো স্কুলকে জিম্মি করে রেখেছেন প্রভাবশালী এই দম্পতি।
অভিযোগ উঠেছে, এ সুযোগে অফিস সহকারী নুরুল ইসলামের সাথে যোগাসাজসে স্কুলের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছেন এই দম্পতি।
স্কুলের অভিভাবকদের দায়ের করা অভিযোগপত্র সূত্রে জানাযায়, বর্তমান এডহক কমিটির মেয়াদ শেষ পর্যায়ে হলেও কৌশলে আবারো এডহক কমিটি ভাগিয়ে আনতে কমিটির মেয়াদ পূর্তির ৮০ দিন পূর্বে স্কুলের ভোটার তালিকা অনুমোদনের কথা থাকলেও গত ২ জানুয়ারী ম্যানেজিং কমিটির বৈঠকে তা এড়িয়ে যান স্কুলের সভাপতি তাহমিনা চৌধুরী লুনা। এতে করে নিয়মিত কমিটি গঠনে কৃত্রিম সংকট তৈরী করা হয়েছে বলে মনে করছেন অভিভাবক মহল। এছাড়াও এই দম্পতির বিরুদ্ধে পরিচালনা কমিটির সভায় এসে স্কুল ফান্ড থেকে ভাতা গ্রহণ, স্কুলের টাকায় ভূরিভোজের আয়োজন, শুধুমাত্র অনুগত শিক্ষকদের প্রাতিষ্ঠানিক বেতন বৃদ্ধি করে স্কুলের আয়ের চেয়ে ব্যয় বৃদ্ধি সহ নানা অভিযোগ তুলে ধরেছেন তারা।
স্কুলের বেশ কয়েকজন শিক্ষক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমান সভাপতি ও তার স্বামীর নানা অনিয়ম দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় দুজন অনুগত শিক্ষককে দিয়ে প্রধান শিক্ষক আখতার আহমদকে শারিরীকভাবে নাজেহাল করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আখতার আহমদ বাদী হয়ে পেকুয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করেছেন। যার তদন্ত করছে পুলিশ।
জানা গেছে স্কুলে পুলিশী তদন্ত নিয়েও বেশ ক্ষিপ্ত হন আবু হেনা মোস্তাফা কামাল চৌধুরী। গত ১১ জানুয়ারী প্রধান শিক্ষকের উপর হামলার ঘটনার তদন্ত চলাকালে কক্সবাজারে অবস্থানরত আবু হেনা মোস্তাফা কামাল চৌধুরী তার ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রধান শিক্ষককে দেখে নেয়ার হুমকি দেন। তার ফেসবুক প্রোফাইল এ এমন স্ট্যাটাস পোস্ট করার সত্যতাও মিলেছে। এমনকি তার পোষ্টে একজনের করা “মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের টাকা লুটে পুটে অনেক খেয়েছেন, আর খাওয়ার চেষ্টা করিয়েন না” এমন মন্তব্যের জবাবে আবু হেনা মোস্তাফা কামাল চৌধুরী লিখেন, “এটা আমার বাপ দাদার স্কুল তাই আমাদের জন্য সবকিছুই হালাল। এ পর্যন্ত আমি স্কুল থেকে ৩০ হাজার টাকাও অনারিয়াম নিনাই কিন্তু ১৪ লক্ষ টাকার অনুদান এনে দিয়েছি।”
স্কুলের অভিভাবক আবুজর গেফারী খোকা, ওবায়দুল হাকিম আনিছ, হামিদুর রহমান, খালেদ বিন সমদ, আবদুল হক সহ অন্তত ১৫ জন অভিভাবকের সাথে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা জানান, “শুধু ২/১ বছর নয় বিগত ২৫ বছর ধরেই মগনামা স্কুলটি মগনামার কতিপয় প্রভাবশালীর হাতেই জিম্মি। তারমধ্যে ২০১১ সাল থেকে অদ্যবধি কোন না কোনভাবে আবু হেনার হাতেই জিম্মি রয়েছে স্কুলটি। কমিটির দ্বন্ধে পড়ালেখার পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যত নিয়েও আমরা শংকিত আছি। স্কুলের সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে স্কুলের দায়িত্ব অর্পনের দাবি জানাচ্ছি।”
এদিকে স্কুলের প্রধান শিক্ষক আখতার আহমদ জানান, “শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রতি যত্মবান হতে চাপসৃষ্টি করতে গিয়ে শিক্ষকদের বিরাগভাজনের পাশাপাশি নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলায় সভাপতিরও চক্ষুশূলে পরিণত হয়েছি। আমাকে শারিরীকভাবে নাজেহাল সহ নানাভাবে হুমকি ধমকি দেয়া হচ্ছে। আমি ঐতিহ্যবাহি মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়টি রক্ষায় মাননীয় শিক্ষামন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।”
এ নিয়ে এডহক কমিটির সভাপতি তাহমিনা চৌধুরী লুনার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “আবারো এডহক কমিটির সভাপতি হতে নয় মূলত প্রধান শিক্ষকের অসহযোগিতার কারণে ভোটার তালিকা অনুমোদন দেয়া হয়নি। আর আমি স্কুল থেকে ভাতা গ্রহণের বিষয়টি সঠিক নয়।” ঠিক ৮০ দিন পূর্বে অনুষ্ঠিত ২ জানুয়ারীর ম্যানেজিং কমিটির সভায় ভোটার তালিকা অনুমোদন না দিয়ে পরবর্তী সভায় অনুমোদন দিলেও তা বিধি অনুযায়ী হত কিনা জানতে চাইলে তিনি সঠিক কোন উত্তর দিতে পারেননি। ২৫ বছর ধরে স্কুলটি চৌধুরী বাড়ীর হাতে জিম্মি কিনা জানতে চাইলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান।”
এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার নাছির উদ্দিন জানান, “মগনামা উচ্চ বিদ্যালয়ের সবগুলো বিষয় নিয়ে আমি অবগত আছি। আমার উর্ধ্বতন মহলকেও আমি বিষয়গুলো জানিয়েছি। সভাপতি সাহেবকে আমি অনুরোধ করার পরও তিনি বিধি বহির্ভূত কিছু কাজ করছেন যা অত্যন্ত দু:খজনক। শংকার জায়গা হচ্ছে, অপ্রয়োজনীয় বাড়াবাড়িতে স্কুলের পড়ালেখার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। আমি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে এর একটা বিহীত করার চেষ্টা করছি।”
এদিকে বিধি অনুযায়ী নির্বাচনের মাধ্যমে স্কুল পরিচালনা কমিটি গঠন সহ প্রভাবশালী দম্পতির জিম্মিদশা থেকে স্কুলকে মুক্ত করতে জেলা শিক্ষা অফিসার ও বোর্ড চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করে আবেদন করেছেন স্কুলের কয়েকশ অভিভাবক। স্কুলের পড়ালেখার স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষা বোর্ডের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
Posted ১৬:৫৯ | শনিবার, ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin