বৃহস্পতিবার ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশব্যাপী ৭২ ঘন্টার অবরোধ

  |   মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩ | প্রিন্ট

nazrul islam khan

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা: চতুর্থ দফায় দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টার রাজপথ, রেলপথ ও নৌপথ অবরোধের ডাক দিয়েছে ১৮ দলীয় জোট।  মঙ্গলবার ভোর ৬টা থেকে আগামী শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত সারাদেশে এ অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে ১৮ দল।

সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানস্থ কার্যালয়ে  এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে এ অবরোধ কর্মসূচির ডাক দেয়।
সামনে আরো কঠোর কর্মসূচি আসছে বলেও তিনি সংবাদ সম্মেলনে জানান।
সূত্রমতে তিনদিন পর তা বাড়িয়ে সাতদিন করা হতে পারে।
নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সমঝোতায় আসতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি তৃতীয় দফা বৈঠক করলেও সঙ্কটের সমাধান আর হচ্ছে না। তাই বৈঠকও হচ্ছে না। এ অবস্থায় বিজয় দিবসের পরদিন মঙ্গলবার থেকে আবারো নৌপথ রেলপথ ও সড়ক পথ অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচিতে বিরোধীদলীয় জোট।
জাতিসংঘ দূতের উদ্যোগে নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কটের একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করতে এ পর্যন্ত তিন দফা বৈঠক করেছে দেশের প্রধান দু’দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গত শুক্রবার অনুষ্ঠিত সর্বশেষ বৈঠকে দুই দলই পরস্পরকে কিছু প্রস্তাব দেয়। বিএনপির পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার বিকল্প হিসেবে তিনজনের নামও প্রস্তাব করা হয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার ক্ষমতা কিছুটা খর্ব করার প্রস্তাব দেয়া হয়।
এসব প্রস্তাব দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামে আলোচনা করে খুব শিগগিরই আবার বৈঠকে বসার কথা জানায় দুই দল।
বৈঠক শেষে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আমরা কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছি, তারাও দিয়েছেন। প্রস্তাবগুলো নিয়ে নিজেদের দলীয় ফোরামে আলোচনা হবে। শিগগিরই আমরা আবার আলোচনায় বসবো।’
কিন্তু শনিবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মহাজোটের ১৫৪ জন প্রার্থী বিজয়ী হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট সঙ্কট নিরসনে বৈঠক ও সমঝোতার আর কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগের নেতাদের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট।
উল্লেখ্য, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিন ২৬ নভেম্বর থেকে শুক্রবার ছাড়া তিন দফায় ১৫ দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি নেতৃত্বধীন ১৮ দলীয় জোট। গত শুক্রবার সকাল ৬টায় এই কর্মসূচি শেষ হয়।
নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে অবরোধ কর্মসূচির পাশাপাশি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় সংলাপের টেবিলে বসেছিল বিএনপি। রাজপথে প্রতিবাদী নেতাকর্মীদের ওপর চরম দমন-পীড়নের মুখেও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে হেঁটেছিল ১৮ দল। কিন্তু দু’পক্ষের অনড় অবস্থানের কারণে ভেস্তে গেছে সংলাপ। সরকার দশম জাতীয় নির্বাচনের ঘোষিত তফসিল বাতিল বা স্থগিত না করায় শেষ হয়েছে বিরোধীদলের অংশগ্রহণের সুযোগ। রাজপথের আন্দোলনে প্রতিদিন বাড়ছে নেতাকর্মীদের লাশের সংখ্যা। দীর্ঘ হচ্ছে গুম-নিখোঁজের মিছিল। এমন অবস্থায় নির্দলীয় সরকারের দাবিতে এভাবেই একের পর এক আসছে ১৮দলের সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা।
