| শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০ | প্রিন্ট
দেশে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নেতৃত্ব চান দেশের জ্যেষ্ঠ রাজনৈতিক নেতারা। তারা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের স্বাস্থ্যখাত, ত্রাণ বিতরণ, ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে এখনই সর্বদলীয় উদ্যোগ প্রয়োজন। আর এ উদ্যোগে কেবল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দিতে পারেন।
নেতারা বলেন, গত ৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনাভাইরাসের কারণে আর্থিক ক্ষতি মোকাবিলায় সরকারের ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার মাধ্যমে জনমতকে গুরুত্ব দিয়েছেন। আর এই জনমতকে ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবিলায় কাজে লাগানোই এখন রাষ্ট্র হিসেবে দেশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
ইতোমধ্যে গত ৫ এপ্রিল সরকার প্রধানের আর্থিক প্রণোদনা প্যাকেজকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে বিএনপি। দলটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা ও সামনের দিনে অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে শক্ত অবস্থানে ফেরাতে এখনই সর্বদলীয় পরিকল্পনা প্রয়োজন। করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত সব পক্ষকে সমন্বয় করে দিকনির্দেশনা দিতে হবে। আর এই কার্যক্রমের নেতৃত্ব আসতে হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফেই।
দলটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, গত ৬ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের পারস্পরিক দোষারোপ না করে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দেশের এই সংকটে বিএনপিসহ দেশের সব রাজনৈতিক দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানালেও এই আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকেই আসা উচিত।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপি শুরু থেকেই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করার কথা বলে এসেছে। এখন সরকারের সিদ্ধান্ত তারা কী উদ্যোগ নেবে। সংকট ঘনীভূত হচ্ছে, আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে চেয়েছি। বলেছি, আমরা পরামর্শ দেবো, তারা এটা নিতে পারতো। এখন এটা তাদের দায়িত্ব যে তারা পরামর্শ নেবেন কি-না। করোনাভাইরাস বৈশ্বিক সমস্যা, আমাদের সমস্যা, আমরা এখনও চাই সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজটা হোক।
গত সাত এপ্রিল সব রাজনৈতিক দল ও শ্রেণি-পেশার সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে দল-মত নির্বিশেষে জাতির সব অংশের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে ‘জাতীয় ঐকমত্য’ গড়ে তোলার আহ্বান জানায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সর্বদলীয় টাস্কফোর্স গঠন এবং জাতীয়-আঞ্চলিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার দাবি জানিয়েছে বিরোধী জোটটি।
জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, এখনও সময় আছে সর্বদলীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পরিস্থিতি উত্তরণে এটা খুব সহায়ক হতে পারে।’ সর্বদলীয় উদ্যোগে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি আছে জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমরা এতে অংশগ্রহণ করবো। দরিদ্র, শ্রমজীবী মানুষদের আগে সহায়তা করতে হবে। করোনার কারণে যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তাদের সমন্বয় করতে হবে।
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বাংলাদেশে সংক্রমণের পর থেকেই এ থেকে উত্তরণে সর্বদলীয় উদ্যোগের দাবি জানিয়ে আসছেন ১৪ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। মেনন বলেন, সর্বদলীয় উদ্যোগ খুব জরুরি প্রয়োজন। আমাদের প্রতিবেশী ভারতেও সেখানকার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশটির সব বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করছেন। মোদির সঙ্গে কংগ্রেসের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক, তবু এই উদ্যোগে তাদের যুক্ত করেছেন। আজ থেকে সেখানে আলোচনা শুরু হয়েছে। কলকাতায়ও প্রদেশটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে কাজ করছেন।
রাশেদ খান মেনন বলেন, আমার বোধগম্য হয় না কেন আমাদের এখানে এরকম একটি উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এটা সরকার বলতে পারবে।’ তার অভিযোগ, ‘আমাদের রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক মনোভাব কাজ করছে। এটা উদ্যোগ নেবে ক্ষমতাসীন দল, অবশ্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্ব দেবেন। সবাইকে যুক্ত করে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে, কেবল প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, আমরা তো শুরু থেকে টেস্টের কথা বলেছি, কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তো মনে করে আমাদের কথার গুরুত্ব নেই। এখন তো দেখা যাচ্ছে সংকট ধীরে ধীরে ঘনীভূত হচ্ছে।
এ বিষয়ে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, করোনা পরিস্থিতি রাজনৈতিক সমস্যা না, এটা আন্তর্জাতিক এবং একইসঙ্গে দেশের বড় সমস্যা। এটা মোকাবিলায় দলীয় দৃষ্টিকোণ থেকে সমাধানের কিছু নেই। জেএসডি ১৯৭২ সাল থেকে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার পক্ষে। এই জাতীয় ও বৈশ্বিক সংকট সর্বদলীয় ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে। দল-মত-সংগঠন নির্বিশেষে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় কাজ করতে হবে।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না করোনা মোকাবিলায় সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলোকে স্বাগত জানান। তবে তার অভিযোগও আছে। তিনি জানান, শুরু থেকে যে সীমাহীন গাফিলতি সরকার করেছে, তার খেসারত দিচ্ছে দেশ এবং এর শেষ কোথায় সেটাও আমরা জানি না। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে চতুর্থ স্তরের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। অথচ এখনও আমরা পর্যাপ্ত পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে পারিনি। সরকারের পক্ষ থেকে যেসব হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য প্রস্তুত হয়েছে বলে বলা হচ্ছে, সেগুলোও এখনও সেবা দেওয়ার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেনি। এখনও চিকিৎসকদের পর্যাপ্ত সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায়নি। পর্যাপ্ত আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা যায়নি। পোশাককর্মীদের বেতনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু বলা হয়নি।
এ পরিস্থিতি থেকে বেরুতে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে নিয়ে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের মাধ্যমে সংকট থেকে উত্তরণের আহ্বান জানান মান্না।
Posted ১২:৪৪ | শুক্রবার, ১০ এপ্রিল ২০২০
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | Athar Hossain