বৃহস্পতিবার ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলনায় মামলার ‘চাপে’ কর্মী সংকটে বিএনপি

  |   সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ | প্রিন্ট

খুলনায় মামলার ‘চাপে’ কর্মী সংকটে বিএনপি

খুলনার ছয়টি আসনেই ভোটের প্রচারে নেমে কর্মী সংকটে বিএনপি। দশম সংসদ নির্বাচন ঠেকাতে এবং ২০১৫ সালে সরকার পতন আন্দোলনে নাশকতার শতাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে কয়েক হাজার কর্মীর বিরুদ্ধে। এ কারণে তারা প্রকাশ্য আসছেন না।

অন্যদিকে নির্বিঘেœ প্রচার চলছে আওয়ামী লীগের। নৌকায় ভোট চেয়ে শিল্পীদের গান বেজে চলছে সড়কের ধারে, অলিগলি ও পাড়া-মহল্লায়।

ছয়টি আসনের মধ্যে একটিতে জোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী এবং একটি আসনে সাবেক সংসদ সদস্যদের অনুসারীদের অভিমান ভাঙাতে হিমশিম খাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল।

জেলার চারটি আসনে যতটুকু প্রচার চলছে, জামায়াতকে ছেড়ে দেওয়া দুই আসনে সেটাও নেই। অন্য দলের প্রার্থীর জন্য বিএনপি সেভাবে সক্রিয় নয়।

খুলনা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রচার-প্রচারণায় বের হতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে পুলিশ ও সরকারি দল। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দফায় দফায় বাড়িতে অভিযানও চলছে।’

‘তবু আমরা বিচলিত নই। আগামী ৩০ ডিসেম্বর ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে দিলে আওয়ামী লীগের ভরাডুবি হবে।’

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপি সব সময় অভিযোগনির্ভর দল। ভোটের মাঠে তাদের কোনো সমর্থন নেই দেখে শুধু অভিযোগ করে সময় পার করছে। খুলনার কোথাও প্রচারণে বাধা দেওয়ার প্রমাণ মিলবে না।’

খুলনার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা হেলাল হোসেন বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে কমিশনের নির্দেশনা মতে কাজ চলছে। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা নির্বাচনী এলাকাগুলোতে টহল ও পর্যবেক্ষণ করছেন। এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রয়েছে।

জেলার ছয়টি আসনে মোট ভোটার ১৮ লাখ ৯৮৯ জন। তারা ভোট দেবেন ৭৮৬টি কেন্দ্রের তিন হাজার ৭৮৯টি কক্ষে। এর মধ্যে খুলনা-২ আসনে ভোট হবে ইভিএমে।

খুলনা-১

এই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, বিএনপির আমীর এজাজ খান। আসনটি বরাবরই আওয়ামী লীগের দখলে। তবে মহাজোটের শরিকদল জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সুনীল শুভ রায় লাঙ্গল নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। তার কারণেই ভোট ভাগাভাগির ফায়দা দিতে চাইছে বিএনপি।

খুলনা-২

সদর আসনে মহাজোটের প্রার্থী বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল এবং বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু।

পাকিস্তান আমলে মুসলিম লীগ অধ্যুষিত আসনটিতে বরাবরই বিএনপির দখলে ছিল। ২০০৮ সালে সারা দেশে বিপর্যয়ের পরও আসনটিতে ধানের শীষ নিয়ে জেতেন মঞ্জু। তবে ওই বছর দুই পক্ষের ব্যবধান ছিল এক হাজার ৫৭০ ভোট।

৯১ সাল থেকেই আওয়ামী লীগের ভোট ক্রমেই বাড়ছে। আবার বঙ্গবন্ধু পরিবারের একজন সদস্য নৌকার প্রার্থী হওয়ায় বিএনপি বেশ ভালো চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। চলতি বছরই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৬৮ হাজার ভোটে জয়ও আত্মবিশ্বাসী করেছে আওয়ামী লীগকে।

খুলনা-৩

এই আসনটিতে ১৯৯১ সালে বিএনপি, ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ, ২০০১ সালে বিএনপি এবং ২০০৮ জেতে আওয়ামী লীগ। নৌকা নিয়ে লড়ছেন মুন্নুজান সুফিয়ান, বিএনপির প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল। আসনটি শ্রমিক অধ্যুষিত এবং মুন্নুজান ও তার স্বামী দুই জনই শ্রমিক নেতা।

খুলনা-৪

বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক আব্দুস সালাম মুর্শেদী নৌকা মার্কা পাওয়ার পর আসনটি আলোচনার কেন্দ্রে। এমনিতেই সেখানে শক্তিশালী আওয়ামী লীগ। ১৯৯১ সাল থেকে কেবল ২০০১ সালে হেরেছে দলটি। মুর্শেদীকে পেয়ে আরও আত্মবিশ্বাসী দল।

মুর্শেদীর মোকাবেলায় বিএনপি প্রতীক দিয়েছে ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল। ২০০৮ সালে তিনি ঢাকা-১৮ আসনে প্রায় এক লাখ ভোটে হারেন আওয়ামী লীগের সাহারা খাতুনের কাছে। এবার তাকে খুলনায় নিয়ে গেছে বিএনপি।

মুর্শেদী গুরুত্ব দিচ্ছেন কর্মসংস্থানের ওপর। আর হেলাল বলছেন তাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলার কথা।

খুলনা-৫

এই আসনে আওয়ামী লীগের মোকাবেলায় বিএনপি প্রার্থী করেছে জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ারকে।

আসনটি ক্ষমতাসীন দলের ঘাঁটি হিসেবেই পরিচিত। ১৯৯১ সাল থেকে এখানে আওয়ামী লীগ একবারই হেরেছে। বিএনপি ও জামায়াত জোটবদ্ধ হওয়ার পর ২০০১ সালে চার হাজার ভোটে জিতে যান জামায়াতের পরওয়ার। তবে ২০০৮ সালে তাকে ৩৯ হাজার ভোটে হারিয়ে প্রতিশোধ নেন আওয়ামী লীগের নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। আবার দুজন লড়াইয়ে।

এই আসনে বিএনপির নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে নেই জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে। আর এই বিষয়টি নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত পরওয়ার।

খুলনা-৬

এই আসনটিতে ১৯৯১ সাল থেকে লড়াই হয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও জামায়াতে। ৯১ ও ২০০১ সালে জয় পেয়েছে জামায়াত। আওয়ামী লীগ জিতেছে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকতারুজ্জামান বাবু পেয়েছেন নৌকা। আর ধানের শীষ পেয়েছেন জামায়াতের আবুল কালাম আজাদ। তিনি বর্তমানে রয়েছেন। এখানেও স্থানীয় বিএনপিকে মাঠে নামাতে ব্যর্থ হয়ে একা একা জামায়াত।

তবে এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল হক মনোনয়ন না পাওয়ায় তার কর্মীরাও সেভাবে আগ্রহী হয়ে প্রচারে নেই। নৌকার প্রার্থী আকতারুজ্জামান বাবু চেষ্টা করছেন তাদেরকে সক্রিয় করতে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:২৯ | সোমবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com