প্রেস ব্রিফিং                                             তারিখঃ ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আজ মহান বিজয় দিবস। ৪২ বছর আগে এই দিনে লাখো শহীদের পবিত্র রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছিলাম কাঙ্খিত বিজয়। বিজয়ের এই দিনে আমি মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি প্রত্যক্ষ ও পরোক্তভাবে যারা এই বিজয় অর্জনে অংশ নিয়েছেন সহযোগীতা করেছেন, ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাদের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি যিনি জাতির সেই ক্রান্তিকালে সিদ্ধান্ত ও দি-নির্দেশনা দেয়ার দুঃসাহস দেখিয়ে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। পরম মমতায় স্মরণ করছি একাত্তরের রণাঙ্গনের সাথীদের প্রতি যাঁরা কেউ শহীদ হয়েছেন, কেউ পঙ্গু হয়েছেন আর যাঁরা আমার মতো বেঁচে থেকে অবাক বিষ্ময় বেদনার ও ক্ষোভের সাথে তাদের মহান অর্জন স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ধ্বংস হতে গণতন্ত্রের চালিকা শক্তি নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত হতে দেখছেন।
বন্ধুরা,
আপনারা জানেন, জনমত এবং গণদাবিকে তোয়াক্কা না করে সরকার আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে একটি প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে আাশ্চর্যের বিষয় এই যে, প্রায় দেড় শতাধিক প্রার্থী এই প্রহসনের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরণের নির্বাচনের কোন নজীর নেই। গণদাবির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে প্রধান বিরোধী দলকে বাদ দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সরকারী উদ্যোগ জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে পরিগণিত হবে। সকল দলকে নিয়ে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার জন্য আওয়ামী লীগ এক সময় তুমুল আন্দোলন করেছিল সেই আওয়ামী লীগ কেবলমাত্র ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার স্বার্থে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা থেকে সরে এসে নিজেদের অধীনে সাজানো নির্বাচন করতে উদ্যত হয়েছে। পাতানো নির্বাচনে ১৫৪ আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় সাংসদ নির্বাচিত হওয়া-এ কোন গণতন্ত্র? গণতন্ত্রের ভুয়া লেবাস পরে গণতন্ত্র ধ্বংসের খেলায় যারা নিজেদের যুক্ত করলো জাতি তাদেরকে কোনদিনই ক্ষমা করবেনা।
সাংবাদিক বন্ধুরা,
দেশবাসী অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করছে-বিএনপি সরকারের আমলে গঠিত র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন অর্থাৎ র‌্যাবকে বর্তমান সরকার তাদের নিজস্ব পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করে র‌্যাব-এর ভাবমূর্তি ও মর্যাদাকে ভুলুন্ঠিত করেছে। বিরোধী নেতা-কর্মীদের হত্যা, গুম এবং অপহরণের মতো অপকর্মে নিয়োজিত করার মাধ্যমে সরকার র‌্যাব এর গৌরবোজ্জল ভূমিকাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আওয়ামী শাসনামলের দীর্ঘ পাঁচ বছরে র‌্যাব এর দ্বারা সংঘটিত হত্যা, গুম ও অপহরণের মাত্রা বর্তমানে আরো বহু গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে র‌্যাব-পুলিশ কর্তৃক বিরোধী নেতা-কর্মীদের নির্মমভাবে হত্যা ও গুমের পৈশাচিক ঘটনায় আমরা তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই, দেশ-বিদেশী প্রচার মাধ্যমের কাছে আমাদের অনুরোধ এ অমানবিক চিত্রগুলো তুলে ধরে বিপন্ন মানবতার পাশে দাঁড়ান।
সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা,
এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকে নিয়ে সরকারের নাটক জাতির নিকট আরো একটি কুৎসিত অধ্যায় রচনা করলো। অসুস্থতার নামে এরশাদকে হাসপাতালে ভর্ত্তি নয় বরং তাকে যে গ্রেফতার করা হয়েছে তা বিভিন্ন গণমাধ্যমে এরশাদের স্বীকারোক্তিতেই জাতি জানতে পেরেছে। একদিকে এরশাদকে হাসপাতালে বন্দী রাখা অপরদিকে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও এরশাদ পতœীর সঙ্গে সরকারী দলের নেতাদের বৈঠকের রহস্যজাল জাতির নিকট বোধগম্য এতে আরো বোঝা যায যে, প্রহসনের নির্বাচনকে আরো বেশী সংকটাপন্ন করে তোলা হচ্ছে। গণমাধ্যমে পাতানো নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এরশাদের প্রকাশ্য ঘোষণা, পাশাপাশি জাতীয় পার্টির সকল প্রার্থী এরশাদের নির্দেশে মনোনয়নপত্র বাতিলের জন্য ইতোমধ্যে আবেদন করা সত্ত্বেও মনোনয়নপত্র বাতিলের আইনী বাধ্যবাধকতা না মেনে সরকারের নির্দেশে বিশেষ কিছু আসনে মনোনয়নপত্র বহাল রাখার ঘটনায় প্রকারন্তরে মনে হচ্ছে সরকারী কর্মকর্তা নয় বরং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মাঠকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। আমরা সরকারের উদ্দেশ্যে অত্যন্ত দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই-নির্বাচনী মাঠে কানামাছি খেলা বন্ধ করুন, সকল নাটকের অবসান ঘটান, নির্বাচনী তফশীল বাতিল ঘোষনা করুন, জাতিকে চরম নৈরাজ্যের কবল থেকে মুক্ত করুন, নইলে এদেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আপনাদের নিরাপদ প্রস্থানের পথটুকুও বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে।
সংগ্রামী বন্ধুরা,
আজ মহান বিজয় দিবসের মতো একটি আনন্দঘন দিনেও বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর নৃশংসতা থেমে নেই। আজ লক্ষীপুর জেলার দিঘলী ইউনিয়ন বিএনপি’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান বাবুল এবং যুবদল নেতা সুমনসহ ৪ জনকে র‌্যাব অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করেছে, সাতক্ষীরায় যৌথ বাহিনী সাঁড়াশি আক্রমণ চালিয়ে ৭ জন এবং নীলফামারীতে ৩ জন নেতা-কর্মীকে আজ ইতোমধ্যে হত্যা করা হয়েছে, সেসব স্থানে শত শত নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়েছেন বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। শুধু তাই নয়, লক্ষীপুরে বিরোধী দলীয় ২ জন নেতা-কর্মীর লাশ গুম করা হয়েছে, অনুরুপভাবে সাতক্ষীরাতেও লাশ গুম করা হয়েছে বলে আমরা আশংকা করছি। কলারোয়া কৃষকদলের সভাপতি আশরাফ হোসেনসহ ৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলায় ছাত্রদলের দু’জন নেতা গুরুতর আহত হয়েছেন। এভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকারের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের হত্যা ও গুরুতর জখম করা হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে শত শত নেতা-কর্মীকে। গতকাল লক্ষীপুর, নোয়াখালী ও নীলফামারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকার বিরোধী দল নিধনের অংশ হিসেবে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীকে দলীয় ক্যাডারের ভূমিকায় অবতীর্ণ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্যকে দিয়ে নির্বিচারে ৯জন বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। আজও সাতক্ষীরা, লক্ষীপুর ও নীলফামারীতে সরকারের বিভিন্ন বাহিনী দিয়ে সন্ত্রাসী ধরার নামে নির্বিচারে বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে। আমরা দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই-এদেশের সমাজ ও রাজনীতিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক সংগঠনগত পাঁচ বছরে শান্তিপূর্ণভাবে যে সকল রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো পালন করে আসছে তার কোনটিই সরকার উস্কানি ব্যতিরেকেই বেধড়ক লাঠি চার্জ, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও গুলী বর্ষণ ছাড়া করতে দেয়নি। একটি গণতান্ত্রিক সভ্য সমাজে মত প্রকাশ এবং কথা বলার অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত হলেও অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এই যে, এ দেশের জনগণ সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমগুলোকেও নিয়ন্ত্রণ করে সমস্ত ঘটনার দায় বিরোধী দলের ওপর চাপানো হচ্ছে। প্রবীন সাংবাদিক শফিক রেহমানের বাড়ির সম্মুখে পেট্টোল বোমা