শুক্রবার ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আপনারা এত ভালো হলে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেন: আসিফ নজরুল

  |   শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট

আপনারা এত ভালো হলে ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেন: আসিফ নজরুল

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতাদের উদ্দেশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ‘আপনারা যদি এত ভালো লোকই হোন, তাহলে মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেন।’

তিনি বলেন, ‘আর যদি মনে করেন ভোটাধিকার দরকার নাই, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকবে- তাহলে সংবিধান সংশোধন করে দেন। আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ ক্ষমতায় আসবে না এটা সংবিধানে লিখে দেন।’

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী: বাংলাদেশের প্রত্যাশা, প্রাপ্তি ও আগামীর চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পেশাজীবী অধিকার পরিষদ।

ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘আপনারা কোন বিবেচনায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আছে। নির্বাচন হলেই বা লাভ কী৷ নির্বাচনের দরকারই বা কী। আমার প্রশ্ন হলো, আপনারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হলেন কীভাবে। যারা চুরি করে, গুম করে, দিনের ভোট রাতে করে, অত্যাচার করে তারা কখনো মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হলো অবাধ ভোটাধিকার, সুষ্ঠু গণতন্ত্র, কোনো দুর্নীতি করা যাবে না, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করা যাবে না।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে এর আগে কোনো আমলেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে লুটপাটের ঘটনা ঘটেনি। বালিশের দাম ৪০ হাজার টাকা ছিল না। দিনের ভোট রাতে হয়নি। মানুষ ঘুমাচ্ছে ঢাকায়, কিন্তু ঘুম থেকে উঠে দেখে সে গুম হয়ে চলে গেছে শিলং! এরকম কোনো আমলেই হয়নি। আমাদের যদি প্রশ্ন করা হয় কেমন আছি, আমরা সবসময় আগের আমলের সঙ্গে তুলনা করবো। জিয়াউর রহমান, এরশাদ, বঙ্গবন্ধু কোনো আমলেই বর্তমান সময়ের মতো ঘটনা ঘটেনি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অধ্যাপক আরও বলেন, ‘আমরা যখন এসব কথা বলি, আমাদেরকে বলা হয় উন্নয়ন হচ্ছে। উন্নয়ন বলতে তারা আমাদেরকে বড় বড় ভবন দেখায়। সবচেয়ে বড় উন্নয়নতো হচ্ছে জেলখানায়। জেলখানার ভেতরে যদি পুরো দেশের মানুষ থাকে, সেটা উন্নয়ন না। কথা বললেই আমরা ভয়ে থাকি। আমরা কোন কারাগারে আছি। আমরা কী পাকিস্তানি কারাগার থেকে আওয়ামী কারাগারে বন্দী হওয়ার জন্য দেশ স্বাধীন করেছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘অনেকেই গুম হয়, আমরা খবর পাই না। আজ পর্যন্ত যারা গুম থেকে ফিরে এসেছেন, কোনো মানুষকে কি বলতে দেখেছেন কারা গুম করেছে তার নাম উচ্চারণ করতে। কোনো অভিযোগ জানাতে দেখিনি। কোনো দেশের মানুষ গুম হওয়ার পর, অত্যাচারিত হওয়ার পরও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ করার সাহস পান না কখন? এই অভিযোগের ব্যাপারে যাদের দায়িত্ব নেওয়ার কথা, তারাই যখন গুম করে, নির্যাতন করে। তখনই মানুষ কথা বলতে সাহস পায় না।’

নির্বাচন প্রসঙ্গে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আজকে আমাদের অনেক প্রাপ্তির কথা বলা হয়, প্রত্যাশার কথা বলা হয়। আমাদের এখন সবচেয়ে বড় প্রত্যাশা হওয়া উচিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকবে। জনগণের ভোটাধিকারই হলো মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে বড় চেতনা। এটাকে অগ্রাহ্য করার জন্য নানা যুক্তি দিচ্ছে। কিছু মানুষ আছে, দেখবেন যারা বলে নির্বাচন দিয়ে কী দরকার। বিরোধীদল তো সংসদেই আসে না, নির্বাচন হলেই কী আর না হলেই কী। এরা আসলে অনির্বাচিত সরকারের পক্ষপাতী।’

তিনি বলেন, ‘শুধু যদি নির্বাচন হয়, বিরোধীদল যদি সংসদে নাও যায়, যদি তারা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন নাও করে, তবুও দুইটা ভালো দিক আছে। কোনো সুস্থ মাথার মানুষের এটা অগ্রাহ্য করার উপায় নাই। প্রথমত, যদি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে ক্ষমতাসীন সরকারের ক্ষমতা হারানোর ভয় থাকে। ১৯৯১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তাই হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ক্ষমতাসীন দল ক্ষমতা হারায়। তারা যখন ভয়ে থাকবে ৫ বছর পর ক্ষমতা হারানোর, তখন চুরি, সন্ত্রাস, অত্যাচার কম করে৷ কারণ, ভয় থাকে যে ৫ বছর পর যখন আমি ক্ষমতা হারাবো, আমাকে জেলে যেতে হবে, মামলা খেতে হবে। আমার সব অপকর্ম তুলে ধরা হবে। এই ভয়ের কারণে তারা অন্যায়, অবিচার, নিপীড়ন কম করে। কিন্তু এই ভয়ই যদি চলে যায়, আমি যতোই ধর্ষণ করি, অত্যাচার করি, নির্যাতন করি, প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করি, যা ইচ্ছা করি আমার কোনো শাস্তি হবে না। তখন তার অত্যাচার, নিপীড়ন, দুর্নীতি সীমাহীন হয়ে উঠে। সুষ্ঠু নির্বাচনে আরেকটা ভালো দিক হলো কৃতজ্ঞতাবোধ থাকবে ভোটারদের প্রতি।’

‘কিন্তু যদি নির্বাচই না হয়, সন্ত্রাসীরা যদি নির্বাচনে জিতিয়ে দেয়, তবে দায়বদ্ধতা থাকবে সন্ত্রাসীদের প্রতি। অথচ বিভিন্ন মিডিয়ায় ভাড়াটে লোকদেরকে এনে বিভিন্ন কথা বলে এসব থেকে জনগণকে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়’, যোগ করেন অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন, ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর, আ স ম আব্দুর রব, ড. রেজা কিবরিয়া, প্রেস ক্লাবের সেক্রেটারি ইলিয়াস খান প্রমুখ। এ সময় পেশাজীবী অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ১৫:১৪ | শুক্রবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২১

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com