বৃহস্পতিবার ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম >>
শিরোনাম >>

আমলীচুকাই আদর্শগ্রামবাসী’র মানবেতর জীবনযাপন : চিকিৎসা-স্বাস্থ্য ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত

  |   রবিবার, ১২ জুন ২০২২ | প্রিন্ট

আমলীচুকাই আদর্শগ্রামবাসী’র মানবেতর জীবনযাপন : চিকিৎসা-স্বাস্থ্য ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত

আল আমিন মন্ডল, (বগুড়া) থেকে : বগুড়ার গাবতলী কাগইল ইউনিয়নের আমলীচুকাই আদর্শগ্রামের ৬০পরিবার বসবাস করলেও এখন তারা নানাভাবে শিক্ষা, মা-শিশুস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ায় মানবেতর ভাবে জীবন যাপন করছে। জানা যায়, আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম প্রকল্প উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে এখানে যেন সমস্যার অন্ত নেই। প্রতিদিন তাদের দুর-চিন্তাই দিন কাটাতে হচ্ছে।

এছাড়াও প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোন স্কুল। নামাজ পড়ার মসজিদ ও দাফনের জন্য নেই কোন কবর স্থান। পুকুরে মাছ চাষ করে ভূমিহীন পরিবারগুলো আর্থিক ভাবে উন্নয়ন ও স্বাবলম্বী হওয়ার চেষ্টা করছে। এছাড়াও তারা ক্ষুদ্র ও কুটির হস্ত শিল্পের কাজ সেলাই, দিনমজুরী ও ভ্যান-রিক্সা চালিয়ে পরিবারের মুখে জুটাচ্ছেন ডাল ভাত। তবুও তাদের পাশে যেন কেউ নেই। আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম বাসী চায় পুকুরপাড় ও ঘর-রাস্তা সংস্কার, মা ও শিশুদের জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, খাদ্য, নিরাপত্তা, বস্ত্র ও চিকিৎসা সেবা’সহ নাগরিক অধিকার। টিকাদান ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র স্থাপনের দাবী’সহ কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবীও জানান তারা। আদর্শগ্রামে টিবওয়েল অকেজো হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট, মসজিদ, কবর স্থান, বিদ্যালয়, ক্লিনিং, স্বাস্থ্য ও ঠিকাদান কেন্দ্র, সীমানা নির্ধারন, পুকুরঘাট, পাঠাগার ও বিনোদন কেন্দ্র নেই। ফলে অসহায় আমলীচুকাই আদর্শগ্রামবাসী এসকল সমস্যা অতিদ্রুত সমাধানের জন্য দাবী জানান।

সরকার স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে স্যানেটারি ল্যাট্রিন, গভীর নলকুপ স্থাপন করা হলে আজও তা অনেকটা পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। উঠছে না নলকুপ দিয়ে পানি। সংস্কার কাজ না করায় ৬০টি পরিবারের এখন বেহাল দশা। এমনকি এখানে দিনদিন জনসংখ্যা বৃদ্ধি’র ফলে বসবাসে অনুপযোগী হওয়ায় অনেকে আদর্শগ্রাম ছেড়ে চলে যেতে বাঁধ্য হয়েছেন। গভীর নলকূলগুলো বিকল ও টয়লেটগুলো ভেঙ্গে গেছে। ক্লিনিক ঘর থাকলেও চলছে না কোন পরিবার পরিকল্পনা বা স্বাস্থ্য সেবার কোন কার্যক্রম। ক্লিনিং ঘরের দেয়াল ভাঙ্গনের সৃষ্টি হলেও অর্থের অভাবে কোন মেরামত নেই। ৬০টি পরিবারে বিদ্যুৎতের আলো জ্ব¡ালিয়ে দিলেও স্কুল না থাকায় অর্ধশতাধিক ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়া এবং অনেক শিশু কিশোর পুষ্টিহীনতায় ভূগছে। এখানে বসবাসরত কিশোর কিশোরীরা জানেন না, প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন তথ্য।

ফলে চরম ভাবে মা ও শিশু স্বাস্থ্য সেবা বিঘিœত হচ্ছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি সঠিক ভাবে অনুসরন বা তথ্য না জানার ফলে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় আর্থিক সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক বৃদ্ধ বা বৃদ্ধাগণ আর্থিক অভাবের কারনে সঠিক মতে চিকিৎসাও করতে পারে না। এমনকি অনেক সময় মা ও শিশুস্বাস্থ্য সেবা পেতে তাদের নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। আদর্শগ্রামের ১৫বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধী শিশুরা থাকলে আজও পাইনি তারা কোন ভাতা কার্ডের সুবিধা। সবকিছু মিলে মনে হয় যেন অসহায় মানুষের এক দুর্বিষহ জীবনযাপন। আমলীচুকাই আদর্শগ্রাম সমবায় সমিতি লিঃ সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ জানান, সরকারের সু-দৃষ্টি না থাকায় এখানে বসবসরত নারী-পুরুষরা পরিবার পরিকল্পনা, মা ও শিশু স্বাস্থ্য নিয়ে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।

সাবেক সাধারন সম্পাদক আমিরুল ইসলাম জানান, স্বাস্থ্য ক্লিনিং ও স্কুল না থাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ছে না। ফলে শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীরা তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে বিপাকে পড়ছে। আদর্শগ্রামে বসবাসরত উজ্জল, বজলার ও লতিফ জানান, এখানে আদর্শগ্রামের মরিয়মের কন্যা শিশুটি হঠাৎ মৃত্যু হলে তাকে অন্যত্রে দাফন সম্পূর্ণ করতে হয়েছে। এরপরও নেই স্বাস্থ্য ও শিক্ষার কোন আলো। এসব সমস্যার দ্রুত সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন দিনমজুর আদর্শগ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ। এ বিষয়ে গাবতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছাঃ রওনক জাহান জানান, এ সকল সমস্যা’র জন্য কোন লিখিত আবেদন পাইনি। তবে আবেদন পেলে অবশ্যই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অথবা দপ্তর’কে বিষয়গুলি জানানো হবে।