নিক্ষেপ, দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকা অফিসে বোমা ও গুলি বর্ষণে ঘটনা ঘটেছে। অপর দিকে সরকার তাদের বিভিন্ন বাহিনী ও এজেন্ট দিয়ে দেশব্যাপী নাশকতা চালিয়ে বিরোধী দলের ওপর দোষারোপ করার অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। আজ দেশের প্রায় সব জাতীয় দৈনিকে এসব নাশকতার ঘটনায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের জড়িত থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছে। নোয়াখালীতে বিচারপতির বাসভবনে পেট্রোল বোমা হামলার ঘটনায় তিন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী আটক হয়েছে। তাছাড়া, সাতক্ষীরায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের দু’টি বাড়িঘর পুড়িয়ে পালানোর সময় যুবলীগ নেতা আবদুল গফফারকে হাতে-নাতে আটক করা হয়। আবদুল গফফর জানিয়েছে-স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার নির্দেশে সে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষদের বাড়িতে আগুন লাগায়। আবদুল গফফার এই ঘটনার সাথে আরো তিনজনের জড়িত থাকার কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে। ইতোপূর্বে বিভিন্ন নাশকতার ঘটনায় আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ধরা পড়েছে। এর মাধ্যমে সরকারের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে। আমরা মহান বিজয় দিবসেও সরকারের বিভিন্নবাহিনী কর্তৃক সারাদেশে হত্যা, নির্যাতন, গ্রেফতার এবং নাশকতা মূলক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বিএনপি চেয়ারার্সন, ১৮ দলীয় জোট নেতা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর হাতে নিহতদের বিদে
হী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর হাতে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তি ও নিখোঁজ নেতা-কর্মীদের জনসমুক্ষে হাজির করারও জোর দাবি জানাচ্ছি।
প্রিয় বন্ধুরা,
পত্রিকায় পড়েছি, সরকারের আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগীতা করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠনসমূহকে এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ এতোদিন অঘোষিতভাবে হলেও এবার সরকার ঘোষণা দিয়েই দলীয় বাহিনীকে বিরোধী দলের আন্দোলন দমনে মাঠে নামাচ্ছে। এর ফলে নিশ্চিতভাবেই সহিংসতা বাড়বে এবং জনগণের জান-মালের ক্ষতি বাড়বে। দেশকে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে ঠেলে দেয়ার এমন সিদ্ধান্ত শুধু হঠকারী নয় আত্মঘাতি। আমরা অবিলম্বে এই অন্যায়, অনৈতিক, হঠকারী ও বেআইনী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,
আপনারা জানেন যে, দীর্ঘদিন ধরেই আমরা জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে আসছি। দেশের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ, সরকারি দল ও তাদের কয়েকটি আর্শিবাদপুষ্ট দল ছাড়া দেশের সবগুলো রাজনৈতিক দল-এমন কি মহাজোটের অন্তর্ভূক্ত কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দল, দেশের সকল শ্রেণী-পেশার সংগঠন এবং বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের সাথে আমরাও চেয়েছি অবাধ, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ ও সকলের অংশগ্রহণে একটি অর্থবহ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচন। কিন্তু সরকার নিশ্চিত পরাজয়ের ভয়ে জনগণের দাবি না মেনে আন্দোলনে রত জনগণের উপর নিষ্ঠুর-নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক তৎপরতার পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। গায়ের জোরে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী হওয়ার লক্ষ্যে সংবিধান সংমোধন করে সংসদ ও সরকার বহাল রেখে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথ বন্ধ করে দিয়েছে। সভা, সমাবেশ, মিছিলে গুলি চালিয়ে পাখির মত মানুষ মারছে (এমন কি পাখি মারাও আইনত নিষিদ্ধ)। জনতার আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য স্বৈরাচারী সরকার রাষ্ট্রীয় বাহিনীসমূহকে দলীয় বাহিনী, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সমূহকে দলীয় প্রতিষ্ঠান এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাকে দলীয় সংকীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করে দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। নির্বাচনের নামে চলছে এক অভিনব নাটক। ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা আমরা শুনেছি কিন্তু এবার দেশবাসীর সাথে অবাক বিস্ময়ে গোটা বিশ্ব প্রত্যক্ষ করলো এক প্রার্থী বিহীন নির্বাচন। ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। অর্থাৎ কারো ভোট ছাড়াই সরকার গঠন করার মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত করা হয়েছে। দেশের মোট ভোটারগণের অর্দ্ধেকেরও বেশি ভোটারকে ভোটদানের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। বশংবদ এক নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে এমন কি ব্যাকডেট দিয়ে জমা দেয়া দরকাস্তের ভিত্তিতে যাদেরকে নির্বাচিত দেখানো হয়েছে তারা কেউই জনগণের দ্বারা নির্বাচিত নন। তারা তাই প্রকৃত পক্ষে জনগণের প্রতিনিধিও নন। কাজেই সরকার ও বিরোধী দলের অসাধু ও অভিনব আসন ভাগাভাগির এই নির্বাচন ও নির্বাচিত সংসদ কোনটাই দেশের জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। এই নির্বাচনী প্রহসন বর্জন এবং তা বন্ধ করার দাবি ও আন্দোলন যে যথার্থ ছিল আজ তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট।
প্রিয় বন্ধুগণ,
নির্বাচনকালীন সরকারের ধরন এবং সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। পাশাপাশি জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় আলোচনাও শুরু হয়েছে। কিন্তু সরকার তার নির্বাচনী নাটক বন্ধ করেনি। আওয়ামী লীগ নেতা বাবু সুরঞ্জিত সেন গুপ্তের ভাষায় একটা “যেন তেন নির্বাচন” করে তারা ক্ষমতায় থাকতে চায়। কিন্তু জনগণ আর এই সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তারা একটি অবাধ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিয়ে তাদের নির্যাচিত সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। জনগণের এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে, এই নির্বাচনী প্রহসন বাতিল করে অবিলম্বে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সকলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আমরা ১৮ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে আগামীকাল ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গরবার সকাল ৬টা থেকে ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টা অবিরাম শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচি পালনের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত গণতন্ত্রকে সুরক্ষার জন্য দেশবাসী স্বত:স্ফূর্তভাবে এই কর্মসূচি সফল করবেন বলে আমরা আন্তরিকভাবে বিশ্বাস করি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ইতোপূর্বে বহুবার বলেছেন যে, নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবি মেনে নেয়া হলে সে বিষয়ে অর্থবহ আলোচনায় বিরোধী দল সব সময়ই প্রস্তুত। সরকার জনগণের এই আকাক্সক্ষা পূরণে সম্মত হয়ে ঘোষণা দিলে তিনি আন্দোলন স্থগিত করারও আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা আশা করবো, সরকার বাস্তবতা অনুধাবন করে যুক্তির পথে আসবেন এবং জনগণের দাবি মানবেন। এটা যত দ্রুত হবে-ততই জনগণ খুশি হবে। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০০:০৪ | মঙ্গলবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৩

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

তোমার পথও চেয়ে !!
(3676 বার পঠিত)
নবীজির উম্মত
(2075 বার পঠিত)
তর্জনী
(826 বার পঠিত)
google5e999233a8e2dbce
(639 বার পঠিত)
advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com