শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জাল স্বাক্ষরে দলিল রেজিস্ট্রির চেষ্টা!  আটকে দিল সাব রেজিস্ট্রার!! ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা 

  |   বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ | প্রিন্ট

জাল স্বাক্ষরে দলিল রেজিস্ট্রির চেষ্টা!  আটকে দিল সাব রেজিস্ট্রার!! ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার অপচেষ্টা 
এম এম হারুন আল রশীদ হীরা; নওগাঁঃ  নওগাঁর বদলগাছীতে জাল স্বাক্ষরে জাল দলিল! রেজিষ্ট্রির সময় জালিয়াতী ধরে ফেলেন সাব  রেজিস্ট্রার   তবে ব্যবস্থা গ্রহণের নামে চলছে নানা রকম তালবাহানা!! ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে।  অভিযোগে জানা গেছে,  বদলগাছীতে  ভুয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করে ভূয়া কাগজ তৈরীর পর জাল দলিলে জমি রেজিস্ট্রি করার জন্য চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে বদলগাছী দলিল লেখক সমিতির সদস্য  দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে।  ভূয়া কাগজে ভূয়া স্বাক্ষর করে জাল দলিল তৈরির অভিযোগে আবদুর রাজ্জাক নামের এক দলিল লেখকের দলিল স্থগিত করা হয়।
জালিয়াতি মাধ্যমে দলিল রেজিস্ট্রির ঘটনাটি উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার কে জানানো হলেও ঘটনার ৫ দিন পেরিয়ে গেলেও কোন ব‍্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে সচেতন মহলের অভিমত।  এক প্রভাবশালী চক্র প্রভাবিত হয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার  চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ ও করেছেন স্থানীয়রা । গত ১৮ (সেপ্টেম্বর) রোববার বদলগাছী সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে  বদলগাছীর মিঠাপুর ইউপির  গন্ধর্বপুরের  জমি রেজিস্ট্রির সময় এ ঘটনাটি ঘটে।
সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয় ও জমির মালিক সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দ সালের ৪২৭৪ নং দলিল মুলে  উপজেলার গন্ধর্বপুর গ্রামের আয়েজ উদ্দীন প্রাপ্ত হয়ে দানপত্র একটি দলিলের মাধ্যমে তার স্ত্রীর নামে জমি লিখে দেন। উক্ত দলিল মুলে আমেনা বেগম তার তিন কন্যা ও এক নাতীর নামে হেবার ঘোষণা দলিল রেজিস্ট্রি দেওয়ার জন্য চেষ্টা করেন। আর এ কাজে সহযোগীতা করেন, বদলগাছী সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাক (লাইসেন্স নং-৭৪)। তিনি বদলগাছী দলিল লেখক সমিতি সদস্য। দলিল লেখক হেবার ঘোষণা দলিল রেজিস্ট্রি করার চেষ্টা করেন। আমেনা বেগমের দলিলে ১৯৭৬ সালের একটি দলিলের রেফারেন্স আছে।
উক্ত রেফারেন্স দলিলটি আমেনা বেগমের কাছে না থাকায় দলিল রেজিস্ট্রি করতে পারছিলেন না। তাই তিনি দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাকের স্মরনাপন্ন হন। দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাক নিজ দায়িত্বে উক্ত দলিলের সার্টিফাইড কপি সংগ্রহ করে গত ১৯/৯/২২ ইং তারিখ (রোববার) দুপুরে সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে দলিল রেজিস্ট্রি করতে আসলে সাব-রেজিস্ট্রার মাসুদ পারভেজ দলিলটি পর্যালোচনা করে দেখেন  যে ১৯৬৩ ও ১৯৬৮সনের রেফারেন্স কৃত দলিল দুটি জাল ও সার্টিফাইট কপিটি ০৫/০১/২০২২ ইং তারিখে সদর সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামান এর স্বাক্ষরিত। অথচ তিনি (মনিরুজ্জামান) উক্ত তারিখের পূর্ব থেকেই ও-ই  অফিসে আর  কর্মরত নেই। তার স্বাক্ষরটি জাল মর্মে প্রতীয়মান হওয়ায় দলিল রেজিস্ট্রি বন্ধ করে দেন ।
