বুধবার ২৪শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘গামেন্টস শ্রমিকরা করোনায় নয়, অনাহারেই মারা যাবে‌’

  |   শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০ | প্রিন্ট

‘গামেন্টস শ্রমিকরা করোনায় নয়, অনাহারেই মারা যাবে‌’

‘আমাদের শ্রমিকরা যদি করোনাভাইরাসে না মরে, তারা মরবে অনাহারে, না খেতে পেয়ে’, একটি পোশাক কারখানার মালিক ভিজয় মাহতানি এরকমটাই আশঙ্কা করছেন।

‘অ্যামবাটুর ফ্যাশন ইন্ডিয়া‌’র চেয়ারম্যান তিনি। করোনাভাইরাসের বিশ্ব মহামারি পোশাক শিল্প খাতে কী প্রভাব ফেলছে সেটা বলছিলেন তিনি।

স্বাভাবিক সময়ে ভিজয় মাহতানি এবং তার ব্যবসায়িক অংশীদার অমিত মাহতানি এবং শাওন ইসলাম তিনটি দেশে যে ব্যবসা চালান, সেখানে কাজ করেন প্রায় ১৮ হাজার কর্মী। বাংলাদেশ, ভারত এবং জর্ডানে তাদের কারখানা। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর তারা তাদের ব্যবসার একটা বিরাট অংশ বন্ধ রাখতে বাধ্য হয়েছেন। কেবল ঢাকার কারখানাটি অংশ চালু আছে।

শ্রমিকদের তারা যে মজুরি দিতে পারছেন না সেটা কেবল করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে নয়। তাদের মূল সমস্যা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের বড় বড় ক্রেতাদের অন্যায্য দাবি।

অনেক ব্রান্ড সত্যিকারের অংশীদার হিসেবে পাশে দাঁড়াচ্ছে, নীতি-নৈতিকতা মেনে চলছে। তারা চেষ্টা করছে নগদ অর্থের সরবরাহ যেন অব্যাহত থাকে, যাতে শ্রমিকদের বেতন দেয়া যায়,’ বলছেন অমিত মাহতানি। জর্ডানের টাস্কার অ্যাপারেলের প্রধান নির্বাহী তিনি।

‘কিন্তু আমাদের এমন অভিজ্ঞতাও হয়েছে যেখানে তৈরি হচ্ছে বা হয়ে গেছে এমন জিনিসের অর্ডার বাতিলের জন্য তারা চাপ দিয়েছে। ট্রানজিটে আছে এমন পণ্য বা বকেয়া পাওনার ওপর ডিসকাউন্ট দাবি করেছে। অনেকে বকেয়া পরিশোধের সময় আরও ৩০ বা ১২০ দিন পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়ার দাবি জানাচ্ছে।’

এমন একটি ইমেইল আছে, যাতে একটি মার্কিন কোম্পানি সব ধরণের অর্ডারে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট চেয়েছে। এর মধ্যে আছে ইতোমধ্যে ডেলিভারি দিয়ে দেয়া পণ্যও।

তারা কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন যে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে এখন যেতে হচ্ছে, তার কথা।

‍‘শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ কীভাবে রক্ষা করা যায় সেটাই কেবল তাদের চিন্তা, গার্মেন্টস শ্রমিকদের কথা তারা বিবেচনাতেই রাখছে না। দায়িত্বশীলভাবে পণ্য সংগ্রহের যে কথা তারা বলে, তার তোয়াক্কা না করে তারা এখন ভন্ডামির আশ্রয় নিচ্ছে’, বলছেন বিজয় মাহতানি।

ব্রান্ডগুলোর মনোযোগ থাকে শেয়ারের দামের দিকে। তাদের হাতে এই দুর্যোগের সময় যথেষ্ট অর্থ নেই। পুরো সাপ্লাই চেইনে তারাই এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থানে। তারা এখন আমাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছে সাহায্যের জন্য। যখন তাদের কি-না দেউলিয়াত্ব থেকে বাঁচতে মার্কিন সরকারের আর্থিক প্রণোদনা পেতে আবেদন করা উচিত।’

এসব ঘটছে এমন এক সময় যখন করোনাভাইরাস লকডাউনের কারণে পোশাক প্রস্তুতকারকরা দু’দিক থেকে ক্ষতিগ্রস্থ।

প্রথম সমস্যা দেখা দিয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে, যখন চীন থেকে কাঁচামাল আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। চীন হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কাপড় রফতানিকারক। বছরে ১১৮ বিলিয়ন ডলারের কাপড় রফতানি করে তারা।

এরপর সম্প্রতি যখন চীনের টেক্সটাইল কারখানাগুলো খুলতে শুরু করে, গার্মেন্টস কারখানা মালিকরা আশা করছিলেন এবার তারা উৎপাদন আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু তারপর এলো দ্বিতীয় ধাক্কা- বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউনের কারণে বন্ধ হয়ে গেল দোকান-পাট। চাহিদা পড়ে গেল রাতারাতি।

