| শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২ | প্রিন্ট
শাহরিয়ার মিল্টন, শেরপুর : রাব্বানীর বয়স ১৫ বছর। এই বয়সে পড়াশোনা ও খেলাধুলা করার কথা, কিন্তু সেই বয়সে ঘরের কোণে দিন পার করছে সে। খেলাধুলাতো দূরের কথা, রাব্বানী উঠে বসতেও পারে না। মুখ ভরা মলিন চোখে ঘরের কাণায় সারাদিন শুয়ে দিন কাটে তার। বলছি শেরপুরের শ্রীবরদীর সিংগাবরুণা ইউনিয়নের জলঙ্গা মাধবপুর গ্রামের ভ্যানচালক উসমান আলীর ছেলে রাব্বানীর কথা। ১৫ বছরের রাব্বানীর ১৩বছর ধরে কাটছে ঘরের মধ্যে।
রাব্বানীর পরিবার জানায়, দুই বছর বয়সে হঠাৎ জ্বর উঠে রাব্বানীর। তারপর জ্বরের চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে নিয়ে আসে পরিবার। পরবর্তীতে জ্বর ভালো হলেও তার দু’পা অবস হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় চিকিৎসা করালেও সুস্থ হয়ে উঠেনি রাব্বানী। আর এভাবেই ১৩টি বছর ধরে কাটছে ঘরের কোণে। কারণ, ভ্যানচালক বাবার পক্ষে ছেলেকে একটি হুইল চেয়ার কিনে দেওয়া সম্ভব নয়। সারাদিন ভ্যান চালিয়ে যা আয় হয়, তা দিয়ে কোন মতে পাঁচ সদস্যের সংসার চলে তাদের।
সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জানালার ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে আছে রাব্বানী। প্রতিবেশী শিশুরা যখন স্কুলে যাচ্ছে, রাব্বানী শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছে। আর পাশেই শিশুরা যখন খেলাধুলা করছে রাব্বানী তখন বাবার ঘাড়ে উঠে একটু বাইরে আলো বাতাসের শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে।
বাবা ভ্যানচালক উসমান আলী বলেন, ‘আমার তিন ছেলে, এরমধ্যে সবার বড় রাব্বানী। জন্মের পর ভালাই আছিল সে, হঠাৎ করে জ্বর আহে (আসে) তার শইল্লে (শরীরে), এরপর থনেই (থেকে) দুইডে (দু) পা অবস (অচেতন হয়ে যা। আর ঠিক হয় নাই। মেলা (অনেক) চিগিশসা (চিকিৎসা) করছি, ভালা অয় (হয়) না, এখন টেহাও (টাকাও) নাই আর চিগিশসাও (চিকিৎসা) করবার হারিনা (পারি না)। এডা (একটা) প্রতিবন্ধি কাট (কার্ড) করে দিছে তিন মাস চার মাস পর পর ২২৫০ টেহা করে আহে (আসে), কতবার আবার আহে (আসে) না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ঠিক মতো ভাত খাবার পাই না পোলারে কইথনে (কই থেকে) চিয়ার (হুইল চেয়ার) কিনে দিমু। সারাদিন ভ্যান চালাইয়ে যে কয়ডা টেহা (টাকা) পাই,
কোন মতে সংসার চালাই। আমার সংসারে আমি ছাড়া আর কোন কামাইদার নাই। এই ভ্যান চালাইয়ে জীবনডা পার করতাছি।’
মা লাভলী বেগম বলেন, ‘খুব কষ্ট কইরা পোলাডারে (ছেলেকে) পালতাছি (লালন-পালন)। এই পোলাডারে ঘাড়ে কইরা বাইরে নিয়ে যাই আবার আনি। বিরাট কষ্ট হ, কেউ পোলাডার দিকে চাই না। আমার পোলাডারে কেউ এডা চেয়ার ভিক্ষা দিলে আমি কষ্ট থেকে মুক্তি পাইতাম। মেলাজনের (অনেকজনের) কাছে গেছিলাম কেউ এডা
চেয়ার দেই না। পোলাডারে ডাক্তারও দেহাবার (দেখাবার) পাইতাছি না টেহার (টাকার) জন্য। আগে যা আছিল সব বেইচি (বিক্রি করে) শেষ হইছে এখন আর অসুধও
(ঔষধ) দিবার (কিনতে) পাই নে।’
স্থানীয় বাসিন্দা আবু সাঈদ বলেন, ‘অনেকদিন ধরে আমরা দেখতাছি খুব কষ্টে আছে তারা। এই ছেলেটা ছোট বেলায় ভালো ছিলো, হঠাৎ করেই তার দুই পা অবস হয়ে যায়। জমিজমা তেমন ছিল না, তবে যতটুকু ছিল সবটুকু বিক্রি করে ছেলেকে চিকিৎসা করিয়েছে। আর টাকার জন্য চিকিৎসা করাতে পারেনি। তাই রাব্বানীর জন্য কেউ যদি একটি হুইল চেয়ার কিনে দেয়, তাহলে তাদের পরিবারের কষ্টটা একটু হলেও দূর হবে। আর বাইরে আসতে পারবে রাব্বানী।’
সিংগাবরুণা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ ফকরুজ্জামান কালু বলেন, ‘এই ছেলের খোঁজ-খবর নিয়ে পরিষদ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব আমি চেষ্টা করবো।’
Posted ১৮:৪৯ | শুক্রবার, ০৮ এপ্রিল ২০২২
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin