শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমাদের মুখোশ নেই, মুখ আছে: ইফেতাখারুজ্জামান

  |   বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০১৪ | প্রিন্ট

iftekharujjaman
নিজস্ব প্রতিবেদক, 

ঢাকা : দুদক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পুর বক্তব্যের জবাবে টিআইবির নির্বাহি পরিচালক ড. ইফেতাখারুজ্জামান বলেছেন, “আমি তার বক্তব্যে বিব্রত হয়েছি। তিনি যে ভাষা ব্যবহার করেছেন তাতে তিনি নিজেই নিজেকে ব্রত করেছেন। সরকারের অনুমোদনের বাইরে টিআইবি কোনো অর্থ গ্রহণ করতে পারে না, ব্যয়ও করতে পারে না। আমাদের কোনো মুখোশ নেই, মুখ আছে।”

 বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল অবকাশে ‘জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল: বাস্তবায়নের অগ্রগতি’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে একথা বলেন ইফেতাখারুজ্জামান। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুদক কমিশনার রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়। মামলা দায়ের এবং প্রত্যাহারও হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। এছাড়া দুদকের তদন্তেও হস্তক্ষেপ রয়েছে সরকারের।

বুধবার দুদক কমিশনার মো. সাহাবুদ্দিন চুপ্পু টিআইবির সমালোচনা করে বলেন, “টিআইবি বিদেশ থেকে টাকা এনে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে তথাকথিত গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাদের এসব কাজের স্বচ্ছতা কি? সময় আসবে টিআইবির মুখোশ উন্মোচন করা হবে।”

বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রণীত জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলের ঘাটতিসমূহ দূর করে এর সফল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দলিলটিকে পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন উপযোগী করে তুলতে সংবাদ সম্মেলনে আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি। একই সঙ্গে আর্থিক বরাদ্দ ও নিয়মিত প্রতিবেদন প্রণয়নের বিধান রেখে নৈতিকতা কমিটির কার্যক্রমকে প্রশাসনিক কার্যক্রমের আওতায় আনার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

অনুষ্ঠানে গবেষণা প্রতিবেদনের সারাংশ উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সাধন কুমার দাস ও শাম্মী লায়লা ইসলাম। আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবি’র ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. সুমাইয়া খায়ের।

জানুয়ারী – মে ২০১৪ সময়কালে সংগৃহীত তথ্য ও উপাত্তের ভিত্তিতে প্রণীত এই গবেষণা প্রতিবেদনে জানানো হয়- জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ‘জাতীয় শুদ্ধাচার উপদেষ্টা পরিষদ’ এবং অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি ‘নির্বাহী কমিটি’ রয়েছে। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রশাসনিক ও বাস্তবায়ন অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে গঠিত জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন ইউনিটের নির্দেশনায় সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা কমিটি গঠন ও একজন ‘ফোকাল পয়েন্ট’ নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন ইউনিট সকল রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে শুদ্ধাচার বাস্তবায়নের নির্দেশনা প্রেরণ করেছে, ফোকাল পয়েন্ট ও মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এবং জেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে শুদ্ধাচার সম্পর্কে মতবিনিময় করেছে। তাছাড়া শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনীয় আইনী সংস্কার ও প্রশাসনিক উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী অরাষ্ট্রীয় ছয়টি প্রতিষ্ঠানের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পদ্ধতি বা প্রক্রিয়া এখনও প্রণীত না হওয়ায় রাজনৈতিক দল, বেসরকারি খাতের শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, এনজিও, পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং  গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট কোনো নৈতিকতা কমিটি গঠিত হয়নি এবং ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর উদ্যোগে এনজিও ও সুশীল সমাজ খাতের কর্মপরিকল্পনা তৈরিতে কয়েকটি এনজিও কাজ করলেও এখনও কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব হয়নি।

ওই ছয়টি অরাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থা মূল্যায়ন করলে দেখা যায়, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্র চর্চার দৃষ্টান্ত কম, রাজনৈতিক দলের আচরণবিধি প্রণয়নের উদ্যোগ নাই, ব্যবসায় স্বনিয়ন্ত্রণ থাকলেও অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও সরকারের সাথে যোগসাজশ রোধে কোন পদক্ষেপ নাই এবং জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তথ্য কমিশনের নিজস্ব সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় ও দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ না করা, সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে ঝুঁকির সম্মুখীন হতে হয় ইত্যাদি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী কৌশলপত্রে কয়েকটি ঘাটতি রয়েছে যা হলো – দুর্নীতিরোধে অগ্রাধিকারমূলক কার্যক্রমের অনুপস্থিতি; জাতীয় সততা ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান – তথ্য কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী ও সশস্ত্র বাহিনীকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্রে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি ইত্যাদি।

এছাড়া ন্যায়পাল নিয়োগ না করা; দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের আনীত সংশোধনীর ওপর হাইকোর্টের রহিতকরণ নির্দেশনা জারি সত্ত্বেও সংশোধনের উদ্যোগ না নেয়া ; তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সরকারি কার্যালয়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠায় অনুল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়া, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এখনও বাস্তবায়িত না হওয়ায় সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ সত্ত্বেও অংশীজনদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কাঙ্খিত সাফল্য অর্জন করতে পারেনি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলটি সফলভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ার পেছনে চ্যালেঞ্জসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল – সুপারিশের সাথে কর্মপরিকল্পনার সামঞ্জস্যহীনতা; কর্মসম্পাদনের নির্ধারিত সময়সীমা সুস্পষ্ট ও বাস্তবসম্মত নয়; অংশীজনদের মধ্যে শুদ্ধাচার সম্পর্কিত সচেতনতার অভাব; শুদ্ধাচার কৌশলটি বাস্তবায়নে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের অভাব; নৈতিকতা কমিটি গঠন ও ফোকাল পয়েন্ট নিযুক্ত না হওয়া, এখতিয়ার না থাকার কারণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিনানুমতিতে নিয়মিত সভা করতে না পারা এবং নৈতিকতা কমিটি কর্তৃক প্রতিবেদন প্রণয়ন ও প্রেরণে দীর্ঘসূত্রতা।

সংবাদ সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের যে প্লাটফর্ম তৈরী হয়েছে তা যথাযথ ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনসহ সকলকে বিশেষ উদ্যোগী ভূমিকা পালন করতে হবে।”

জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলটির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় টিআইবি ১০ দফা সুপারিশ জানিয়েছে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হল: সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সকল অংশীজনের মধ্যে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার; যে সব প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা কমিটি ও শুদ্ধাচার বাস্তবায়ন কমিটি গঠিত এবং ফোকাল পয়েন্ট নির্ধারিত হয়নি তা দ্রুত সম্পন্নকরণ; আর্থিক বরাদ্দ এবং নিয়মিত প্রতিবেদন প্রণয়নের বিধান রেখে নৈতিকতা কমিটির কার্যক্রমকে প্রশাসনিক কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসা; জাতীয় সততা ব্যবস্থার সকল স্তম্ভ এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানকে যেমন, তথ্য কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী ও রাজস্ব বোর্ডকে কৌশলপত্রে অন্তর্ভুক্তকরণ।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১২:৪১ | বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০১৪

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com