শুক্রবার ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

অনড় বিরোধীরা : অজ্ঞাত স্থানে রাজাপাকসে প্রেসিডেন্টকে যেতেই হবে

  |   বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২ | প্রিন্ট

অনড় বিরোধীরা : অজ্ঞাত স্থানে রাজাপাকসে প্রেসিডেন্টকে যেতেই হবে

শ্রীলঙ্কায় বিরোধী দলগুলো অনড়। তাদের এক দাবি- প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসেকে বিদায় নিতেই হবে। তারপরেই তারা অন্তর্বর্তী সরকারে যোগ দেয়া নিয়ে ভাববে। কিন্তু তাদের আহ্বানে সাড়া দেননি প্রেসিডেন্ট। এ অবস্থায় কী হতে যাচ্ছে শ্রীলঙ্কায় তা অনুমান করা কঠিন। পরিস্থিতি যা দাঁড়িয়েছে তাতে যেকোনো সময় যেকোনো খবর আসতে পারে। ওদিকে প্রধানমন্ত্রী বা সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিদের স্থাপনা টার্গেট করে হামলা, অগ্নিসংযোগ অব্যাহত রয়েছে। উত্তেজিত জনতা ক্ষমতাত্যাগী সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দ রাজাপাকসের ছেলের মালিকানাধীন একটি বিলাসবহুল রিসোর্টে আগুন দিয়েছে। শুধু যে এই আগুন, তা নয়। ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে দেশটি শুধু সোমবার উত্তেজিত জনতা রাজনীতিবিদদের কমপক্ষে ৫০টি বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে।

রাজাপাকসে পরিবারের একটি বিতর্কিত জাদুঘরও পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে। সহিংসতায় নিহত হয়েছে কমপক্ষে ৮ জন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ২০০ মানুষ। আজ সকাল পর্যন্ত দেশজুড়ে কারফিউ বহাল আছে। তৃতীয় দিনের মতো গতকালও সব দোকানপাট, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও অফিস বন্ধ ছিল। কারফিউ দেয়া হলেও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আছে। রাজনৈতিক দলের নেতারা এ শঙ্কা থাকার কারণে মিটিং করেছেন অনলাইনে। রাজপথে টহল দিচ্ছে সেনাবাহিনী। আইন লঙ্ঘনকারী, লুটেরাদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। তা নিয়ে নানা গুঞ্জনও আছে। বলা হচ্ছে, সেনাবাহিনীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসের একটি দহরম মহরম সম্পর্ক আছে। কারণ, তামিলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী। যুদ্ধ পরিচালনা করেছেন তিনি। সেখানে তার ভালো ‘হোল্ড’ বা প্রভাব আছে। ফলে দেশ যখন সংকটে নিমজ্জিত তখন তিনি সেই সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করছেন।

রাজধানী কলম্বো এখনো সহিংসতার সাক্ষ্য বহন করছে। রয়েছে বিপুল পুলিশ উপস্থিতি। এখানে ওখানে পুড়ে যাওয়া বাস পড়ে আছে। কোনো কোনোটি উল্টো হয়ে পড়ে আছে। হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করলেও বিক্ষোভকারীরা ভীত নয়। তারা মঙ্গলবার সন্ধ্যায়ও প্রতিবাদের মূল কেন্দ্র গ্যালে ফেস গ্রিনের সামনে সমবেত হন। তাদের এক কথা- প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে অর্থনীতিকে ভয়াবহভাবে অব্যবস্থাপনায় নিয়ে গেছেন। তাকে অবশ্যই পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। জনউত্তেজনা কমাতে একদিন আগে সোমবার তার বড় ভাই মাহিন্দ রাজাপাকসে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। কিন্তু তাতে জনরোষ কমেনি। উল্টো বেড়েছে। পদত্যাগ করার পর প্রবল প্রতাপশালী মাহিন্দ রাজাপাকসে তার নিজের বাসভবনের সামনের দরজা দিয়ে বেরুতে পারেননি। বিক্ষোভকারীরা তার বাড়িতে কমপক্ষে ৮টি গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। ফলে ভীরু মানুষের মতো পেছনের দরজা দিয়ে তিনি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। হেলিকপ্টার নিয়ে তাকে উদ্ধার করে সেনাবাহিনী। নিয়ে রাখা হয় ত্রিনকোমালি নৌঘাঁটিতে। তাও ঘিরে ফেলেন বিক্ষোভকারীরা। শোনা যাচ্ছে সেখান থেকেও তাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। ওদিকে তিনি বা কোনো এমপি যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন সে জন্য উত্তেজিত জনতার একাংশ বিমানবন্দর ঘেরাও করে রাখে। তবে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে, তিনি ও অন্যরা ভারতে পালিয়ে গেছেন। এমন খবরকে শ্রীলঙ্কায় অবস্থানরত হাইকমিশন প্রত্যাখ্যান করেছে।

