| মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | প্রিন্ট
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে একটি জীর্ণ ও পরিত্যক্ত কারাগারে রাখা হয়েছে। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এর বিচার হবে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। সেখানে মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমাদের এই সংগ্রাম, এই লড়াই দেশনেত্রীকে মুক্ত করে নিয়ে আসার লড়াই। এই লড়াই আমাদের নেতা-কর্মীদের মুক্ত করার লড়াই। এই লড়াই বাংলাদেশের মানুষকে মুক্ত করার লড়াই, গণতন্ত্রকে মুক্ত করার লড়াই।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান সরকার সম্পূর্ণভাবে গণবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। সরকার দেউলিয়া হয়েছে বলেই আজকে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা এবং প্রায় ১৫ লাখ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে সরকার মনে করছে, বাংলাদেশের মানুষকে স্তব্ধ করা যাবে, দমিয়ে রাখা যাবে। সেটা যাবে না। দেশের মানুষ অবশ্যই কারাগার থেকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে নিয়ে আসবে। নৈতিকভাবে এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
আজকের অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের শান্তিপূর্ণভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।
অবস্থান কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে রাখা হয়েছে। বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে নির্বাচন করতে চায় সরকার। খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে ছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচন করতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, ‘আজ কারাগারে যাওয়ার পর খালেদা জিয়া আরও শক্তিশালী হয়েছেন এবং জাতীয় নেতা থেকে আন্তর্জাতিক নেতা হিসেবে পরিণত হয়েছেন। খালেদা জিয়া ও বিএনপিকে ছাড়া এ দেশের জনগণ আগামী নির্বাচন হতে দেবে না।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বগল বাজাচ্ছেন। বিএনপিতে নাকি ভাঙন ধরবে? এ সমস্ত কথাবার্তা ভুলে যান। বিএনপিতে ভাঙন ধরানোর ক্ষমতা বাংলাদেশে কোনো শক্তির নেই।’
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজ বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তিন দিনের কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে দলটি। আজকের কর্মসূচিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতারাও অংশ নেন। এ ছাড়া বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
বিএনপির কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকে দলের নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। জলকামানের গাড়িসহ পুলিশ ও গোয়েন্দা পুলিশ ও সংস্থার বেশ কিছু গাড়ি কাছাকাছি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। কর্মসূচি চলার সময় বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঘিরে রাখেন দাঙ্গা পুলিশের সদস্যরা। এ সময় দাঙ্গা পুলিশের বেষ্টনী পার হয়ে বিএনপির যেসব নেতা-কর্মী রাস্তায় চলে আসছিলেন, তাঁদের আবার সমাবেশে যেতে বাধ্য করছিল পুলিশ।
এর আগে পুলিশের অনুমতি নিয়ে ‘গড়িমসি’র পর দুই দফা স্থান পরিবর্তন করে বিএনপি। আজ জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা থাকলেও গতকাল রাতে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঢাকা মহানগর পুলিশ রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে অবস্থান কর্মসূচির অনুমতি দিয়েছে। পরে আজ বেলা ১১টা থেকে বিএনপি কার্যালয়ের সামনেই এক ঘণ্টার এ কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা কাল রাতেই জানানো হয়।
নয়াপল্টনে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। দলের কার্যালয়ের সামনের সড়কে ব্যানার হাতে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিচ্ছিলেন। গতকাল একই দাবিতে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিএনপি।
আজকের কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জয়নুল আবদিন ফারুক, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন, বরকতউল্লাহ বুলু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী, ফজলুল হক মিলন, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সেলিম ভূঁইয়া, আবদুস সালাম আজাদ, শহীদুল ইসলাম বাবুল, কাদের গণি চৌধুরী, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নিরব, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, মামুন হাসান প্রমুখ।
২০-দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে এলডিপির শাহাদত হোসেন সেলিম, ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভূঁইয়া, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান, এনডিপির মঞ্জুর হোসেন ঈশা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান নিরব, পিজিপির আবদুল মতিন সাউদ প্রমুখ অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন।
Posted ০৯:১৫ | মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain