শুক্রবার ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনৈতিক মতের প্রয়োজন রয়েছে : মাহাথির মোহাম্মদ

  |   সোমবার, ১৭ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট

mahatir muhammed

স্টাফ রিপোর্টার :  মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে গণতন্ত্র শুধুই ক্ষমতা পরিবর্তনের একটি মাধ্যম হয়ে আছে। কিন্তু এটাই গণতন্ত্রের সব নয়। গণতন্ত্রে বিরোধী রাজনৈতিক মতের প্রয়োজন আছে। বিরোধী মত থাকলে সরকার সতর্ক থাকে। আসলে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে নিজস্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখা প্রয়োজন। ত্যাগের মানসিকতা ও তথ্য-প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে স্বগর্বে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা রাজপথে বিক্ষোভ করে কোনো সরকারকে সরানো হলে যারা ক্ষমতায় যাবে তাদের ক্ষেত্রেও একই পরিণতি হবে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে এসে একটি জাতীয় দৈনিকে দেয়া এক সাক্ষাত্কারে আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার ও সেদেশের একটানা ২২ বছরের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মাহাথির বিন মোহাম্মদ এসব মন্তব্য করেন।

এক সময়ের অনুন্নত মালয়েশিয়াকে উন্নত বিশ্বের তালিকায় এনেছেন মাহাথির মোহাম্মদ। এশিয়ার এই নন্দিত নেতা বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন। ১৯৮১ সালে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল পর পর পাঁচবার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে। এশিয়ার সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের গণতান্ত্রিক এ প্রধানমন্ত্রী ২০০৩ সালের ৩০ অক্টোবর স্বেচ্ছায় প্রধানমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন। ততদিনে মালয়েশিয়ার চেহারাও পাল্টে যায়। কোন ম্যাজিকে এটা সম্ভব জানতে চাইলে সাক্ষাত্কারে মাহাথির মোহাম্মদ বলেন, কোনো ম্যাজিক বা ফর্মুলা নয়, মালয়েশিয়ার মানুষের সমন্বিত চেষ্টায় আজ এ অবস্থান সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এক হলে, এক সুরে কথা বললেই বর্তমান অবস্থা থেকে উন্নয়নের শিখরে যাওয়া সম্ভব। উন্নয়নের প্রশ্নে কোনো মতানৈক্য না রেখে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। জোর দিতে হবে প্রযুক্তি শিক্ষা ও ব্যবহারের ওপর। গত ১৫ মার্চ সকালে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকা আসেন মালয়েশিয়ার এই সফল প্রধানমন্ত্রী। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউআইটিএসের সমাবর্তন উপলক্ষে প্রায় ২৩ ঘণ্টার ঢাকা সফর শেষ করে রোববার সকালে দেশে ফিরে যান। তিনি বলেছেন বাংলাদেশের আগের অবস্থার সঙ্গে বর্তমানের তুলনা করে মাহাথির বলেন, বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অবস্থার বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতে দর্শনীয় উন্নতি হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও উল্লেখ করার মতো। এখন প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হবে। বিপুল জনশক্তি এদেশের সম্পদ। একে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে হবে। মানুষকে দক্ষ করতে সেকেন্ডারি শিক্ষায় কর্মদক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ নিতে হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর ওপর জোর দেন মাহাথির। বলেন, আমরা মালয়েশিয়ায় সেকেন্ডারি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছি। সবার জন্য ন্যূনতম উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা ও কারিগরি দক্ষতা নিশ্চিত করেছি। বাংলাদেশের মানুষ সত্, তাদেরও সঠিক নির্দেশনায় চালিত করলে উন্নয়ন সম্ভব।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট সম্পর্কেও জানেন মাহাথির মোহাম্মদ। তিনি বলেন, মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোতে গণতন্ত্র শুধুই ক্ষমতা পরিবর্তনের একটি মাধ্যম হয়ে আছে। কিন্তু এটাই গণতন্ত্রের সব নয়। তিনি বলেন, বিরোধী রাজনৈতিক মতের প্রয়োজন আছে। বিরোধী মত থাকলে সরকার সতর্ক থাকে। আসলে গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে নিজস্ব অবস্থান থেকে অবদান রাখা প্রয়োজন। ত্যাগের মানসিকতা ও তথ্য-প্রযুক্তির সমন্বয় ঘটিয়ে স্বগর্বে এগিয়ে যেতে হবে। কেননা রাজপথে বিক্ষোভ করে কোনো সরকারকে সরানো হলে যারা ক্ষমতায় যাবে তাদের ক্ষেত্রেও একই পরিণতি হবে।