নতুন একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের জন্য অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। কিন্তু প্রধান বিরোধী দল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তারা অন্তর্বর্তী সরকারের অংশ হবে না। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পরিষ্কার হওয়া যায়নি যে, শ্রীলঙ্কার এই রাজনৈতিক সংকট আসলে কোনদিকে মোড় নিচ্ছে। এরই মধ্যে নিজেদের দেউলিয়া ঘোষণা করেছে শ্রীলঙ্কা। তারা আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফের দরজায় কড়া নাড়ছে ঋণের জন্য। কিন্তু দেশটির ৮১০০ কোটি ডলারের অর্থনীতি এখন ঋণখেলাপি। তারা সরকারিভাবে বিদেশি দাতাদের কাছে এ ঘোষণা দিয়েছে। বলে দিয়েছে ঋণ শোধ করতে পারবে না। এর বড় কারণ চীন। দেশটির কাছ থেকে বিশাল সব অবকাঠামো প্রকল্পে ঋণ নিয়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারি দেশটির আয় ও বৈদেশিক রিজার্ভ কমিয়ে দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এই সমস্যা আরও প্রকট করেছে ২০১৯ সালে আয় কর্তন। ২০২১ সালে রাসায়নিক সারের ওপর নিষেধাজ্ঞা বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

সবকিছু মিলে দেশটিতে খাদ্যের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। নেই জ্বালানি। নেই বিদ্যুৎ, ওষুধ সামগ্রী। রুপির মান পড়ে গেছে অস্বাভাবিকভাবে। ফলে মানুষ উপায়হীন হয়ে পড়েছেন। তারা দলমতনির্বিশেষে রাস্তায় নেমে পড়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে বিক্ষোভ করছিলেন। কিন্তু সোমবার আকস্মিকভাবে সরকার সমর্থকরা তাদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে ভয়াবহ সহিংসতা দেখা দেয়। সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষও হয়ে ওঠেন সহিংস। তাদের ক্ষোভ পড়ে প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও সরকারদলীয় এমপিদের ওপর। তাদের বাড়িঘর, বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালাতে থাকে। আগুন ধরিয়ে দেয়। ফলে শ্রীলঙ্কা এক রণক্ষেত্রে রূপ নেয়। এমপি, মন্ত্রীরা আড়ালে চলে যান। তারপরও তাদের কেউ কেউ বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালিয়েছেন। পরে নিজেই একজন এমপি আত্মহত্যা করেছেন বলে মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে। পরিস্থিতি এমন যে পুরো শ্রীলঙ্কা জ্বলছিল। এ অবস্থায় মিডিয়া বিষয়ক সদ্য বিদায়ী মন্ত্রী নালাকা গোদাহেওয়া বলেছেন, মোটেও নিরাপদ নয়। বিশেষ করে সরদার দলীয় রাজনীতিকরা তো নিরাপদ ননই। অন্যদের মতো তার বাড়িও পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

কলম্বো থেকে বিবিসি’র সাংবাদিক আনবারাসান ইথিরাজন লিখেছেন, তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধে বিজয়ের জন্য এক সময় সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলিজরা মাহিন্দ রাজাপাকসেকে বীর হিসেবে সম্মান করতেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তিনি ভিলেনে পরিণত হয়েছেন। সরকার বিরোধী বিক্ষোভকারীদের টার্গেট করার জন্য বহু মানুষ তার সমর্থকদের দায়ী করেছেন। এই হামলার কারণেই শ্রীলঙ্কার সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সব সময় রাজাপাকসেরা একত্রিত থাকেন। কিন্তু এবারই প্রকাশ্যে তাদের মধ্যে ফারাক দেখা গেছে। তা প্রকাশ হয়ে পড়ে ছোট ভাই ও প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে যখন মাহিন্দ রাজাপাকসেকে পদত্যাগ করতে বলেন। শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে বছরের পর বছর আধিপত্য বিস্তার করে আছে এই পরিবারটি। তারা উদ্ভূত সংকট কীভাবে সমাধান করেন, তা একটি উন্মুক্ত প্রশ্ন এখন।

Facebook Comments Box
advertisement

Posted ০২:৩১ | বৃহস্পতিবার, ১২ মে ২০২২

Swadhindesh -স্বাধীনদেশ |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

advertisement
advertisement
advertisement
Advisory Editor
Professor Abdul Quadir Saleh
Editor
Advocate Md Obaydul Kabir
যোগাযোগ

Bangladesh : Moghbazar, Ramna, Dhaka -1217

ফোন : Europe Office: 560 Coventry Road, Small Heath, Birmingham, B10 0UN,

E-mail: news@swadhindesh.com, swadhindesh24@gmail.com