বৃহস্পতিবার ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আ.লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরছেন আবুল হোসেন

  |   সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ | প্রিন্ট

আ.লীগে গুরুত্বপূর্ণ পদে ফিরছেন আবুল হোসেন

পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ উঠার পর যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদটিও হারিয়েছিলেন সৈয়দ আবুল হোসেন। কানাডার আদালতে এই অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ হওয়ার পর এখন অভিযুক্তদের ক্ষতিপূরণ কী হবে-এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই আবুল হোসেনকে আবারও দলের দায়িত্বে ফিরিয়ে আনার আলোচনা শুরু হয়েছে।

ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা  জানান, পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ উঠার পর তদন্তের স্বার্থেই আবুল হোসেনকে মন্ত্রী এবং দলীয় পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। আর আবুল হোসেনও সরকার এবং দলকে সাহায্য করেছে। তবে তিনি যে কোনো দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন না, সেটি আদালতের রায়েই প্রমাণ হয়েছে। দলের প্রতি আনুগত্য থাকায় দলীয় শীর্ষ পর্যায় তাকে উপযুক্ত সন্মান দেবে।

আওয়ামী লীগের একজন সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘দলের সভাপমিমণ্ডলীর তিনটি এবং আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদটি ফাঁকা রয়েছে। সেই হিসাবে সৈয়দ আবুল হোসেনর পদোন্নতিরও সম্ভাবনাও রয়েছে।’ এই নেতা বলেন, ‘আবুল হোসেনকে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও করা হতে পারে।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান  বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক যে তাকে অপবাদ দিয়েছে সে জন্য তার উচিত বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করা। আর আমি আশা করি দলও তাকে মূল্যায়ন করবে।’

আবুল হোসেনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ একজন নেতা  বলেন, ‘দুর্নীতির অসত্য অভিযোগ তুলে সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো একজন মার্জিত ব্যক্তিকে মন্ত্রিত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। দলের পদ কেড়ে নেয়া হয়েছে। দলের মনোনয়নও দেয়া হয়নি সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে। সব হারিয়ে তিনি এখনও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নিয়েই আছেন। যারা দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল তারা তো প্রমাণ করতে পারেনি। তাহলে তার সুনাম নষ্টের কী হবে? এখন তো আবুল হোসেনকে মূল্যায়নের সুযোগ তৈরি হয়েছে। দলের গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য তিনি যোগ্য।’

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সৈয়দ আবুল হোসেন আওয়ামী লীগের আগের কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। এ পদে তাকে সরিয়ে ফারুক খানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ২০ তম সম্মেলনের পরে ফারুক খান পদোন্নতি পেয়ে দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হন। আর এতে ফাঁকা থাকে আন্তর্জাতিক সম্পাদকের পদটি।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য  বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মত একটি বৃহৎ দলে আন্তর্জাতিক সম্পাদকের গুরুত্ব অনেক বেশি। যোগ্য ব্যক্তিকেই এ পদে দায়িত্ব দেয়া হবে। দলের অবস্থা বিবেচনা করে বুঝা যাচ্ছে এ পদে সৈয়দ আবুল হোসেনকেই দেয়া হতে পারে। কারণ অতীতে তিনি যোগ্যতার সাথেই এ দায়িত্ব পালন করেছেন।’

২০১০ সালে বিশ্বব্যাংক পদ্মাসেতু প্রকল্পে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ তুলে সে সময়ের যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনের দিকে আঙ্গুল তোলে। তার বিরুদ্ধে তদন্তের পাশাপাশি মামলা করতে চাপ দিতে থাকে সংস্থাটি। সরকার সে দাবি না মানায় ২০১৩ সালের জুনে ১২০ কোটি ডলার অর্থায়নের চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয় সংস্থাটি। তারা সরে যাওয়ার পর অন্য সহযোগী সংস্থা জাইকা, এডিবি ও আইডিবিও সরে যায় এবং সরকার নিজ অর্থে সেতুর কাজ শুরু করে।

বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ছিল, কানাডার পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এসএনসি লাভালিন জড়িত ছিল এই দুর্নীতি চেষ্টার সঙ্গে। তাদের এই সেতু প্রকল্পে পরামর্শকের কাজ পাওয়ার কথা ছিল। আর কানাডার আদালতে ওই প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মকর্তাসহ পাঁচ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীসহ দুই জনকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

স্থানীয় সময় শুক্রবার এই মামলার রায় প্রকাশ হয়। এতে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগকে গালগপ্প এবং গুজব বলে উড়িয়ে দেন বিচারক। এই রায়টির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য বাংলাদেশে প্রকাশ হয় শনিবার। এর পরই বিশ্বব্যাংককে জবাবদিহি করার পাশাপাশি এই মামলার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের কী হবে সে নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা।

আর আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতাদের বক্তব্যের পর আবুল হোসেনের বিষয়টি আলোচনায় আসে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একজন সদস্য বলেন, ‘সামনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। তাই আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের পদটি গুরুত্বপূর্ণ। এ পদে যিনি আসবেন তারও বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক থাকতে হবে। আবুল হোসেন যেহেতু আগে এ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন তাই তাকে বেগ পেতে হবে না।’

১৯৯২ সালে মাদারীপুরের কালকিনী আওয়ামী লীগের হাল ধরেন ব্যবসায়ী সৈয়দ আবুল হোসেন। সেই থেকে তিনি চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং একবার প্রতিমন্ত্রী ও আরেকবার মন্ত্রী হন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে আবুল হোসেনকে স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছিল। নবম সংসদ নির্বাচনের পর তাকে করা হয় যোগাযোগমন্ত্রী করা হয়।

দশম সংসদ নির্বাচনে আবুল হোসেনের মাদারীপুর-৩ আসনে তার বদলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম।

আবুল হোসেন এলাকায় একজন শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবক হিসেবে পরিচিত। তিনি মাদারীপুরে বেশ কিছু স্কুল, কলেজ করেছেন। যেগুলো তার নিজস্ব অর্থায়নের পরিচালিত হচ্ছে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১০:২৪ | সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com