শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গুলিস্তানে জমে উঠেছে ‘টাকার হাট’

  |   সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২ | প্রিন্ট

গুলিস্তানে জমে উঠেছে ‘টাকার হাট’

চকচকে টাকার নোট পেলে কে না খুশি হয়? নতুন দুই টাকা থেকে শুরু একশ টাকার নোট ছোট-বড় সবার কাছেই প্রিয়। অনেকেই নতুন টাকার চকচকে নোট খরচ না করে গচ্ছিত রেখে দেন মানিব্যাগের এক কোণায়। ছোটরাতো নতুন দুই-পাঁচ টাকার নোট পেলেই মহা খুশি।

রাজধানীর গুলিস্তানে গেলেই দেখা মিলে অদ্ভুত এই ‘টাকার হাটের’। গুলিস্তান পাতাল মার্কেটের সিঁড়ির দক্ষিণ পশ্চিম পাশে বসে এই টাকার হাট। যেখানে বেচা-কেনা হয়ে থাকে নতুন টাকা। অর্থাৎ যে কেউ পুরাতন টাকা দিয়ে নতুন টাকা সংগ্রহ করতে পারবে। তবে এ ক্ষেত্রে কিছু টাকা বেশি দিতে হয়। এছাড়া ছেড়া-ফাটা টাকাও বদল করে নেওয়ার সুযোগ আছে এখানে।

প্রায় সারা বছরই এই হাটে নতুন টাকা বেচাকেনা হয়। তবে ঈদের সময় জমে উঠে এই বাজার। এই সময়ে মানুষ এখান থেকে নতুন টাকা নিয়ে গিয়ে প্রিয়জনদের উপহার দিয়ে থাকেন। কেউবা আবার নতুন টাকা দিয়ে ঈদ সেলামি প্রদান করেন।

রোববার (১৭ এপ্রিল) সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে গুলিস্তানের ব্যস্ততম এই এলাকায় দুই টাকা থেকে শুরু করে ১০০ টাকার নোটের বান্ডিলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। পাশে কোনো লোক আসলেই টাকার হাঁকডাক দিচ্ছেন তারা। এ সময় অনেককেই নতুন টাকা সংগ্রহ করতে দরদাম করতেও দেখা যায়।

বিকেলের দিকে এই বাজার বেশ জমে উঠে। ঈদকে সামনে রেখে বর্তমানে জমজমাট এই বাজার। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখানে ছেঁড়া টাকা বদলে দেওয়া হয়। যারা এই ছেঁড়া টাকা চালাতে পারে না তাদের কাছ থেকে টাকার নির্ধারিত দামের চেয়ে কম মূল্যে নোটগুলো কিনে নেন তারা। এছাড়া নতুন নোটের বান্ডেলও বিক্রি করেন।

এ ক্ষেত্রে নতুন ১০০ টাকার নোট হাজারে ২০-৩০ টাকা বেশি দিতে হবে। ২০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে বাড়তি ৮০-১০০ টাকা বা ৫০ টাকার ১০০টি নতুন নোট নিতে বাড়তি ১০০ টাকা দিতে হয়। একইভাবে দুই-পাঁচ-দশ টাকার ৫০টি নোটের বান্ডেল নিতে বাড়তি ৫০-৮০ দিতে হবে। তবে চাহিদার সঙ্গে দামেরও পরিবর্তন হয়।

মোহাম্মদ পাটোয়ারি নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আমি এখানে অনেকদিন ধরে ব্যবসা করছি। প্রতিদিন টুকটাক কিছু বেচাকেনা হয়। ১০ টাকা ২০ টাকার বান্ডেল বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। তবে ঈদের সময় সবথেকে বেশি বেচা-বিক্রি হয়। তাই সারা বছর ঈদের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।

আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘নতুন টাকার এ ব্যবসায় কোনো রকম সংসার চলে। প্রতিদিন ৩০০ থেকে হাজার খানেক টাকা লাভ হয়। কোনোদিন একেবারেই হয় না। এভাবেই চলছে।’

ব্যবসায়ীরা আরও জানান, প্রতিদিন যে আয় হয়, তা থেকে একটা অংশ লাইনম্যানকে দিতে হয়। তারা পুলিশ ও ফুটপাতের জায়গা বিক্রি করে এই টাকা নেয়। আবার টাকা না দিলে ফুটপাতে বসতে দেওয়া হয় না।

সম্প্রতি সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ফুটপাতে হকার বসার বিষয়ে কড়াকড়ির কারণে পথে বসার উপক্রম হয়ে পড়েছে এই টাকা ব্যবসায়ীদের। একটু ফাঁকা পেয়ে বসলেই পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা স্বেচ্ছাসেবকরা তাদের তাড়া করেন। তখন টাকার ব্যাগ নিয়ে পালাতে হয় তাদের। মাঝে-মধ্যে দেখা দেয় ছিনতাইচক্র। তারা হঠাৎ করেই টাকার বান্ডেল নিয়ে দৌড় দেয়। তবুও এভাবেই ইঁদুর-বিড়াল খেলার মতো চলে এই টাকার হাট।

উল্লেখ্য, প্রায় ৫০ বছর ধরে গুলিস্তানের এই এলাকায় এই হাটটি চলে আসছে। কম দামে টাকার বিনিময়ে নতুন টাকা, নতুন টাকার বিনিময়ে ছেঁড়া ও পুরনো টাকা বিক্রি হয় এই ফুটপাতে। স্থানটি ঘিরেই অর্ধশতাধিক মানুষ টাকা বেচা-বিক্রির ব্যবসা করেন। আর এই ব্যবসা দিয়েই ঘর-সংসার চলে সবার।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৪:৫৫ | সোমবার, ১৮ এপ্রিল ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com