গুরুত্বপূর্ণ শিল্প

চীনকে বলা হয় সারা বিশ্বের কারখানা। কিন্তু তৈরি পোশাকের বেলায় বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং মিয়ানমার পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

‘গত দশ বছর ধরে তৈরি পোশাক শিল্প চীন থেকে অন্যান্য দেশে সরে যাচ্ছে। কারণ চীনে এখন খরচ পড়ছে বেশি’, বলছেন পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান ‘লিভার স্টাইলে‌’র স্ট্যানলি সেটো। নামকরা সব ব্রান্ডের পোশাক সরবরাহ করে তার কোম্পানি।

এর মানে হচ্ছে এশিয়ার অনেক উন্নয়নশীল দেশের জন্য পোশাক শিল্প এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী এখন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি পোশাক রফতানিকারক চারটি দেশের দু’টি হচ্ছে বাংলাদেশ এবং ভিয়েতনাম । বিশ্ব বাজারে মোট রফতানির ৬ দশমিক ৭ শতাংশ যায় বাংলাদেশ থেকে, আর ৫ দশমিক ৭ শতাংশ ভিয়েতনাম থেকে।

বাংলাদেশে গার্মেন্টস শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় চল্লিশ লাখ। গত বছর বাংলাদেশের মোট রফতানির প্রায় ৯০ শতাংশ এসেছে এই খাত থেকে।

ক্যাম্বোডিয়া এবং শ্রীলঙ্কাও এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। তাদের রফতানির ৬০ শতাংশ হচ্ছে তৈরি পোশাক।

বাংলাদেশে ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে যত মানুষ কাজ করে, তার প্রায় অর্ধেক এই শিল্পে নিয়োজিত। অন্যদিকে ক্যাম্বোডিয়ায় আরও বেশি, প্রায় ৬০ শতাংশ।

ইউনিভার্সিটি অব ডেলাওয়্যারের ফ্যাশন এন্ড অ্যাপারেল স্টাডিজের শেং লু বলেন, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, ক্যাম্বোডিয়া এবং ভারতের গার্মেন্টস শিল্পে ৪ হতে ৯ শতাংশ পর্যন্ত মানুষ কাজ হারাতে পারে।

এ কারণেই বাংলাদেশ সরকার তৈরি পোশাক শিল্পকে সাহায্য করার চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের স্প্যারো অ্যাপারেলসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর শাওন ইসলাম বলেন, সরকার খুবই উদার এক আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে যাতে শ্রমিকদের বেতনে ভর্তুকি দেয়া যায়, ব্যাংক ঋণের মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়া যায় এবং সুদের হার যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে রাখা যায়। যে ঝড় আসছে তার মোকাবেলায় এটা হয়তো যথেষ্ট নয়, তারপরও এটি আমাদের সাহায্য করবে।

ক্যাম্বোডিয়ার সরকারও পোশাক খাতের জন্য নানা রকম সহায়তা ঘোষণা করেছে। শ্রমিকদের মজুরি দেয়ার জন্য ভর্তুকির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

প্রফেসর লু বলেন, এসব দেশকে এরকম পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে কারণ মহামারির কারণে শ্রমিক সঙ্কট থেকে শুরু করে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি এবং উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়া- এরকম নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে।

তবে কোন কোন ব্রান্ড সমালোচনার মুখে এখন অঙ্গীকার করছে যে তারা তাদের বতর্মান সব অর্ডারের পুরু দাম শোধ করবে। যেমন এইচ-এন্ড-এম এবং ইনডিটেক্স এমন ঘোষণা দিয়েছে।

‘লেবার বিহাইন্ড লেবেল’ নামে এ কটি শ্রমিক অধিকার সংস্থার ডোমিনিক মুলার বলেন, ব্রান্ডগুলো বহু বছর ধরে কম মজুরির দেশগুলোতে পোশাক বানিয়ে মুনাফা করেছে। এসব দেশে কোন ধরণের সোশ্যাল সিকিউরিটির ব্যবস্থা নেই। এই বিজনেস মডেলে কোন কোন ব্রান্ডের তো বিশাল ব্যবসায়িক সাম্রাজ্য তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে শ্রমিকদের যেভাবে শোষণ করা হয়েছে এখন সেই দেনা পরিশোধের পালা।

কারখানা মালিক অমিত মাহতানি একথার সঙ্গে একমত।

‌‘বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এখন সাহায্য নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এই শিল্পকে রক্ষায় ধনী দেশগুলোকে বেইলআউটের ব্যবস্থা করতে হবে।’ এটি ছাড়া, তার মতে, এই শিল্প একেবারেই ধসে পড়বে। খবর: বিবিসি বাংলা।

 

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৪৩ | শনিবার, ১১ এপ্রিল ২০২০

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com