শনিবার ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদার কারামুক্তিতে বিএনপির নতুন ছক

  |   রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | প্রিন্ট

খালেদার কারামুক্তিতে বিএনপির নতুন ছক

দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলেও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কারামুক্তি ঘিরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে কৌশলী ভূমিকায় রয়েছে দলটি। এ লক্ষ্যে আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় দলটি। দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে সরকারকে চাপে রাখতে এবং দেশি-বিদেশি শক্তিকে বার্তা দিতেই রাজধানীতে শান্তিপূর্ণ বড় এ সমাবেশ করতে চায় বিএনপি। যদিও ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, জনগণের সাড়া না পেয়ে বিএনপি অক্ষমতার অজুহাত হিসেবে এখন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের কৌশল নিয়েছে। তারপরও বর্তমানে কোনো দল বা নেতাদের কথায় কান দিয়ে শক্ত কর্মসূচি দেবে না। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকার বাধা বা নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়লেও ধৈর্যের মাধ্যমে দলীয় সিদ্ধান্তে অটল থাকবে নেতা-কর্মীরা বলে বিএনপির শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় রায়ের দিন রাজধানীজুড়ে এবং সারাদেশে নেতাকর্মীদের জমায়েতে অনেকটাই উজ্জীবিত বিএনপি। রায় তাদের বিপক্ষে গেলেও এরপর থেকে নেওয়া দলীয় প্রতিটি পদক্ষেপের ফলাফল এখন পর্যন্ত তাদের অনুক‚লে আছে। রায়ে দলীয়প্রধানের কারাদণ্ডাদেশ হলেও প্রতিবাদে কোনো প্রকার অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পরিস্থিতি মোকাবিলা বা অহিংস কর্মসূচির ঘোষণা দেয়নি বিএনপি। বরং বর্তমান সময়টিকে ক্রান্তিকাল ধরে নিয়ে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর আরও ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন তারা। মানববন্ধন, গণস্বাক্ষরসহ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে দলটি।

তবে বিষয়টি সরকারকে বেশ ভাবাচ্ছে। কারণ খালেদা জিয়ার সাজা হলে বিএনপি মাঠে নামবে এমন তথ্য ছিল সরকারের কাছে। প্রতিবাদ স্বরুপ ক্ষোভ সামলাতে না পেরে দলীয় নেতাকর্মীরা রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়বে। রাজধানীসহ সারা দেশে জ্বালাও- পোড়াও হতে পারে সে আশঙ্কাও ছিল। বিএনপি নেতারাও বেশ কিছুদিন এমন আভাস দিয়ে আসছিলেন। সে জন্য সরকারও সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়। বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে সংঘর্ষে জড়ালে পরবর্তী কৌশল কী হবে তাও ঠিক করে রাখা হয়েছিল। কিন্তু কৌশলে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতেই অবিচল রয়েছে দলটি। নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও রায়ের দিন বড় জমায়েতের সুযোগ পেয়েও কোনো সহিংস কর্মকাণ্ডে জড়াননি তারা। উল্টো গণস্বাক্ষর, মানববন্ধন, অনশনসহ একের পর এক অহিংস প্রতিবাদ কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছেন দলটির নীতিনির্ধারকেরা।

এসব কর্মসূচিতে নেতাকর্মীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও চোখে পড়ার মতো, যা সময়ের সাথে সাথে আরো বাড়ছে। সরকারবিরোধীদের এমন রাজনৈতিক কৌশল এরই মধ্যে বিভিন্ন মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এই অবস্থায় ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সব হিসাব-নিকাশ পাল্টে যায়। বিষয়টি নিয়ে বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা। আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার হাজিরার দিন হাইকোর্টের সামনে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে জড়িয়ে ধরপাকড় এড়াতে প্রায় সব নেতাকে গর্তে ঢুকে যেতে হয়েছে। তার রায়কে কেন্দ্র করে আরো বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে বলে সরকার মনে করেছিল।

সরকারও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত ছিল। কিন্তু তা আর হলো না। সরকারের কৌশল টের পেয়ে বিএনপিও এখন ভিন্ন কৌশলে রয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নারায়ণগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির শান্তিপূর্ণ এসব কর্মসূচির সমালোচনা করে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে কারাদণ্ডের পর জনগণ রাস্তায় নামেনি। আর বিএনপি এখন ব্যর্থ হয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছে। সরকারের অনেক নেতা-মন্ত্রীই বিএনপির আন্দোলন নিয়ে একই সুরে টিপ্পনি কাটছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জিয়া অরফানেজ মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হতে পারে এই শঙ্কা নিয়ে আগেভাগেই সিনিয়র নেতারা নিজেদের বিভেদ মিটিয়ে এক টেবিলে বসেন। সিদ্ধান্ত হয় সরকারের উস্কানিমূলক কোনো কথায় কান না দিয়ে ধৈর্য সহকারে খালেদা জিয়ার কারামুক্তি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া এতিমখানা দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়াকে শাস্তি দিয়ে কারাগারে পাঠানোর পর পরই বিএনপি দুদিনের বিক্ষোভ কর্মসূচি দিয়েছিল। শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ এবং ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা কিছুটা বাধা ও হামলা করলেও এখনও এই কৌশল থেকে সরে আসেনি দলটি। দ্বিতীয় ধাপে আবারও মানববন্ধন, অনশন-অবস্থান কর্মসূচিসহ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ডাক দেয় দলটি। তৃতীয় ধাপে ঢাকাসহ সারাদেশে গণস্বাক্ষর অভিযান, ঢাকাসহ সারাদেশের জেলা প্রশাসক বরাবর স্বারকলিপি প্রদান এবং ঢাকা বাদে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি। এরপর আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে দলটি। আর সেখানে না হলে অন্তত যেন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয় সে জন্য অনুমতি চাওয়া হবে কর্তৃপক্ষের কাছে।

এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার ওঁৎ পেতে ছিল যে, বিএনপি বড় কর্মসূচি দিলে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে নেতাকর্মীদের ধরপাকড় করাবে। কিন্তু এতে পা দেয়নি দল। এছাড়া খালেদা জিয়া কারাগারে গেলে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাকর্মীদের মধ্যে মতবিরোধ তৈরি হবে; আর সেই সুযোগে দলের অনেকেই ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে আঁতাত করে দল ভেঙে অন্য দলে চলে যাবে বা ভাঙনের সৃষ্টি করবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো একটি ‘মিথ্যা’ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হওয়ার পর তার নির্দেশনা অনুযায়ী এবং তারেক রহমানের দক্ষ নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে দল সাংগঠনিক গতিতেই চলছে। এখন পর্যন্ত অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে দল ঐক্যবদ্ধ আছে। দলের প্রত্যেকটি সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে পরামর্শ করেই নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, দেশের মানুষ বিশ্বাস করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাজা দেওয়া হয়েছে। তবে তাকে কারাবন্দি, বিলম্বে ডিভিশন দেওয়া, রায়ের সার্টিফায়েড কপি এখন পর্যন্ত না দেওয়াসহ নানা কারণে খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের কাছে দুটি চ্যালেঞ্জ। একটি হলো খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনা এবং আরেকটি হলো দেশে আন্দোলন করে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। আর এবার আমরা প্রমাণ করব, একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমেও সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা যায়।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০৬:৫১ | রবিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com