| সোমবার, ১৭ মার্চ ২০১৪ | প্রিন্ট
ঢাকা: বাংলাদেশের স্বাধীনতার রূপকার হিসেবে যার নাম অকপটে ভেসে আসে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দেশের মানুষের স্বধীনতার স্বপ্ন দেখে যিনি সংগ্রাম করেছেন নিরন্তর। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান ও শেখ সাহেরা খাতুনের পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এ মহান নেতা।
মধুমতি আর বাঘিয়ার নদীর তীরে এবং হাওড়-বাঁওড়ের মিলনে গড়ে ওঠা বাংলার অবারিত প্রাকৃতিক পরিবেশে টুঙ্গিপাড়া গ্রামটি অবস্থিত। সেখানেই কাটে শেখ মুজিবুর রহমানের বাল্যকাল।
শেখ লুৎফর রহমান ও সায়রা খাতুনের পরিবারে চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। ৭ বছর বয়সে তিনি পার্শ্ববর্তী গিমাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। পরবর্তীতে মাদারীপুর ইসলামিয়া হাইস্কুল, গোপালগঞ্জ সরকারি পাইলট স্কুল ও পরে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে লেখাপড়া করেন। মাধ্যমিক স্তরে পড়াশোনার সময় তিনি চোখের দুরারোগ্য বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হলে কলকাতায় অপারেশন হয়। এই সময় কয়েক বছর তার পড়াশোনা বন্ধ থাকে।
১৯৪২ সালে তিনি ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য কলকাতায় গিয়ে বিখ্যাত ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৬ সালে তিনি বিএ পাস করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই সময়ে ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপরই তিনি হোসেন সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিমের মতো নেতাদের সংস্পর্শে আসেন।
১৯৩৮ সালে আঠারো বছর বয়সে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসাকে বিয়ে করেন। এ দম্পতির ঘরে দুই মেয়ে এবং তিন ছেলের জন্ম হয়।
শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। ১৯৬৬ সালে ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ ছয় দফা দাবি পেশ করেন। এ দাবির মূল উদ্দেশ্য ছিল- পূর্ব পাকিস্তান হবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বা যুক্তরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। পরবর্তীকালে এই দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়।
১৯৭১ সালের তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়াদী উদ্যান) এক জ্বালাময়ী ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম স্বধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একদল সামরিক কর্মকর্তার হাতে বঙ্গবন্ধু স্বপরিবারে নিহত হন।
এদিকে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনটিকে শিশু দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর থেকে ১৭ মার্চে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এদিন সরকারি ছুটি থাকে।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।
সোমবার সকাল সাড়ে ৬.টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাড়ে ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
মঙ্গলবার দুপুর ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা করবে আওয়ামী লীগ। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচি
সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।
টুঙ্গিপাড়ার কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মাঝে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক লে. কর্নেল (অব.) মোহাম্মদ ফারুক খান, ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আলহাজ্ব অ্যাডভোকেট শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত থাকবেন।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর মমতা ছিল অপরিসীম। তাই তার জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবসে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার শপথ নিতে হবে। শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠন, দেশপ্রেম জাগ্রত করা এবং আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তুলতে তাদেরকে প্রিয় মাতৃভূমি ও জাতির পিতার সংগ্রামী জীবনের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৯৪তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবসে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা এবং দেশের সকল শিশুসহ দেশবাসীর প্রতি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাল্যকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু ছিলেন নির্ভীক, অমিত সাহসী এবং মানবদরদি। তিনি ছিলেন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী। বঙ্গবন্ধু তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের সকল আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীন, সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ঘটে। তিনি ছিলেন বিশ্বের সকল নিপীড়িত-শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায় ও মুক্তির প্রতিভূ। তার সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব ও নেতৃত্ব সমগ্র জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করেছিল।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন স্বাধীন বাংলাদেশ পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করেন, তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে তাকে সপরিবারে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও উন্নয়নের ধারাকে নস্যাৎ করে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রা ও উন্নয়নকে স্তব্ধ করে দেয়া হয়।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের প্রচলিত আদালতে বিচার ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হয়েছে। ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত অবশিষ্ট পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। নবতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন করা শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফিরাত এবং আগামী দিনের কর্ণধার শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন।
Posted ০১:০৫ | সোমবার, ১৭ মার্চ ২০১৪
Swadhindesh -স্বাধীনদেশ | admin