পুরো মুসলিম বিশ্বের উন্নয়নেও বিজ্ঞান শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ। বলেছেন, বর্তমান সময়ে মুসলিমরা ও তাদের দেশগুলো একটা সঙ্কটময় সময় পার করছে। তারা বিদেশিদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। তারা মৃত্যুবরণ করছে, লাঞ্ছিত হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে। কিন্তু আমরা কিছুই করতে পারছি না। পুরো মুসলিম বিশ্বে ৫০টির মতো দেশ যারা নিজেদের মুসলিম দেশ বলে থাকে, তাদের একটিও নিজেকে উন্নত দেশ বলে দাবি করতে পারবে না। তারা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। এর একমাত্র কারণ আমরা আমাদের নিজেদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রপাতির ডিজাইন করতে পারি না। এই সক্ষমতা না থাকার কারণ বিজ্ঞানের জ্ঞানের স্বল্পতা। এখনকার সময়ে তথ্যপ্রযুক্তির জ্ঞান অপরিহার্য। এ তথ্যপ্রযুক্তিই বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে তাত্ক্ষণিক যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।
তিনি বলেন, ৫০০ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহ বিজ্ঞান বিষয়ে দক্ষতার জ্ঞানকে অবহেলা করে আসছে। এটা সত্য আমাদের ধর্ম সম্পর্কে জানতে হবে। তবে এটা সত্য নয় যে, আমাদের শুধুই ধর্মীয় জ্ঞানের মধ্যে নিজেদের সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। আমাদের ইসলাম সম্পর্কে জানতে বলা হয়েছে। তবে শুরুর দিকে ইসলাম সম্পর্কে জানার বা পড়ার তেমন কোনো কিছু ছিল না। এ কারণে মুসলিম উম্মাহ শুরুর দিকে ভারতীয়, মিসরীয়, রোমান সভ্যতা থেকে জ্ঞান আহরণ করেছে। এর সুবিধাও পেয়েছে। যার ফলে প্রায় ১০০ বছর বিজ্ঞান ও গণিতের জগতে মুসলিম উম্মাহ শাসন করেছে। ফলে তারা মুসলিম সভ্যতা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ১৫০০ শতাব্দীতে এসে সিদ্ধান্ত নেয়া হলো ইসলাম ও মুসলিম ইতিহাস পড়ার। তখন শুধু এই শিক্ষায় শিক্ষিতরাই সমাজে সম্মানিত ছিলেন। কিন্তু এক সময় এসে দেখা গেল মুসলমানরা দুর্বল হয়ে পড়ল। কারণ তারা নিজেদের ধর্ম রক্ষা করার মতো সামর্থ্যবান ছিল না, এ সম্পর্কে জ্ঞানেরও অভাব দেখা দিল।

এখন আমরা জানি, ইসলামে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান আহরণের জন্য বলা হয়েছে। তবে বিশ্বশান্তির জন্য ক্ষতিকর অস্ত্র ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।  মালয়েশিয়ার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন- হ্যাঁ, এটা ঠিক আমাদের ধর্মের প্রতি ফোকাস করতে হবে, তবে আমরা যে মুসলমান এটা ভুললে চলবে না। কিন্তু একত্রিতভাবে আমরা যদি নিজেদের আত্মরক্ষার জ্ঞান আহরণ করাকে অবহেলা করি, তাহলে আমরা ইসলামের শিক্ষাকেও অবহেলা করলাম। যদি নিজেদের রক্ষা করতে চাই, এ জ্ঞানের প্রয়োজন আছে। আমাদের নিজেদের ও নিজেদের ধর্মকে রক্ষা করার অধিকার আমাদের আছে। দেখা যাচ্ছে, মুসলমানরা নিজেদের দেশেই লাঞ্ছনার শিকার হচ্ছে, তাদের ছুড়ে ফেলে দেয়া হচ্ছে। আবার এমনও দেখা যাচ্ছে, মুসলমানরা নিজেদের দেশ ছেড়ে অন্য কোনো অমুসলিম দেশে স্বইচ্ছায় চলে যাচ্ছে। এটা কেন হচ্ছে? কারণ, মুসলিম সমাজ তার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। এ জন্যই মুসলিম সমাজের উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধি পথে এগিয়ে যাওয়া আশু প্রয়োজন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৮:৩৮ | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com