আদালতের এজলাসে আচমকা ঢুকলেন আইনপ্রণেতা মনিরুল ইসলাম মনি। তখন বিচারকাজ চলছিল একটি মামলার। এমন অবস্থায় তিনি এগিয়ে গেলেন এজলাসের দিকে। দায়িত্বরত বিচারকের পরিচয় জানতে চাইলেন। বিচারককে বললেন, আইনমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন। আপনি নেমে আসুন। তার এ আবদার শুনে উপস্থিত আইনজীবীরা তাজ্জব বনে যান। বিব্রত, বিচলিত আইনজীবীরা তৎক্ষণাৎ প্রতিবাদ শুরু করেন। হৈ চৈ হট্টগোলে এমপি মনি বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি এজলাস কক্ষে। জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার সহযোগিতায় তিনি গা বাঁচান সেখান থেকে। ঘটনাটি ঘটে গতকাল বরিশালের একটি আদালতে। মনিরুল ইসলাম মনি বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য। তিনি আদালতে গিয়েছিলেন একটি মামলার বিষয়ে তদবির করতে। ওই মামলাটির শুনানির তারিখ ছিল গতকাল।
প্রত্যক্ষদর্শী আইনজীবীরা জানান, এমপি মনি এজলাস কক্ষে ঢুকে মুঠোফোন বের করে বিচারক মো. জাহিদুল কবিরকে বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আপনার সঙ্গে কথা বলবেন।’ তার এ কথা শুনে উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তারা বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। গতকাল বেলা পৌনে ১২টার সময় বরিশাল অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে। তবে বরিশাল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তালুকদার মোহাম্মদ ইউনুস ওই সময় এমপি মনিকে আদালত থেকে বের করে নিয়ে এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। মনিরুল ইসলাম মনি এমপি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আইনমন্ত্রীর একটি মেসেজ দিতে গিয়ে আদালতে গিয়েছিলেন। পরে আদালতে বিচার চলার কারণে এমপি ইউনুসের সঙ্গে বেরিয়ে আসেন তিনি। অপর প্রত্যক্ষদর্শী এডভোকেট এমএইচ সালেক জানান, গত ২৯শে মে উজিরপুর উপজেলা চত্বরে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল ও সংসদ সদস্য মনির ছেলে ড. রিয়াজুল ইসলাম সুমনের সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এসময় সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির গাড়ি ভাঙচুর করে উপজেলা চেয়ারম্যান বাদল সমর্থকরা। ওই ঘটনায় এমপি মনির স্থানীয় প্রতিনিধি নাসিরউদ্দিন বাদী হয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানসহ নামধারী ১০ জন ও অজ্ঞাতনামা ৪০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বাদল জামিন নেন। পরে মামলার বাদী জামিনের বিরোধিতা করে নারাজি দেন। রোববার ওই নারাজির ওপর শুনানি চলছিল।
এদিকে এমপি মনিরুল ইসলাম মনির নানা কর্মকাণ্ডে ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। খোদ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও তার ওপর ক্ষুব্ধ। গত শনিবার বানারীপাড়ায় এমপি’র সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্বের জের হিসেবে সলিয়াবাকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি সদস্য মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সলিয়াবাকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক মিন্টুকে জাসদ নেতা কবির হত্যা মামলার আসামি করেন মনি। এছাড়াও বরিশালে ঠিকাদারি কাজ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে লাঞ্ছিত করলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাকে ঘেরাও করে লাঞ্ছিত করে। এছাড়া, গত মাসে উপজেলা উন্নয়ন সভায় তাকে দাওয়াত না দেয়ায় অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয় মনি সমর্থকরা। এ সময় মনি ও তার পুত্রকে অবরুদ্ধ করা হয়। এক পর্যায়ে মনির পুত্র রিয়াজ অস্ত্র উঁচিয়ে এলাকা ত্যাগ করে। ওই ছবি প্রকাশের পর ব্যাপক আলোচিত-সমালোচিত হন এমপি মনি।
For News : news@shadindesh.com
Like this:
Like Loading...
Related