সরেজমিনে জমির দাতা আমেনা বেগম বলেন, আমার স্বামী মৃত্যুর আগে আমাকে জমি রেজিস্ট্রি করে দেন। আমার বয়স হয়ে গেছে তাই আমি আমার নামীয় জমি তিন মেয়ে ও এক নাতীকে রেজিস্ট্রি করে দিবো। বার্ধক্যজনিত কারণে আমি অন্যের সাহায্য ছাড়া চলাফেরা করতে পারিনা। তাই এ বিষয়ে দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাকের সাথে পরামর্শ করলে তিনি কাগজ পত্র দেখে বলেন, রেফারেন্স একটা দলিল লাগবে। আমি বলি ওটাতো আমাদের কাছে নাই। তখন তিনি বলেন, রেফারেন্স দলিল পাওয়া যাবে তবে টাকা লাগবে। আমি দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাক কে টাকা দিলে তিনি কাগজ পত্র
ঠিক করে দলিল রেজিস্ট্রি করার জন্য আমাকে গত ১৮/৯/২০২২ ইং তারিখ রোববার অফিসে আসতে বলেন। আমি আমার মেয়ে ও নাতীকে সাথে নিয়ে রেজিস্ট্রি অফিসে আসি।আমরা সাব-রেজিস্ট্রার সাহেবের কাছে গেলে তিনি কাগজপত্র দেখে রেফারেন্স দলিলে সাব-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষর জাল বলে আমাদেরকে সহ দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাককে আটকে রেখে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও থানা পুলিশকে ফোন করেন। সাথে সাথেই তারা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আসেন।
দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাক বলেন, আমেনা বেগম তার মেয়ে ও নাতীকে জমি রেজিস্ট্রি করে দিবেন। তাদের দেওয়া কাগজপত্র দেখে আমি দলিল লিখে সাব-রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে নিয়ে যাই। স্যার কাগজপত্র দেখে রেফারেন্স দলিলের সাটিফাইড কপিতে সদর সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষর জাল বলে দলিলসহ আমাকে আটকে দেন। জাল স্বাক্ষরের বিষয়ে আমেনা বেগম জানেন।  আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। তবে সাব-রেজিস্ট্রার স্যার আমেনা বেগমের নামে আমাকে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন তাই আমেনা বেগমের নামে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।
এ ব‍্যপারে আমিনা বেগমের মেয়ে জমির গ্রহিতা ফুলবানু বলেন, আমাদের জমির সকল কাগজপত্র না থাকার ব‍্যপারটি দলিল লেখক আবদুর  রাজ্জাক কে ২৬হাজার টাকার মাধ্যমে চুক্তি করা হয়। তিনি বলেন এই টাকা হলে সব কাগজপত্র  আমিই ঠিকঠাক করে আনবো।
 জাল কাগজ তৈরী করে তাতে ভূয়া স্বাক্ষর ব্যবহার করে জাল দলিল পার করার সময় দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাকের ওই দলিলটি  সাব রেজিস্ট্রার জাল সনাক্ত করে  হাতে নাতে ধরে ফেলেন। এঘটনার পর মূলহোতা জাল কাগজ তৈরীর অভিযোগে অভিযুক্ত দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাক কে এখন বাঁচাতে জালিয়াতীর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ও উঠেছে বিভিন্ন মহলে।
এ ব‍্যপারি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি মখলেছার রহমান বলেন, দাতা যে দলিলপত্র সাপ্লাই  দেয় সেই দলিলের মতেই দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাক কাজটি করেছেন। কাগজ যে সাপ্লাই দিয়েছে তার বিরুদ্ধে ব‍্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাব-রেজিস্ট্রার মাসুদ পারভেজ বলেন, দাখিলকৃত সার্টিফাইড কপিতে নওগাঁ সদর সাব-রেজিস্ট্রার মনিরুজ্জামানের স্বাক্ষর জাল প্রমানিত হওয়ায় দলিলটি আটকে দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে আইনী কি পদক্ষেপ নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, দলিল লেখক আবদুর রাজ্জাক কে মৌখিকভাবে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। আর আমার উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশে বিষয়টি আমি তদন্ত করছি। তদন্ত শেষে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ ব‍্যপারে উপজেলা সহকারী ভূমি কমিশনার আতিয়া খাতুন জানান, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ব‍্যপারে আমি সাব রেজিস্ট্রারকে মামলা দিতে বলেছি।
Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:২০ | বৃহস্পতিবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com