কাগইল ইউপির চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ মোল্লা জানান, আমলীচুকাই আদর্শগ্রামের বর্তমান অবস্থা খুব খারাপ। তবে সকল সমস্যা বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অবগত করেছি। আশাকরছি ইউএনও মহোদয় দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহন করিবেন। আদর্শগ্রাম বাসী নাগরিক অধিকার ও শিক্ষা-স্বাস্থ্য সেবা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রতিবেদকের মতে, এছাড়াও জনসংখ্যা, পরিবার পরিকল্পনা, মা-শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক ক্ষেত্রে নি¤œ বিষয়গুলোর উপর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয় কার্যক্রম পরিচালনা ও পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। আধুনিক গর্ভনিরোধক ব্যবহার ও প্রারম্ভিক বিবাহ’সহ গর্ভাবস্থা এবং মার্তৃত্ব সম্পর্কিত গনসচেতনা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।

সংক্ষিপ্তঃ গর্ভনিরোধক গ্রহনের সময় দ্বৈত নিরাপত্তা নিশ্চিত করন ও ঝুকি নিরুপন করে প্রজননতন্ত্র ও পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে জনসংখ্যা ও উন্নয়নে পরিবার পরিকল্পনা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে নিরালস ভাবে কাজ করতে হবে।গর্ভনিরোধে পল্লী নারীদের সচেতনা বাড়াতে হবে। সংক্ষিপ্তঃ খাবারবড়ি ও ইনজেকশন (ডিএমপিএ) বিষয়ে প্রচার-প্রচারনা বাড়াতে হবে। শহর-গ্রামের নারীরা গর্ভনিরোধের ব্যবস্থাপনায় নিরাপদ করতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী পদ্ধতিতে আধুনিকায়নের ছোয়া লেগেছে।

এ জন্য নারী সমাজ কে পরিবার পরিকল্পনা স্থায়ী পদ্ধতিতে বিষয়ে জানাতে ব্যাপক ভাবে কাজ করতে হবে। নবজাতক শিশু ও শিশুর স্বাস্থ্য সেবায় কাজ করছে সরকার। ফলে ছিন্নমুল ও ভূমিহীন মানুষদের স্বাস্থ্য সেবা পেতে ও উন্নয়ন প্রয়োজনে একটি ফোন কল (ডিজিটাল স্বাস্থ্য সেবা) নিশ্চিত করতে হবে। জনসংখ্যা ও উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকায় পরিবার পরিকল্পনা প্রসাংশনীয় কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছে। মা ও শিশু-নবজাতক এবং কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সেবা ও মাতৃত্ব এবং গর্ভাবস্থা সুরক্ষায় গনসচেতনতা বাড়াতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা নানা উদ্যোগের কথা সবাইবে জানাতে হবে। জনসংখ্যা সমস্যা সমাধানের উপায় ও উন্নয়নে একযোগে সবাই কে কাজ করতে হবে। শিশু-নবজাতক ও কিশোর কিশোরী দের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে মাঠঘাঠে সেবাকর্মীদের আরো কাজ করতে হবে।

যৌন-সংক্রমন ও এইচএইভি/এইডস বিষয়ে সচেতনতা আরো বৃদ্ধি করতে হবে। এমনকি শিশু ইপিআই কার্যক্রমের ফলে শিশু মৃত্যু হার কমেছে। নিরাপদ কাল ও গর্ভধারনে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও ওয়ার্ড পয়ায়ের ক্লিনিং গুলোর সহসী নানা পদক্ষেপ এবং স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষে সাধারণ জনগন (গ্রামীণ জনগোষ্ঠি) কে আরো সচেতন করতে হবে। আমার জানা মতে, জনসংখ্যা এবং উন্নয়নে পরিবার পরিকল্পনা ও মা-নবজাতক ও কিশোর-কিশোরীকে সেবা দিতে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ব্যস্ততা বেড়েছে। ফলে গর্ভনিরোধক ও প্রারম্ভিক বিবাহ এবং গর্ভাবস্থায় ও মাতৃত্ব এবং নবজাতক-শিশু-মা স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে তথ্য সেবা কার্যক্রম বাড়াতে হবে বা আরো গতিশীল করতে হবে। বাংলাদেশের উন্নয়নে জনসংখ্যা (জনগন) কে স্বাস্থ্য সেবা ও মা-শিশুদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে টিকাদান কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে হবে।

পল্লী জনগোষ্ঠি স্বাস্থ্যসেবা প্রদানে ইতিমধ্যে প্রশাংসা অর্জন করেছে সরকার। নারী ও পুরুষরা আজ পরিবার পরিকল্পনা সেবা নিয়ে ভাল আছেন। আধুনিক গর্ভনিরোধক ব্যবহার ও প্রারম্ভিক বিবাহ-গর্ভাবস্থা এবং মাতৃত্ব সচেতনতা বাড়াতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য তথ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন ও গবেষনা এবং বিষয় ভিক্তিক রিপোটিং ও প্রচার-প্রচারনা বাড়াতে হবে। স্বাস্থ্য ও পবিবার পরিকল্পনা, মা, শিশু-নবজাতক ও কিশোর-কিশোরী স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা এবং উন্নয়নে বিষয় ভিক্তিক সচেতনা বৃদ্ধিতে একযোগ কাজ করতে হবে।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৪:৫১ | রবিবার, ১২ জুন ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement

এ বিভাগের আরও খবর

Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com